প্রিমিয়ামের হিসাবে ৭০ কোটি টাকার গড়মিল, ৫ কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ আইডিআরএ’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতের ৫টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের হিসাবে ৭০ কোটি টাকার গড়মিল পেয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন এবং ইউনিফায়েড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম (ইউএমপি)’র তথ্যে সঙ্গে তুলনা করে প্রিমিয়াম আয়ের এই গড়মিল পাওয়া গেছে।

এরইমধ্যে গড়মিল হিসাবের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে বীমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। চিঠির জবাব দিতে কোম্পানিগুলোকে ৫ কর্ম দিবস সময় বেধে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গড়মিল হিসাব দেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি গড়মিল পাওয়া গেছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম আয়ের হিসাবে।

আইডিআরএ বলছে, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম আয় ৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ৬৯৭ টাকা। অথচ ইউএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম (নিট প্রিমিয়াম আয়+পিএসবি) ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৯ টাকা।

এই হিসাবে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে ৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৬২ টাকার গ্রস প্রিমিয়াম আয় কম দেখানো হয়েছে, যা কোম্পানিটির দেখানো মোট প্রিমিয়ামের ৭২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর সরকারি সম্পত্তির বীমার অংশ ছিল ৯ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ২৪১ টাকা।

হিসাবের এই গড়মিলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি ১৯ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার ১৪৮ টাকা কম দেখিয়েছে, যা কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়ামের প্রায় ২৯ শতাংশ। ।

ইউএমপির তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম (নিট প্রিমিয়াম আয়+পিএসবি) ৮৭ কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার ৩৫৬ টাকা। তবে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে গ্রস প্রিমিয়াম আয় দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪১ হাজার ২০৮ টাকা।

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের হিসাবে এই গড়মিল হয়েছে ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫০১ টাকা।

কোম্পানিটির ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে গ্রস প্রিমিয়াম আয় দেখানো হয়েছে ৫৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৬ টাকা। অথচ ইউএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম (নিট প্রিমিয়াম আয়+পিএসবি) ৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ২৮৭ টাকা।

এই হিসাবে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫০১ টাকার গ্রস প্রিমিয়াম আয় কম দেখানো হয়েছে, যা কোম্পানিটির দেখানো মোট প্রিমিয়ামের ১১ শতাংশ।

ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে গ্রস প্রিমিয়াম আয় দেখানো হয়েছে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৯ টাকা। অথচ ইউএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম (নিট প্রিমিয়াম আয়+পিএসবি) ৫৯ কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ টাকা।

এই হিসাবে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ৫ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ১৭৮ টাকার গ্রস প্রিমিয়াম আয় কম দেখানো হয়েছে, যা কোম্পানিটির দেখানো মোট প্রিমিয়ামের ১১ শতাংশ।

অপরদিকে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে গ্রস প্রিমিয়াম আয় দেখানো হয়েছে ৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৫শ’ টাকা। অথচ ইউএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম (নিট প্রিমিয়াম আয়+পিএসবি) ৬১ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার ৮৩৩ টাকা।

এই হিসাবে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩৩৩ টাকার গ্রস প্রিমিয়াম আয় কম দেখানো হয়েছে, যা কোম্পানিটির দেখানো মোট প্রিমিয়ামের প্রায় ৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মো. ইকবাল মাহমুদ বলেন, ৩২ বছর ধরে আমি কোম্পানিতে আছি। আমাদের প্রিমিয়াম আয় কখন-ই ৫৬ কোটি টাকার বেশি হয়নি। অথচ আইডিআরএ থেকে বলা হচ্ছে- আমাদের প্রিমিয়াম আয় ৮৫ কোটি টাকা। এখানে ৩৫ কোটি টাকার বেশি হিসাবের গড়মিল। যা কখনই বাস্তব সম্মত নয়।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রিমিয়াম আয়ের হিসাবে ৪৯ থেকে ৮৫ কোটি টাকা হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ একটি ভুল তথ্য। লাখ বা কোটি টাকার গড়মিল হলেও সেটা ধরে নেয়া যেতো। তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রিমিয়াম আয়ের এই হিসাবে ডাবল এন্ট্রি রয়েছে। তবে বিষয়টি আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, উন্নত গ্রাহকসেবা, ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনায়ন, এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম বা ইউএমপি চালু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ইউএমপি বাস্তবায়নে বীমা কোম্পানিগুলোকে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেয় কর্তৃপক্ষ।