হোমল্যান্ড লাইফের ১০৪ কোটি টাকার দুর্নীতি: আইডিআরএ তথ্য না দেয়ায় বাধাগ্রস্ত দুদকের তদন্ত

নিজম্ব প্রতিবেদক: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে তথ্য চেয়ে তা না পাওয়ায় হোমল্যান্ড লাইফের ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন মন্তব্য করে পুনরায় তথ্য চেয়ে আইডিআরএ’কে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । গত ২৯ জানুয়ারি আইডিআরএ’কে এ চিঠি পাঠানো হয়।

সূত্র মতে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ না করে গ্রাহকের জমাকৃত ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের স্বার্থে তথ্য চেয়ে আইডিআরএ’কে চিঠি দেয় দুদক। এই চিঠি দেয়া হয় গত বছর ১৫ নভেম্বর। চিঠিতে তথ্য প্রেরণের জন্য ৭ দিন সময় দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, অনুসন্ধান কার্যক্রমের সময়সীমা উচ্চ আদালত থেকে নির্ধারিত বিধায় বিষয়টি জরুরি বিবেচনায় নিয়ে তথ্য প্রেরণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাগিদ দেয়া হয়। তবে ওই চিঠির কোন জবাব দেয়নি আইডিআরএ।

দুদকের ওই চিঠিতে, দু’ধরণের তথ্য চাওয়া হয়।

এর মধ্যে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত অর্থ ও সম্পত্তি আত্মসাৎ এবং অন্যান্য কোন দুর্নীতি অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে কিনা এবং যদি হয়ে থাকে সে বিষয়ে কি আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণক সংস্থা আইডিআরএ’ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।

অপর তথ্যের মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ থেকে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোন পরিদর্শন বা অডিট হয়ে থাকলে তার বিস্তারিত প্রতিবেদন।

উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা যেভাবে লুট হয়েছে হোমল্যান্ড লাইফে’ শিরোনামে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। পরবর্তীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোতেও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে কোম্পানিটির অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রাহিমা আক্তার নামে হোমল্যান্ড লাইফের একজন গ্রাহক গত ৫ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বীমা গ্রাহকদের ১০৪ কোটি টাকা লুটের ঘটনায় বিচারিক তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

পরবর্তীতে গত ২৯ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালত শুনানি শেষে হোমল্যান্ড লাইফের ১০৪ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৮ টাকা লুটের অভিযোগ তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশ দেন।

এই প্রেক্ষিতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে গ্রাহকদের জমা করা ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

পরে হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যানসহ ৫ জন পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেটের বৈধতা নেই মর্মে সংবাদ প্রকাশ করেছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।  গত ১৯ নভেম্বর ‘সার্টিফিকেট হারাবে তা আগেই জানতেন সাবেক চেয়ারম্যান সালেহ হোসেন: ব্যাংকে বন্ধক রাখা শেয়ার হারিয়ে গেছে দাবি করে হোমল্যান্ড লাইফের পর্ষদে ৫ পরিচালক’ এই শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সংবাদে বলা হয়, ব্যাংকে বন্ধক রাখা ৫০ হাজার শেয়ারের মূল সার্টিফিকেট ’হারিয়েছে’ দাবি করে হোমল্যান্ড লাইফের ৫ পরিচালকের নামে ইস্যু করা হয় ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট।  অপরদিকে এসব শেয়ার সার্টিফিকেট আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী এনাম উদ্দীন আহমেদ।

এর প্রেক্ষিতে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক দাবি করে, যেসব শেয়ারের ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে তা ২০০৫ সাল থেকেই ব্যাংকটির কাছে বন্ধক আছে। তাই হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালনা পর্ষদে তাদের অন্তভুক্ত করতে হবে। সেই সাথে বিগত বছরগুলোর লভ্যাংশও তাদেরকে পরিশোধ করতে হবে। গত বছরের ৫ অক্টোবর হোমল্যান্ড লাইফকে চিঠি দিয়ে এসব দাবি করে ব্যাংকটি।

এ বিষয়ে দুদক উপ-পরিচালক (অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা) মো. ইয়াছির আরাফাত বলেন, হোমল্যান্ড লাইফের অর্থ আত্মাসাতের বিষয়ে আইডিআরএ কোন তদন্ত করেছে কিনা এবং তদন্তে কোন অনিয়ম পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের দু’দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোন জবাব দেয়নি।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এ বিষয়ে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের যেকোন চিঠি আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি। সংস্থাটি থেকে প্রতিমাসে অনেক চিঠি আসে আমাদের কাছে এবং আমরা সেগুলোর ফিডব্যাক যথাসময়ে দেয়ার চেষ্টা করি। তবে হোমল্যান্ড ইস্যুতে দেয়া চিঠির বিষয়টি আমার নজরে আসেনি; আমি বিষয়টি দেখব।