নিয়ম বহির্ভূত আর্থিক সুবিধা বন্ধ করায় চীফ অপারেটিং অফিসারের ওপর চড়াও হলেন সোনালী লাইফের মাঠকর্মীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আইডিআরএ’র নির্ধারিত কমিশনের বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং উন্নয়ন কর্মীদের দেয়া নিয়ম বহির্ভূত আর্থিক সুবিধা বন্ধ করেছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান প্রশাসক। গ্রাহক স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় গত ২ জুলাই অভ্যন্তরীণ এক অফিস আদেশ জারি করে কর্মীদের দেয়া এই বিশেষ সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় গতকাল রোববার (৭ জুলাই) কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান-অবরোধ করে এই বিশেষ সুবিধা পুনর্বহালের দাবি জানায় সোনালী লাইফের মাঠকর্মীরা। এ সময় তারা কোম্পানির চীফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) অজিত চন্দ্র আইচের ওপর চড়াও হন এবং তাকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন।
এই প্রেক্ষিতে অজিত চন্দ্র আইচ সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ৩২৫) করেছেন। জিডিতে অজিত চন্দ্র আইচকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে সোনালী লাইফের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার রাসেল খন্দকার ও রেজাউল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে বিবাদী করা হয়।
এ বিষয়ে অজিত চন্দ্র আইচ বলেন, আমি এক সপ্তাহের ছুটি শেষে গতকাল অফিসে ছিলাম। তবে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অফিস থেকে যখন বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন কোম্পানির কয়েকজন ব্রাঞ্চ ইনচার্জসহ ২০/২৫ জন উন্নয়ন কর্মী আমার সাথে দেখা করেন। এসময় তারা আগের মতো কোম্পানির সুযোগ-সুবিধা বলবত রাখার দাবি করেন। একইসঙ্গে তারা আমাকে অফিস করতে বারণ করেন এবং অফিস থেকে বের হতে বলেন।
অজিত চন্দ্র আইচ বলেন, উন্নয়ন কর্মকর্তা-কর্মীদের দাবির বিষয়টি আমি কোম্পানির বর্তমান প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি (প্রশাসক) নিয়মের মধ্যে থেকে যা করা সম্ভব তা করবেন বলে জানিয়েছেন। পরে আমি বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে অফিস থেকে বের হলে পথের মধ্যে কোম্পানির কয়েকজন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ ৫/৬ জন উন্নয়ন কর্মী আমাকে অফিসে যেতে দিবে না বলে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করে।
সোনালী লাইফের এই সিওও বলেন, গতকাল এই ঘটনার পরই আমি প্রশাসক মহোদয়কে বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অন্তত এক মাসের ছুটি নিয়েছি। তবে এই সময়ে প্রশাসক ও উপদেষ্টার সাথে আমার প্রয়োজনীয় যোগাযোগ থাকবে। বর্তমানে সোনালী লাইফের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তায় ২০/২৫ জন আনসার সদস্য (এপিবিএন) অস্ত্রসহ নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মাঠকর্মীদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান করে একাধিক অফিস সার্কুলার জারি করে সোনালী লাইফের সাসপেন্ডেড পর্ষদ। এসব সার্কুলারে স্বাক্ষর করেন কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী রফিকুল ইসলাম। সেলস পলিসির নামে এসব আর্থিক সুবিধা কর্মীদের দেয়া হবে বলে সার্কুলারগুলোতে উল্লেখ করা হয়।
সেলস পলিসির নামে মোট ৭টি সার্কুলারে এফএ, ইউএম, বিএম এবং এক্সিকিউটিভ বেনিফিট নামে বিশেষ এসব আর্থিক সুবিধা দেয়ার ঘোষণা করা হয়। এসব সুবিধার মধ্যে ছিল আইডিআরএ’র নির্ধারিত কমিশনের বাইরে কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল এসোসিয়েটরা ২০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম আয় করলে অ্যালাওয়ান্স হিসেবে পাবেন অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা। আবার ইউনিট ম্যানেজাররা ১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করলে পাবেন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। আর ব্রাঞ্চ ম্যানেজাররা মাসে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম আয়ে এলাওঅ্যান্স পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
এসব বিশেষ আর্থিক সুবিধা বন্ধ করতে গত ২ জুলাই একটি অফিস আদেশ জারি করেন আইডিআরএ নিযুক্ত সোনালী লাইফের প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌস।
অফিস আদেশে বলা হয়, যেহেতু কমিশন ও অন্যান্য পারিতোষিক সংক্রান্ত বীমা আইন ২০১০ এর সকল ধারা, সংশ্লিষ্ট বিধিমালা, প্রবিধিসমূহ ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলারসহ বিধি-বিধান মান্য করার মধ্যেই সকলের মঙ্গল নিহীত। সেহেতু বীমা আইন ২০১০, সংশ্লিষ্ট বিধিমালা, প্রবিধিসমূহ ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার এর সাথে সাংঘর্ষিক সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত পলিসিসমূহ সহ সকল সেলস পলিসি বাতিল করা হলো।
অফিস আদেশটি ১ মার্চ ২০২৪ তারিখ থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে আইডিআরএ’র নির্ধারিত কমিশন সিডিউল এবং সার্কুলারসহ সোনালী লাইফের একচ্যুয়ারি নির্ধারিত কমিশন ও অন্যান্য কমপেনসেশন যথারিতী প্রদান করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রশাসকের অফিস আদেশে।
সোনালী লাইফের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার (৭ জুলাই) বিশেষ আর্থিক সুবিধা বন্ধ করে দেয়ায় এক্সিকিউটিভ এবং মাঠকর্মীরা বীমা কোম্পানিটির সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগকৃত চীফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) অজিত চন্দ্র আইচের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
তবে এই বিষয়ে সোনালী লাইফের প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌসের মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।