হোমল্যান্ড লাইফে গ্রাহকদের ১০৪ কোটি টাকা লুটের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে হাইকোর্টের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহকদের ১০৪ কোটি টাকা লুটের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রোববার (২৮ জুলাই) এ আদেশ দেন।
মামলাটি শুনানির জন্য আজ রোববার আদালতে উত্থাপিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে দেয়া আদেশের আলোকে দুদকের নেয়া পদক্ষেপের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন (কমপ্লায়েজ) দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আনা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া আদেশের আলোকে অভিযোগ অনুসন্ধানে মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) বরাবর প্রেরণে কমিশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সে আলোকে দুদকের নিয়োগকরা অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. ইয়াছির আরাফাত অনুসন্ধান শুরু করেন। এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন আজ দাখিল করা হয়েছে।
রিটের পক্ষে এডভোকেট আক্তার রসুল মুরাদ সাংবাদিকদের জানান, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ১০৪ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৮ টাকা লুটের অভিযোগ তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির ১৪ গ্রাহক একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছর ২৯ মার্চ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর চেয়ারম্যান ও দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্ত বিষয়ে নেয়া কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন (কমপ্লায়েজ) দাখিলেও নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তদন্তের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুলও জারি করেছেন আদালত। একইসাথে দুদক বরাবর হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি আবেদন পজিটিভলি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আদালত।
এডভোকেট আক্তার রসুল মুরাদ বলেন, আজ দুদকের পক্ষে কমপ্লায়েজ দাখিল করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র, স্বাক্ষীদের বক্তব্য নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
এই আইনজীবী আরো জানান, উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকদের টাকা লুটের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন, যদি তদন্ত শেষ না হয় তার কারণসহ অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলে আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির ১৪ গ্রাহকের পক্ষে রহিমা আক্তার রিটটি দায়ের করেন। রিটে অর্থ সচিব, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির ১৪ পরিচালককে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পরিচালকদের প্রতারণার খপ্পরে হোমল্যান্ড লাইফ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাত নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই সব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সঙ্গে ছিলেন এডাভোকেট আক্তার রসুল মুরাদ, আব্দুল্লাহিল মারুফ ফাহিম ও দিদারুল আলম।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০৪ কোটি টাকা লুটের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডন প্রবাসী সিলেটের পরিচালকদের একটি গ্রুপে প্রতারণার খপ্পরে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সিলেটেই করত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক। এই গ্রুপটি কোম্পানির তহবিল থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বোর্ড সভার কার্যবিবরণী জালিয়াতি, জমি ক্রয়ের ভুয়া নথি তৈরি, কমিশন ও অন্যান্য খাতে খরচের ভাউচার তৈরি করে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়। নথিপত্রে দেখা গেছে-এই প্রতিষ্ঠানের নামে অস্তিত্ববিহীন জমি কেনা হয়েছে। আবার সেই জমিতে মাটি ভরাট ও কাটা তারের বেড়া তৈরির নামে আরও অর্থ লোপাট করা হয়েছে।