ভুক্তভোগী সকল লাইফ বীমা কোম্পানির মাঠকর্মীদের নামে আন্দোলন

দিনভর অবরুদ্ধ আইডিআরএ, রাত ১টায় সমঝোতা করল সোনালী লাইফের কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ভুক্তভোগী সকল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মাঠকর্মীবৃন্দ’র ব্যানারে অবস্থান ধর্মঘট। এই কর্মসূচি শুরু হয় মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকেই। বেলা আড়াইটায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে আইডিআরএ কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আন্দোলকারীরা। আহত হয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মী।

অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ ৩ সদস্য এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সমঝোতা হয় রাত ১টায়।

আন্দোলনকারীরা নিজেদেরকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও সকল বীমা কোম্পানির মাঠকর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। অথচ ২ শর্তের এই সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৩ কর্মকর্তা।

আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে এতে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও ৩ সদস্য।

স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মঞ্জুর মোর্শেদ, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. রবিউল হাসান (রাসেল) এবং এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর এমদাদুল হক সাহিল।

আইডিআরএ’র পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, সদস্য (প্রশাসন) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, সদস্য (আইন) মো. দলিল উদ্দিন এবং সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান।

সমঝোতার নথিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অদ্য ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে আইডিআরএ’র নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে ঐকমত্য হয়:’

সমঝোতার বিষয়গুলো হলো- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও উন্নয়ন কর্মীরা পূর্বের মতো তাদের সুযোগ-সুবিধা বহালের বিষয়ে আগামীকাল আইডিআরএ থেকে প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হবে। এবং যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হবে।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসক প্রত্যাহার ও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহালের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি সভা করার জন্য আগামীকাল অনুরোধ করে কর্তৃপক্ষ হতে পত্র প্রেরণ করা হবে।

যেভাবে শুরু হয় আন্দোলন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইডিআরএ কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েক দিন ধরেই হট্টগোল করে আসছিল সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাদের পক্ষ থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের পদত্যাগের দাবি করা হয়।

তবে সোমবার (১৯ আগস্ট) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আবদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে প্রশাসক বাতিলের ইতিবাচক ইঙ্গিত না পাওয়ার পরই মরিয়া হয়ে ওঠেন সোনালী লাইফের কর্মীরা।

এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকেই তারা ‘ভুক্তভোগী সকল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মাঠকর্মীবৃন্দ’র ব্যানারে আইডিআরএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। আন্দোলনকারীরা ভুক্তভোগী বীমা কোম্পানির নামে এবং বৈষম্য বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।

কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর

অবস্থান ধর্মঘট চলা অবস্থায় বেলা আড়াইটায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে আইডিআরএ কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আন্দোলকারীরা। এসময় তারা কার্যালয়ের গেট ভেঙে ফেলেন। এরপর সংস্থাটির কর্মকর্তা শামসুল আলম ও নিরাপত্তাকর্মী জাহানুর রহমানকে আহত করেন।

চেয়ারম্যানসহ সদস্য ও কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

আন্দোলনকারীরা আইডিআরএ কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের পর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দফতরের সামনে অবস্থান নেয়। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, ৩ সদস্য এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। তাদের কাউকেই অফিস থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর আগমন

রাজধানীর ৩৭/এ দিলকুশাস্থ সাধারণ বীমা ভবনে আইডিআরএ কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের হামলা-ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবনটির নিচ তলা এবং ৯ম তলায় কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে তারা অবস্থান নেন। এসময় সেখানে সমঝোতার জন্য আলোচনাও চলতে থাকে।

আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি

সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের মাঝে আলোচনা শুরু হলেও কোন সমাধান না হওয়ায় সন্ধার পর বাড়তে থাকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে থাকা সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা এবং কর্মীদের দ্রুত আইডিআরএ কার্যালয়ে আসতে বলা হয়। এরপরই সেখানে একের পর এক গাড়ি নিয়ে আসতে থাকেন সোনালী লাইফের কর্মীরা। এদের মধ্যে কোম্পানিটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদস্যদের আগমন

আলোচনায় কোন সমাধান না হওয়ায় এবং পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ায় আশঙ্কায় রাত ১০টার দিকে মতিঝিল থানা থেকে এক প্লাটুন পুলিশ সদস্যও সেখানে অবস্থান নেন। আইডিআরএ চেয়ারম্যানসহ সংস্থাটির সদস্য ও কর্মকর্তারা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা সেখানে অবস্থান করেন। পরে আরো কিছু পুলিস সদস্যও সেখানে আসেন।

সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তার আগমন

দিনভর আলোচনা করেও কোন সমাধান না হওয়ায় রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর আরো সিনিয়র কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের উপস্থিতিতেও চলতে থাকে সমঝোতার আলোচনা। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে রাত ১টার দিকে দুই শর্তে উভয়পক্ষের মাঝে সমঝোতা হয়।

অবশেষে মুক্ত আইডিআরএ চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা

দীর্ঘ আলোচনা ও রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর রাত ১টার দিকে যখন উভয়পক্ষের মাঝে সমঝোতা হয় এরপরই সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় অফিস ছাড়েন আইডিআরএ চেয়ারম্যানসহ সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় সোনালী লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আইডিআরএ কার্যালয় ত্যাগ করেন।