দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিআইএ’র নির্বাচনে উৎসবের আমেজ
নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৪ বছর পর উৎসবের আমেজ ফিরে এসেছে বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’র নির্বাচনে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান সম্পন্ন করেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক ৩৫ প্রার্থী। এর মধ্যে লাইফ বীমার প্রার্থী রয়েছেন ১৪ জন এবং নন-লাইফে ২১ জন। উভয় খাতে ১০ জন করে মোট ২০ জন কার্য নির্বাহী সদস্য নির্বাচন করা হবে।
বিআইএ’র নির্বাচনী আমেজকে স্বাগত জানাচ্ছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ দিন পর এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিআইএ’র নতুন কমিটিতে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি দেশের বীমা খাতের জন্য খুবই ভালো। যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা বিআইএ’র দায়িত্বে আসলে তাদের নতুন চিন্তার সংমিশ্রণ বীমার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট পদ আকড়ে ছিলেন শেখ কবির হোসেন। ৮২ বছর বয়সী শেখ কবির হোসেন শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই। সে হিসেবে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা। এছাড়াও তিনি ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি।
এসব পরিচয়েই তিনি বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদ আকড়ে ছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পলায়ন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ অক্টোবর বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ কবির হোসেন।
বিআইএ’র বর্তমান নির্বাহী কমিটির ২০২৩-২০২৪ মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল। তবে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন পদত্যাগ করায় প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত ২৮ অক্টোবর সংগঠনে ২১৮তম নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এ দায়িত্ব পান।
২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর বিআইএ’র ২০২৫-২০২৬ সালের নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়া হয়। আগামী ২২ জানুয়ারি সদস্য নির্বাচনের পর ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট। এ বছর সংগঠনটির ৮০ জন সদস্যের মধ্যে ৭৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানা গেছে।
এই নির্বাচনের একজন প্রার্থী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আদিবা রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন পর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুনদের বিআইএ’র নির্বাহী সদস্য হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটি অবশ্যই ভালো দিক এবং বীমা খাতের জন্যও ভালো। আমি মনে করি, নতুনরা বিআইএ’র দায়িত্বে আসলে তারা বীমা খাতের উন্নয়নে নতুন নতুন চিন্তার যোগান দিতে পারবে এবং এ খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম শাহীন বলেন, বিআইএ’র নির্বাচনে যে আমেজ তৈরি হয়েছে এটাকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। দীর্ঘ দিন এটা অনুপস্থিত ছিল। ইলেকশন হোক অথবা সিলেকশন -যেটাই হোক এই কমিটিতে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের স্থান দিলে বীমা খাতের জন্য ভালো হবে। আর বীমা খাতের উন্নয়নে যারা অবদান রাখতে পারবে অথবা এমন যোগ্যতা বা কোয়ালিফিকেশন আছে, তাদেরকেই এ কমিটিতে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কাজিম উদ্দিন বলেন, বীমা খাতের উন্নয়নে আইডিআরএ’র সাথে যৌথভাব কাজ করে বিআইএ। বিভিন্ন বিধি-বিধান এবং নীতি নির্ধারণে বিআইএ’র পরামর্শ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে আইডিআরএ। এক্ষেত্রে বিআইএ’র কার্যনির্বাহী কমিটিতে দক্ষ-পেশাদার এবং যোগ্যরা স্থান পেলে বীমা খাতের জন্যই ভালো হবে। আমি মনে করি, এবারের নির্বাচনে বীমা মালিক এবং মুখ্য নির্বাহীদের এই প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটবে।
চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, বীমা খাতের উন্নয়নের স্বার্থে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিআইএ’র নতুন কমিটিতে স্থান দেয়ার জন্য পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহীদের মধ্যে যে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে; এটা খুবই ভালো দিক। আর এ কারণেই এবারের নির্বাচনে একটা আমেজ তৈরি হয়েছে।
আমি মনে করি, যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা বিআইএ’র দায়িত্বে আসলে বীমা খাতের জন্য ভালো হবে। তারা এ খাতে নতুনত্ব আনতে পারবে এবং নতুন চিন্তার সংমিশ্রণে বীমার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে, বলেন এস এম জিয়াউল হক।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জমান বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গড়ে ওঠা নতুন বাংলাদেশের জন্য বিআইএ’র এই নির্বাচন ইতিবাচক। আমরা মনে করি, সব যায়গায় গণতন্ত্রের চর্চা হওয়া উচিত। এই নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাবো।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রত্যাশা- যোগ্যদের নিয়েই গঠিত হবে এবারের কার্যনির্বাহী কমিটি। আমরা মনে করি, বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ হবে একটি গ্রাহকবান্ধব সংগঠন। লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে এসে বীমা খাতের প্রকৃত কল্যাণে কাজ করবে বিআইএ।
২০২৫-২০২৬ সালের নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচনে লাইফ বীমার পরিচালকদের মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন- সন্ধানী লাইফের চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, বেঙ্গল ইসলামি লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান আমিন হেলালী, প্রোগ্রেসিভ লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ, ডেল্টা লাইফের পরিচালক আদিবা রহমান, বেস্ট লাইফের পরিচালক সৈয়দ বদরুল আলম এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফের পরিচালক আরিফ সিকদার।
এ খাতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন- পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী বি এম ইউসুফ আলী, প্রগতি লাইফের মুখ্য নির্বাহী জালালুল আজিম, জেনিথ ইসলামি লাইফের মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান,চার্টার্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী এসএম জিয়াউল হক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী মো. কাজীম উদ্দিন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী মো. গোলাম কিবরিয়া।
নন-লাইফ বীমার পরিচালকদের মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন- অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান কাজী শাখাওয়াত হোসেইন লিন্টু, সিটি ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হোসেইন আখতার, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈয়্যেদ আহমেদ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেইন; প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান কে এম আলমগীর, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ইনভেস্টমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জামাল, বাংলাদেশ ন্যাশনালের পরিচালক তায়েফ বিন ইউসুফ, জনতা ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক বেলাল আহমেদ এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক মোস্তফা কামরুস সোবহান।
এ খাতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন- এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী ইমাম শাহীন, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী ফারজানা চৌধুরী, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী এএনএম ফজলুল করিম মুন্সি, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী ড. এ কে এম সরোয়ার জাহান জামিল, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কাজী মোকাররম দস্তগীর, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী হাসান তারেক, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী এবং স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী মো. আব্দুল মতিন সরকার।