লাইফ বীমায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খসড়া প্রবিধান

কমাচ্ছে প্রতিবেশিরা, বাড়ার প্রস্তাব বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবেশি দেশ ভারত ও পাকিস্তানে লাইফ বীমাখাতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমালেও বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানে সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশের প্রস্তাবিত খসড়া প্রবিধানে ব্যয়ের হার বেশি। জনমতের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ'র ওয়েবসাইটে তুলে দেয়া খসড়া প্রস্তাব তুলনা করে এ তথ্য চিত্র পাওয়া গেছে।

ভারতে ২০১৬ সালের ৯ মে প্রকাশিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিধিমালার তফসিল ১ এর পার্ট বি-তে কোম্পানির বয়স ও পলিসির মেয়াদ অনুসারে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ প্রবিধান অনুসারে, ব্যবসা শুরুর ১০ বছর পূর্ণ করা কোম্পানিগুলো ১০ বছরের বেশি মেয়াদি পলিসির জন্য প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে ব্যয় করতে পারবে ৮০ শতাংশ ও নবায়নে ১৫ শতাংশ। যা আগের প্রবিধানে ছিল প্রথম বর্ষে ৯০ শতাংশ ও নবায়নে ১৫ শতাংশ।  

অন্যদিকে ১০ বছর পূর্ণ হয়নি এমন কোম্পানি ১০ বছর মেয়াদি পলিসির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। নবায়নে ব্যয় করতে পারবে ২০ শতাংশ। যা আগে ছিল যথাক্রমে ৯০ এবং ১৬ শতাংশ।

সূত্রমতে, ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে আনার ধারা কঠোরভাবে নজরদারি করে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাজার বিশ্লেষণ কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা সৃষ্টিতে ব্যয়ের হারের পরিবর্তন আনা হয় দেশটিতে। ফলে ধারাবাহিকভাবেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় হারে পরিবর্তন আনে দেশটি।

পাকিস্তানে ২০১৩ সালের প্রবিধান অনুসারে, প্রথম বর্ষে ছিল ৯০ শতাংশ ও নবায়নে ১৫ শতাংশ। এই হার নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সাল ও পরবর্তী বছরগুলোর জন্য। যা ২০১৪ সালের জন্য ছিল প্রথম বর্ষে ৯৬ শতাংশ ও নবায়নে ১৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ১০২ শতাংশ ও নবায়নে ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি বছরই ব্যয়ের হার কমিয়ে আনছে পাকিস্তান।

অথচ ভারত ও পাকিস্তানের বর্তমান প্রবিধানের সাথে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত প্রবিধানের তুলনা করে দেখা যাচ্ছে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আর বাংলাদেশে বর্তমানে কার্যকর ব্যয় হারের (১৯৫৮ সালের বিধিমালা) তুলনায় ১০ বছর বয়সী কোম্পানির জন্য প্রথম বর্ষে ৩ শতাংশ ও নবায়নে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। ৫  বয়সী কোম্পানির জন্য ১ম বর্ষে ১.৫ শতাংশ নবায়নে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 

প্রস্তাবনা অনুসারে ১০ বছর পূর্ণ হওয়া কোম্পানিগুলো প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৩ শতাংশ আর নবায়নের ২০ শতাংশ, ৫ বছর বয়সী কোম্পানিগুলোর জন্য ৯৮ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ এবং ৬ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবসা চালানো কোম্পানিগুলোর জন্য ৯৭ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়।

১৯৫৮ সালের সর্বশেষ বিধিমালায় ১০ বছর পূর্ণ করা কোম্পানির জন্য প্রথম বর্ষে ছিল ৯০ শতাংশ ও নবায়নে ছিল ১৫ শতাংশ। ৫ বছর বয়সী কোম্পানির জন্য ছিল ১ম বর্ষে ৯৬.৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী কোম্পানির জন্য ছিল প্রথম বর্ষে ৯৫ শতাংশ ও নবায়নে ২০ শতাংশ।

ব্যবস্থাপনা ব্যয়র এমন প্রস্তাবের বিষয়ে বীমা বিশ্লেষকরা অভিমত, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদে ব্যয় কমিয়ে প্রবিধান জারি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কঠোর ভূমিকা পালন করছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।  লাইফ বীমা খাতের উন্নয়নে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কঠোর হওয়ারও পরামর্শ দেন তারা।

তাদের মতে, ১৯৫৮ সালে যে প্রবিধান করা হয়েছিল সে সময়ে লাইফ বীমাখাতে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৫ থেকে ১০ কোটি। যা বর্তমানে হাজার কোটির কাছাকাছি। এমন অবস্থায় ব্যয় হারের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অস্বাভাবিক। বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়। তাই নবায়নে ১ শতাংশ বেড়ে গেলে গ্রাহককে গুণতে হবে ৫০ কোটি টাকা। সেখানে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা লাইফ বীমাখাতের জন্য মোটেই সুফল বয়ে আনবে না।

বাংলাদেশে বীমা আইন-২০১০ পাস হওয়ার পর এই প্রথম লাইফ বীমায় ব্যবস্থাপনা ব্যয় হার নির্ধারণে প্রবিধানমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।