আইডিআরএ’র প্রতিবেদন

বীমা খাতে ৯৮২৮ কোটি টাকার দাবি পরিশোধ, বকেয়া ৭০১০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত মোট বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৮৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার দাবি পরিশোধ করা হয়েছে, যা পুঞ্জিভূত মোট বীমা দাবির ৫৮.৩৭ শতাংশ।

এই হিসাবে ২০২৫ সালের শুরুতে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতে পুঞ্জীভূত বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১০ কোটি টাকা।

২০২৪ সালে লাইফ বীমা খাতে ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। দাবি পরিশোধের এই হার ৬৬.২৬ শতাংশ। আর নন-লাইফ বীমা খাতে পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার বীমা দাবি, যা এ খাতে পুঞ্জীভূত বকেয়া দাবির ৩১.৯৬ শতাংশ।

বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ সম্প্রতি এই অনিরীক্ষিত হিসাব প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গত ১৫ মে লাইফ বীমা খাতের এবং ৮ এপ্রিল নন-লাইফের দাবি পরিশোধের তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে লাইফ বীমা খাতের একটি কোম্পানি বছরের শেষে নতুন ব্যবসা শুরু করায় কোম্পানিটির দাবি পরিশোধের কোন তথ্য নেই এই হিসাবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া বীমা দাবির এই হার অনেক বেশি। আর এ কারণেই মানুষের আস্থা সংকটে রয়েছে দেশের বীমা খাত। বীমার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে হলে বীমা দাবির পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো জোরালো ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। একইসঙ্গে খাতটির প্রতি সরকারের সুদৃষ্টিও প্রয়োজন।

আইডিআরএ বলছে, যেসব বীমা কোম্পানির দাবি নিষ্পত্তির হার খুবই কম সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালকদের সাথে গভার্ন্যান্স রিভিউ সভা করে দ্রুত দাবি পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাদেরকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানাতে বলা হয়েছে।

আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৩৪টি লাইফ বীমা কোম্পানির মোট বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর বকেয়া রয়েছে ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬ লাখ টাকার বীমা দাবি।

এই হিসাবে ২০২৪ সালে লাইফ বীমা খাতে দাবি পরিশোধের হার ৬৬.২৬ শতাংশ।

লাইফ বীমায় সবচেয়ে বেশি দাবি পরিশোধ করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশ, ২ হাজার ৮৯৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তবে ৩২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করেও শতাংশের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে আলফা ইসলামী লাইফ, কোম্পানিটি শতভাগ দাবি পরিশোধ দেখিয়েছে। ন্যাশনাল লাইফ ১ হাজার ১৮৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ও ডেল্টা লাইফ ৮৮৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করেছে।

এ ছাড়াও জীবন বীমা করপোরেশন ৫৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, গার্ডিয়ান লাইফ ৪৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, পপুলার লাইফ ৩৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফ ৩৮৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, সোনালী লাইফ ৩৭৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, মেঘনা লাইফ ৩৬০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ২৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।

২০২৪ সাল শেষে লাইফ বীমা খাতে সবচেয়ে বেশি বকেয়া দাবি রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ২ হাজার ৭৫২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে সানফ্লাওয়ার লাইফে ৫৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ ছাড়াও পদ্মা ইসলামী লাইফে ২৪৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, প্রোগ্রেসিফ লাইফে ১৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং ডেল্টা লাইফে ১৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

অপরদিকে নন-লাইফ বীমা খাতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত বকেয়া দাবির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে গেলো বছর ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। যা এ খাতে উত্থাপিত মোট বকেয়া বীমা দাবির ৩১.৯৬ শতাংশ।

এই হিসাবে নন-লাইফ বীমা খাতে বকেয়া দাবির পরিমাণ ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

২০২৪ সালে নন-লাইফ বীমা খাতে সবচেয়ে বড় অংকের বীমা দাবি পরিশোধ করেছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ১৫৭ কোটি ২ লাখ টাকা। এ ছাড়াও গ্রিণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ১৩৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ১২২ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন ১৯৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করেছে। এই ৪টি কোম্পানি মূলত একশ’ কোটি টাকার ওপর দাবি পরিশোধ করেছে।

নন-লাইফ বীমা খাতে ২০২৪ সাল শেষে সর্বোচ্চ বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে ২৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা যা মোট দাবির ৬৫ শতাংশ। শতাংশের হিসাবে এ খাতে সর্বোচ্চ বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে সিকদার ইন্স্যুরেন্সে ৯৪.৮৩ শতাংশ। কোম্পানিটির মোট অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

অপরদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির পরিমাণ ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা, যা নন-লাইফ বীমা খাতে উত্থাপিত মোট বকেয়া দাবির প্রায় ৫৪ শতাংশ।

এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে ৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে ৯৮ কোটি ৯ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সে ৮৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সে ২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে ৬১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, পিপলস ইন্স্যুরেন্সে ৭৪ কোটি ১২ লাখ টাকা, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে ৭১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।