ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়বে না এজেন্টদের
আবদুর রহমান: ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা প্রবিধানমালা, ২০১৭ এর খসড়া অনুযায়ী লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য আরও বেশি খরচ করার সুযোগ সৃষ্টি হলেও আয় বাড়বে না এজেন্টদের। কেননা বীমা আইনে এজেন্ট কমিশন নির্ধারণ করে দেয়া আছে। ফলে বেশি কমিশন পাওয়ার সুযোগ নেই এজেন্টদের। তাই নবায়ন সংগ্রহে ব্যয় বাড়ানো হলেও তা নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বাড়াতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বীমা আইন ২০১০ এ ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে ৩৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে ২য় বর্ষে ১০ শতাংশ ও ৩য় বর্ষ থেকে পরবর্তী বছর ৫ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ করে দেয়া আছে।
ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ প্রস্তাবে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে দেড় শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ শতাংশ। অথচ এতে এজেন্টদের আয় বাড়ানোর কোন উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে ব্যয় বাড়ানো হলেও আইনে কমিশন হারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে ব্যয় বাড়লেও এজেন্টদের আয় বাড়বে না। তাই বাড়তি এ ব্যয় অফিস পরিচালনা ও অন্যন্যা খাতেই ব্যয় হবে। এতে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বাড়াতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করেন তারা।
বর্তমানে বীমা আইন ২০১০ এর ৫৮ ধারায় নির্ধারিত হারে কমিশন প্রদান করা হয় এজেন্টদের। এই ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, "কোন বীমা এজেন্টকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর ক্ষেত্রে, তাহার সংগৃহীত কোন পলিসির বা পলিসিসমূহের ক্ষেত্রে, নিম্নবর্ণিত সীমার অধিক কমিশন বা অন্য কোন প্রকার পারিশ্রমিক পরিশোধ করা বা পরিশোধ করিবার উদ্দেশ্যে কোন চুক্তি করা যাইবে না, যথা: (ক) প্রথম বৎসরের প্রিমিয়ামের শতকরা ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) ভাগ; (খ) দ্বিতীয় বৎসরের নবায়ন প্রিমিয়ামের শতকরা ১০ (দশ) ভাগ; এবং (গ) পরবর্তী বৎসরসমূহে নবায়ন প্রিমিয়ামের শতকরা ৫ (পাঁচ) ভাগ:
তবে শর্ত থাকে যে, লাইফ ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত বীমাকারীগণ তাহাদের ব্যবসায়ের প্রথম ১০ (দশ) বৎসর তাহাদের বীমা এজেন্টকে তাহাদের মাধ্যমে সংগৃহীত পলিসি বা পলিসিসমূহের প্রথম বৎসরের প্রিমিয়ামের শতকরা ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) ভাগ, দ্বিতীয় বৎসরের নবায়ন প্রিমিয়ামের শতকরা ১২ (বার) ভাগ এবং পরবর্তী বৎসরসমূহের নায়ন প্রিমিয়ামের শতকরা ৬ (ছয়) ভাগ কমিশন প্রদান করিতে পারিবে।"
প্রস্তাবিত বীমাকারীর (লাইফ) ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা প্রবিধানমালা, ২০১৭ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর প্রথম ৫ বছর বীমা কোম্পানিগুলো প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯৮ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৭ শতাংশ ও নবায়নের ২২ শতাংশ খরচের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর ব্যবসা শুরুর দশম বছর পূর্ণ করা ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম সংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে ৯৩ শতাংশ ও ২য় বর্ষ থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে।
এর আগে ১৯৫৮'র বিধিতে এই ব্যয়ের সীমা ছিল, কোম্পানি ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকে তৃতীয় বছর প্রথম বর্ষে ৯৭.৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২২.৫ শতাংশ এবং চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ বছরে প্রথম বর্ষে ৯৬.৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ। ৭ম থেকে ১০ম বছরে প্রথম বর্ষে ৯৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ খরচের অনুমোদন রয়েছে।
আর ব্যবসা শুরুর দশম বছর পরে কোম্পানির ব্যবসা বলবৎ থাকলে ১০ কোটি টাকার বেশি প্রিমিয়াম সংগ্রকারী কোম্পানিগুলো ১ম বর্ষে ৯০ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চীফ কনসালটেন্ট কাজী মোরতুজা আলী বলেন, ব্যয়ের সীমা বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে না, যদি না ব্যবসা বড়ানো হয়। ফিক্সড কস্ট বেড়েছে বলে ব্যয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। আসলে ব্যয়সীমা নয়, আমাদের প্রয়োজন ব্যবসা বাড়ানো। ব্যবসা বাড়লেই ব্যয়ের হার কমে আসবে, আরো বেশি খরচ করতে পারবে।
তিনি বলেন, ব্যবসা কমার একটা কারণ হচ্ছে বর্তমানে এজেন্টের সংখ্যা কমে গেছে। রয়েছে দক্ষতা সম্পন্ন এজেন্টের অভাব। আবার এজেন্ট কমে যাওয়ার একটা কারণ- তাদের কমিশন কম। তাদের কমিশন বাড়ানো প্রয়োজন। লেয়ার সংখ্যা কমানোর মাধ্যমে এজেন্টদের কমিশন বাড়ানো সম্ভব বলেও জানান কাজী মোরতুজা আলী।