প্রবিধানমালা সংশোধনে মতামত আহবান

লাইফ বীমার ব্যয়সীমা ১১ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাইফ বীমা খাতের ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা ১১ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ গ্রাহকের দাবি যথাসময়ে পরিশোধ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এরইমধ্যে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০২০ এর সংশোধনী প্রস্তাবের একটি খসড়া প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।

গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খসড়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত আহবান করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মজিদ।

প্রস্তাবিত সংশোধন অনুসারে, লাইফ বীমা কোম্পানির ব্যবসার সময়কাল বা বয়স যদি ১০ বছর বা তদুর্ধ্ব হয় তাহলে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রথম বর্ষ মোট প্রিমিয়ামের ৮২ শতাংশ খরচ করতে পারবে। তবে বিদ্যমান প্রবিধানমালায় এই খরচের সীমা ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে এই ব্যয়সীমা কমবে ১১ শতাংশ।

এ ছাড়াও নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ১০ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের কোম্পানির জন্য সকল অবস্থায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ব্যয়সীমা প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া প্রজ্ঞাপনে। বিদ্যমান প্রবিধানমালায় এই খরচের সীমা ২০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করা আছে। এক্ষেত্রেও কোম্পানিগুলোর ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমবে।

খসড়া প্রজ্ঞাপনের তথ্য মতে, অ্যানুয়িটি পলিসির ক্ষেত্রে একক প্রিমিয়াম পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম আদায় করা হলে প্রথম বছরে আদায়কৃত প্রিমিয়ামের ৪ শতাংশ খরচ করা যাবে। কিস্তিতে প্রিমিয়াম আদায় করা হলে প্রথম বছরে আদায়কৃত প্রিমিয়ামের ৭ শতাংশ এবং নবায়নের ৪ শতাংশ খরচ করা যাবে। আর উভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বছরে পরিশোধিত মোট অ্যানুয়িটির ১ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা যাবে। তবে একক প্রিমিয়াম পলিসির ক্ষেত্রে খরচ করা যাবে আদায়কৃত প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশ পর্যন্ত।

অপরদিকে পেইড আপ পলিসি’র ক্ষেত্রে মোট বীমা অংকের বাৎসরিক গড়ের (পুনর্বীমা বাদে) ০.০৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। আর গোষ্ঠী বীমা পলিসির ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করা যাবে বৎসরে পরিশোধিত প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশ।

দফা (১), (২) ও (৩) ব্যতীত অন্যান্য সকল পলিসির ক্ষেত্রে লাইফ বীমাকারীর ব্যবসার সময়কাল বা বয়স- ১ থেকে ৫ বছর হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৮৫ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ খরচ করা যাবে। আর ব্যবসার সময়কাল বা বয়স- ৬ থেকে ১০ বছর হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৮৪ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ ব্যয় করা যাবে ব্যবস্থাপনা খাতে।

লাইফ বীমা কোম্পানির ব্যবসার সময়কাল বা বয়স যদি ১০ বছর বা তদুর্ধ্ব হয় তাহলে প্রথম বর্ষ মোট প্রিমিয়ামের প্রথম ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ৮২ শতাংশ খরচ করতে পারবে। আর ১০০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু অনূর্ধ্ব ৫০০ কোটি টাকা হলে ৮১ শতাংশ এবং ৫০০ কোটি টাকার বেশি হলে ৭৬ শতাংশ খরচ করতে পারবে। তবে নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ১০ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের কোম্পানির জন্য সকল অবস্থায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ব্যয়সীমা প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০২০ এ বর্ণিত পরিমাণ অনুযায়ী প্রাপ্ত প্রিমিয়ামের উল্লেখযোগ্য অংশ বীমাকারী কর্তৃক ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে খরচ করার কারণে পলিসি প্রিমিয়ামের সিংহভাগ অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে। এতে বীমাকারী ভবিষ্যতে বীমা পলিসির প্রিমিয়াম হতে বীমা গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা হারাচ্ছে।

অথচ, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের এই হার আমাদের চেয়ে অনেক কম। বীমাকারীর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, বীমা গ্রাহকদের প্রিমিয়াম হতে বীমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধের সক্ষমতা নিশ্চিতকল্পে ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংকোচন করা প্রয়োজন মর্মে কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে বীমাকারীর ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিষয়োক্ত বিধিমালার একটি সংশোধন খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত খসড়া প্রজ্ঞাপন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ, জনসাধারণের সুচিন্তিত মতামত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সফট কপি এবং হার্ডকপি [email protected], [email protected] এই ই-মেইলে পাঠাতে হবে।

এক্ষেত্রে উল্লেখিত দু’টি ই-মেইল ব্যতিত সরাসরি হার্ডকপি গ্রহণযোগ্য নয় এবং বর্ণিত তারিখের মধ্যে ই-মেইল দু’টিতে মতামত না পাওয়া গেলে আপত্তি বা মতামত নাই মর্মে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।