নতুন ১৩ কোম্পানির ৮৮% প্রিমিয়াম তামাদি

আবদুর রহমান: ব্যবসা শুরুর প্রথম দু'বছরে নতুন ১৩ বীমা কোম্পানির ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ ১৯৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে সর্বশেষ হিসাব সমাপনি বছরে নবায়ন সংগ্রহ হয়েছে ২৩ কোটি ৬৯ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ৮৮ শতাংশই তামাদি হয়ে গেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে (আইডিআরএ) দাখিল করা এসব কোম্পানির তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মানসম্মত পলিসি করা না হলে পলিসি তামাদির হার বেড়ে যায়। এতে কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি আরো ভায়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। বড় ধরণের লোকসানে পড়তে পারে বীমা কোম্পানি।

তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে নতুন ১৩টি বীমা কোম্পানি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৮৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ১১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বছরটিতে কোম্পানিগুলোর ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা থেকে ২০১৬ সালে নবায়ন আসে ২৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বছরটিতে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ১৪০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।    

নতুন কোম্পানিগুলোর মধ্যে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহের হার সবচেয়ে বেশি বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল এ ৩ বছরই সবচেয়ে বেশি নবায়ন সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি। ২০১৫ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ হয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বা ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ৪৭ শতাংশ প্রিমিয়াম তামাদি হয়ে যায়।

২০১৪ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল ৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বেস্ট লাইফ। যা ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ নবায়ন সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে বেস্ট লাইফের নবায়ন সংগ্রহের পরিমাণ ৬৫ লাখ টাকা।

নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ৮৩ শতাংশ নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে পারেনি।

এরআগে ২০১৪ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বা ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৫ শতাংশ নবায়ন সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে সোনালী লাইফের নবায়ন সংগ্রহের পরিমাণ ৬ লাখ টাকা।

তবে শতাংশের ভিত্তিতে নবায়ন সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে যার মধ্যে নবায়ন সংগ্রহ হয় ২ কোটি ২ লাখ টাকা বা ৪৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা থেকে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ হয় ৮১ লাখ টাকা বা ২৯ শতাংশ।

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ২০১৫ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ৩ কোটি ২ লাখ টাকা বা ২০ শতাংশ। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ১১ শতাংশ।  

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। যা থেকে ২০১৬ সালে নবায়ন আসে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ১৪ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যা থেকে ২০১৫ সালে নবায়ন আসে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ৭ শতাংশ।

যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা ৩৩ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে কোম্পানিটির নবায়ন সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকা বা ১০ শতাংশ।

মার্কেন্টাইল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। যা থেকে ২০১৬ সালে নবায়ন আসে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা ২৩ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে কোম্পানিটির নবায়ন সংগ্রহের পরিমাণ ৫৫ লাখ টাকা বা ১৩ শতাংশ।

ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ৯ কোটি ২ লাখ টাকা ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। যার মধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন আসে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা ১৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৩কোটি ৭ লাখ টাকা। পরবর্তী বছরে যা থেকে নবায়ন আসে ৭৩ লাখ টাকা, ২৪ শতাংশ।

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা ১১ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে কোম্পানিটির নবায়ন সংগ্রহের পরিমাণ ৪৪ লাখ টাকা, ১৬ শতাংশ।

এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২০১৬ সালে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৮৬ লাখ টাকা বা ১৭ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ৬৯ লাখ টাকা, ৯ শতাংশ।

প্রটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২০১৬ সালে ৭৫ লাখ টাকা নবায়ন সংগ্রহ করে। যা ১৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ৩৪ লাখ টাকা, যা ৬ শতাংশ।

আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। যা থেকে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ৫৬ লাখ টাকা বা ১৭ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ৭ লাখ টাকা, ৪ শতাংশ।

স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ সালে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। যা থেকে ২০১৬ সালে নবায়ন সংগ্রহ করে ২৬ লাখ টাকা, যা ১৫ শতাংশ। এরআগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৯২ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২০১৫ সালে নবায়ন আসে ৩ লাখ টাকা, ৩ শতাংশ।