রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স থেকে ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন তারেক মাসুদের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকা দিবে বেসরকারি ননলাইফ বীমা কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, বাসচালক দেবেন ৩০ লাখ এবং বাকি ৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা তিন বাস মালিককে সমান ভাগ করে দিতে হবে। তিন মাসের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করার এ নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

জানা গেছে, ঘাতক বাস চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স এর থার্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স করা ছিল রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে। এই টাকার মধ্যে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে দিতে হবে মাত্র ৮০ হাজার টাকা। যার মধ্যে মাত্র ২০ হাজার টাকা জীবনের ক্ষতিপূরণ আর বাকী  টাকা সম্পদের ক্ষতিপূরণ বাবদ। একইসাথে বাস চালক দেবেন ৩০ লাখ এবং বাকি চার কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা দেবে তিন বাস মালিক। দূর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের করা মামলায় এই রায় দেন উচ্চ আদালত।

বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিষ্টার সারাহ হোসেন বলেন, মামলায় ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলো ফাঁক ফোকর দিয়ে কম টাকা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক, যে বীমা কোম্পানীগুলো জীবনের মূল্য নির্ধারণ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। এসব বিষয়ে আরো কঠোর আইনি পদক্ষেপ দরকার বলেও জানান তিনি। দৃষ্টান্তমূলক এই রায়ে আগামীতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের বীমা দাবিসহ ক্ষতিপূরন পেতে ভূমিকা রাখবে বলে জানান ক্যাথরিন মাসুদ।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জ থেকে ফেরার পথে ঘিওরের জোকা নামে স্থানে তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়া চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিশুক মুনীরসহ মাইক্রোবাসের ৫ জন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অরডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা।

নিম্ন আদালত থেকে মামলা দুটি স্থানান্তরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে ওই আবেদন দুটি করা হয়। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ এবং মিশুক মনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাঁদের ছেলে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টে ওই দুটি আবেদন করেন। যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মামলা দুটির নথি তলব করা হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি।