মূখ্য নির্বাহীদের দৃষ্টিতে ২০১৭ সালের বীমাখাত

বিদায় বছরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখেছে দেশের বীমাখাত। লাইফ ও নন-লাইফ বীমাখাতে ঘটেছে নানান ঘটনা। এসব ঘটনায় যেমন রয়েছে প্রাপ্তি, তেমনি জন্ম দিয়েছে প্রত্যাশার। ২০১৭ সালের পরিবর্তন এগিয়ে নেবে ২০১৮ সালের বীমাখাত- এমনটাই প্রত্যাশা মূখ্য নির্বাহীদের। 

আহসানুল ইসলাম টিটু, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

বীমাখাতে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) পুনর্গঠন এবং দাবি পরিশোধে তাদের উদ্যোগ। বীমা দাবি পরিশোধে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জনআস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আশা করছি ২০১৮ সালে মার্কেটে আমাদের কনফিডেন্স অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমরা এখন বীমা মেলা করছি, ক্লেইম সেটেলমেন্ট করছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। সামনে একটা পজিটিভ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর দেখতে পাচ্ছি। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বীমাখাত দিকহীনভাবে চলছিল। কিন্তু এখন একটা দিক পাবে বলে আমরা আশা করছি।

মো. জালালুল আজীম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ নতুন করে পুনর্গঠন হওয়ার পর প্রবিধানমালা প্রণয়ণে তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা একটা বড় ধরণের পরিবর্তন। কারণ, প্রবিধানমালাগুলো খুবই জরুরি ছিল। তাছাড়া সিলেটে বীমা মেলা আয়োজন বড় পদক্ষেপ, যা বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।

২০১৮ সালে বীমাখাত ভালোর দিকেই যাবে। কিন্তু এখন যে ধীর গতিতে আগাচ্ছে, আগামী বছরও সেই একই গতিতে আগাবে। দ্রুত অগ্রগতি আশা করা যাবে না।

আদীবা রহমান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

সরকার ও বীমা কোম্পানিগুলো এবার ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে, যা বীমাখাতকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করবে বলে আমি মনে করি। ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে আগামী বছর বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও ভালো হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ড. এসএম  নুরুজ্জামান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি), জেনিথ ইসলমী লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৭ সালে আইডিআরএ'র নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নেতৃত্বে বীমাখাত প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে কোম্পানিগুলো যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। গ্রাহক আস্থা ফেরাতে আইডিআরএ'র বীমা মেলা এবং মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলে ভূমিকা রাখছে। সরকারও এদিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। তাই অচিরেই বীমাখাত দেশের অর্থনীতিতে সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।

তবে ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া মুনাফার হার কমে যাওয়া, বিভিন্ন খাতে উচ্চহারে ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপের ফলে কোম্পানিগুলোর খরচের হার বাড়তে পারে। যা বীমা শিল্পের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মোহাম্মদী খানম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স:

আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০১৭ সালে বীমাশিল্পের ব্যবসা-বাণিজ্য সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল। তবে স্বাস্থ্যবীমা কিছুটা অগ্রগতির প্রবণতা দেখা গেছে, বিশেষ করে বাণিজ্যিক বিক্রির ক্ষেত্রে। সচেতনতার অভাব ও ব্যবসার পরিধি না বাড়ায় কয়েক শ্রেণীর পণ্যের অগ্রগতি কম দেখা গেছে। জবাবদিহীতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার  স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে পদ্ধতিগত কৌশলের কারণে ব্যবসা পরিচালনায় বীমাখাত ক্রমেই কাঠামোবদ্ধ হচ্ছে।

২০১৮ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে দেশের বীমাশিল্প আরো এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই বীমার নতুন ট্যারিফ রেট অনুমোদন করতে যাচ্ছে আইডিআরএ, যার ফলে বীমা গ্রাহকরা আরো বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারবে। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বীমা মেলা আয়োজন এবং বিভিন্ন কোম্পানি নিয়মিত বীমা দাবি পরিশোধের কারণে ২০১৮ সালে আরো বেশি ব্যবসা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

মো. মনিরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স:

বীমাখাত খুব ভালো চলছে না। এককথায় এই কমিশন দিয়ে আর ক্লেইম দিয়ে ভালো চলছে না। এখানে যে পরিমাণ ব্যবসা আছে তার চেয়ে কোম্পানি বেশি।

২০১৮ সালে অর্থনীতি ভালো থাকলে, ইমপোর্ট বেশি হলে, শিল্পকারখানা বেশি হলে ব্যবসা বাড়বে। আর যদি পজিটিভ কোন পরিবর্তন না আসে তাহলে বীমা কোম্পানিগুলো ভালো চলবে না।

মো. খালেদ মামুন, সিইও, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স:

২০১৭ সালে নন-লাইফ বীমাখাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ গেছে। নতুন প্রিমিয়াম কমে গেছে। প্রতিবেদনগুলোতে প্রিমিয়াম সংগ্রহে অগ্রগতি দেখানো হলেও বাস্তবে কোন অগ্রগতি নেই বরং নিম্নমুখী। সরকারি খাতে কিছুটা ব্যবসা থাকলেও বেসরকারি খাতের অবস্থা বেহাল।

২০১৭ সালের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১৮ সালের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছি। কারণ, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এটাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ হবে। যার প্রভাব পড়বে বীমাখাতেও। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে বীমাখাতে ভালে কিছু প্রত্যাশা করতে পারছি না।

মোহাম্মদ হোসাইন খালেদ, চীফ এডভাইজার ও সাবেক এমডি, পিপলস ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সালে বীমাখাতের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ পুনর্গঠন। আমরা আশা করছি নতুন এই নেতৃত্ব বীমাখাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। এ খাতের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ দু'টোই তারা সফলভাবে করবে।  

দেশের বীমাখাতের প্রবণতা ভালোর দিকেই। সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রগতি হলে বীমাখাতেরও অগ্রগতি হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকলে বীমাখাতের উন্নয়ন হবে।