মেঘনা ও কর্ণফুলীর চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমদ

ভূয়া ব্যবসা দেখিয়ে বেতন বাড়িয়েছে বীমা কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

আবদুর রহমান: গ্রামগঞ্জের ভূয়া ব্যবসা দেখিয়ে প্রমোশন নিয়েছেন, নিজেদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন বীমা কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এমনই একটি ধারণা জন্মেছে যে, প্রিমিয়ামের অর্থ যেন কোম্পানির একক সম্পদ, কিন্তু বাস্তবে তা পলিসিহোল্ডারকে লাভসহ তার মৃত্যুতে বা মেয়াদ শেষে ফেরত দিতে হবে এটা চিন্তায় থাকে না। প্রতিটি কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুযোগ সুবিধা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা বিপুল আর্থিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন যা অন্য পেশার তুলনায় বেশি।  

"বীমা শিল্পে আস্থাহীনতা কেন?" শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমদ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) আয়োজিত বীমা মেলা ২০১৭ উপলক্ষে প্রকাশিত সুভ্যেনিয়রে এ নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়। গত ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে এ বীমা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, লাইফ তথা জীবন বীমার কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অধিক সংখ্যক কোম্পানিই একচ্যুয়ারিয়াল প্রিন্সিপল এর বাইরে কার্যক্রম পরিচালিত করছে যা কাম্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, কোম্পানির বোর্ড, ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নেতৃত্বে ম্যানেজমেন্ট তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী অধিকাংশ কোম্পানি কার্যক্রম শুরু করেছে এবং অধিকাংশ কোম্পানি সে স্টাইলে চলছে।

তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলো মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স বা ক্ষুদ্রবীমার নামে গ্রামগঞ্জে তথা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক সংখ্যক অফিস এবং অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত লোক নিয়োগ দিয়ে বীমার নামে দরিদ্র, গরীব ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বীমার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করছে। যারা বীমার প্রিমিয়াম দিয়েছে তারা জানেও না বীমা কি এবং ১০/১২ বছর ধরে প্রিমিয়ামের টাকা দিতে হবে।

নিজাম উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, বীমাকর্মীরা জানে প্রথম বছর প্রিমিয়াম আনলেই লাভ বেশি দ্বিতীয় বছরে লাভ কম। তাই সে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আনার জন্যই অধিক সচেষ্ট। অন্যদিকে খুব অল্প টাকা যা মাসে কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০ টাকার নীচে, গ্রামের সরলমনা মানুষের কাছ থেকে বীমাকর্মীগণ নিজেদের লাভের জন্য ধোকবাজী, প্রতারণার মাধ্যেমে প্রিমিয়াম নিয়েছে।

পরবর্তী পর্যায়ে ওই গরীব, অশিক্ষিত পলিসিহোল্ডার দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম না দেয়ায় তার পলিসিটি বাতিল হচ্ছে এবং তার অর্থ বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। সে জানে না দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম না দিলে তার প্রথম বর্ষের প্রিমিয়ামও বাজেয়াপ্ত হবে। অন্যদিকে কোন কোন বীমা কর্মী কিছু দিন পর অফিস বন্ধ করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ফলে প্রতারিত হচ্ছে বীমার নামে ওই এলাকার বিপুল সংখ্যক পলিসি হোল্ডার।

দুটি বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন লিখেছেন, আসলে বীমাকর্মীর ওই সমস্ত কাজের জন্য দায়ি কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের কর্মরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা গ্রামগঞ্জের এ রকম ভূয়া ব্যবসা দেখিয়ে প্রমোশন নিয়েছেন, নিজেদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন। প্রতিটি কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুযোগ সুবিধা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা বিপুল আর্থিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন য অন্য পেশার তুলনায় বেশি। এমনই একটি ধারণা জন্মেছে যে, প্রিমিয়ামের অর্থ যেন কোম্পানির একক সম্পদ, কিন্তু বাস্তবে তা পলিসিহোল্ডারকে লাভসহ তার মৃত্যুতে বা মেয়াদ শেষে ফেরত দিতে হবে এটা চিন্তায় ছিল না।

তিনি আরো লিখেছেন, লাইফ ইন্স্যুন্সে কোম্পানিগুলো ইচ্ছামত চলার ফলে এবং কোম্পানির আর্থিক দুর্বলতার কারণে অনেক কোম্পানিই পলিসিহোল্ডারদের মৃত্যুদাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির অর্থ সময়মত ফেরত দিতে পারছে না। পলিসিহোল্ডার পলিসি গ্রহণ করেছেন তার লাভের জন্য অথচ মৃত্যুদাবি ও মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি যদি তিনি সময়মত না পান তবে মানুষ বীমার প্রতি নিরুৎসাহিত হবেন। উত্তম সেবার অভাবে বীমা শিল্পের প্রতি মানুষের ধারণা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও বীমা কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে পলিসিহোল্ডারদের প্রতারণা করে নিজেরা বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।

কোথাও কোথাও এরকম অভিযোগ রয়েছে যে, মাঠ পর্যায়ের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মী এক কোম্পানির নবায়ন প্রিমিয়াম এনে অন্য কোম্পানিতে প্রথম বর্ষ ব্যবসা হিসেবে জমা করেছেন। কোথাও কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ বীমা দাবির অর্থ হতে গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই নতুন পলিসি করানো হচ্ছে। ফলে প্রত্যাশিত মাত্রায় নবায়ন প্রিমিয়াম আদায় হচ্ছে না। নবায়ন প্রিমিয়ামকে জীবন বীমা কোম্পানির ব্লাড এর সাথে তুলনা করা হয়।

নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে কোন কোন কোম্পানির দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম আদায়ের শতকরা হার ৫ থেকে ২০ ভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জীবন বীমা কোম্পানিকে সার্ভাইভ করতে হলে বিক্রিত পলিসির ন্যুনতম শতকরা ৭০ ভাগ নবায়ন প্রিমিয়াম আদায় হওয়া আবশ্যক। প্রথম বর্ষ ব্যবসায় অনুমোদিত ব্যয় হার তুলনামূলকভাবে অধিক। প্রত্যাশিত মাত্রায় নবায়ন আদায় না হওয়া এবং ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন না থাকায় কোম্পানিসমূহ আর্থিক সংকটে নিপতিত হচ্ছে।

ব্যবসা শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই প্রদান করতে হয় মৃত্যুদাবি, এসবি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি। উপযুক্ত ফান্ড না থাকার ফলে কোম্পানি এসব দাবি মেটাতে সংকটে পড়ে এবং এ কারণে ইমেজ সংকটে পড়ে বীমা শিল্প। কোন কোন কোম্পানির ভ্যালূয়েশন না হওয়া এবং শেয়ার মার্কেটে যেতে না পারায় পলিসিহোল্ডারকে লাভ দিতে পারছে না। পলিসিহোল্ডার এসব কোম্পানিতে পলিসি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান।