দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ

পদ্মা ইসলামী লাইফকে শুনানিতে ডেকেছে আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে শুনানিতে ডেকেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । আগামী ১০ জানুয়ারি বুধবার কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শুনানিতে পদ্মা ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, সিএফওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এরআগে এই শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ জানুয়ারি। অনিবার্য কারণবশত এ তারিখ পরিবর্তন করেছে কর্তৃপক্ষ।

বীমা দাবি না পাওয়ার বিষয়ে ৮ জন বীমা গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই শুনানি আহবান করেছে দেশের বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। গত ৩ জানুয়ারি শুনানির তারিখ পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে পিরোজপুরের কাউখালীর বীমা গ্রাহক মো. আ. সাত্তার খান বলেন, আমি ছাড়াও এ এলাকার ২৫ জনের বেশি লোক পদ্মা ইসলামী লাইফের কাছে টাকা পায়। কারো পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে, আবার কারো ২০১৭ সালে। এখন পর্যন্ত কারো টাকা দেয়নি পদ্মা ইসলামী লাইফ, সবাইকে ঘুরাচ্ছে।  

এ অবস্থায় গত নভেম্বরে কাউখালী অঞ্চলের ২৫ জনের বেশি বীমা গ্রাহক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে অভিযোগ করেছি। কয়েকদিন আগে সেখান থেকে ফোন পেয়েছি আমরা। আগামীকাল ১০ জানুয়ারি শুনানিতে আমাদের ডেকেছে।

টাকা চাইতে গেলে পদ্মা লাইফের জেলার কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন পলিসি দেয়ার জন্য। তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি টাকা পাবো। কিন্তু পুরনো গ্রাহকরাই টাকা পাচ্ছে না, নতুন করে কে বীমা করবে, বলেন বীমা গ্রাহক আ. সাত্তার খান।

বীমা গ্রাহক মো. ফয়জুল হক হাওলাদার বলেন, পদ্মা ইসলামী লাইফে ৬০ হাজার টাকা জমা করেছিলাম। ১০ বছর মেয়াদী এ বীমায় দ্বিগুণ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষে প্রায় ১৮ মাস পর তারা আমাকে ৬৫ হাজার ৭শ' টাকা দিয়েছে। এ টাকা পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। পরিচিত একজনের সহযোগিতায় আইডিআরএ'তে অভিযোগ করার পর মাস দু'য়েক আগে এ টাকা পেয়েছি।

আরেক বীমা গ্রাহক রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা কল্পনা বেগম জানান, ৫০০ টাকা মাসে ১০ বছরের পলিসি করেছিলেন পদ্মা ইসলামী লাইফে। কিন্তু মেয়াদ শেষে টাকা দিতে তারা অনেক দিন ঘুরিয়েছে। গত রোজার মধ্যে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। টাকা না পেয়ে আইডিআরএ'তে অভিযোগ করেছিলাম। কয়েক দিন আগে সেখান থেকে ফোন করেছে। বলেছি, টাকা পাইছি। তারা যাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু বলেছি টাকা পাইছি তাই আর যাব না।

এদিকে নিট গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ'র ১৪৯ শ্রমিকের মৃত্যুদাবির টাকা না পেয়ে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ'র কাছে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ ডিসেম্বর সমঝোতার মাধ্যমে ১২০টি দাবি বাবদ ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করে পদ্মা ইসলামী লাইফ। বাকী ২৯টি বীমা দাবি এখনো পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে,  বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন'র উত্থাপিত বাকী ২৯টি দাবি কেন পরিশোধ করা হয়নি এবং অভিযোগের ভিত্তিতে সঠিকভাবে সমাধান করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

এরআগে গত ১৫ নভেম্বর বিকেএমইএ'র ১৫৫ শ্রমিকের মৃত্যুদাবি পরিশোধ না করার বিষয় খতিয়ে দেখতে ১১টি তথ্য চেয়ে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে চিঠি দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । চিঠির জবাব দিতে সময় দেয়া হয় ৭ কার্যদিবস।

পদ্মা ইসলামী লাইফকে যেসব তথ্য দিতে বলা হয় সেগুলো হলো- বিএকএমইএ এর সাথে গ্রুপ চুক্তিনামা ও বীমাকৃত কর্মকর্তা/ কর্মচারির তালিকাসহ বিস্তারিত বিবরণ; বিকেএমইএ কর্তৃক প্রদত্ত বীমা দাবির দালিলাদিসহ তালিকা এবং বীমাকৃত টাকার পরিমাণ; বীমা দাবির নিষ্পত্তির বর্তমান হালনাগাদ অবস্থা; বীমা দাবি অনিষ্পন্ন থাকলে তার যথাযথ কারণ।

এছাড়াও, বীমা দাবি দীর্ঘদিন যাবত পরিশোধ না করার কারণ; বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিষয়ে বিকেএমইএ এর সাথে কোন সমঝোতা হলে তার তথ্যাদিসহ প্রমাণ; গ্রুপ বীমা চুক্তি সম্পাদন করার পর বিগত যে সকল বছরে বীমা ঝুঁকির আবরণ সচল ছিল সে সকল বছরের গৃহীত মোট প্রিমিয়ামের পরিমাণ; উক্ত প্রিমিয়ামের বিনিয়োগকৃত আয়ের তথ্য চাওয়া হয়।

এ পলিসির বিপরীতে পুনর্বীমা করলে তার বিস্তারিত বিবরণসহ তথ্যাদি; কোম্পানির বর্তমান নগদ প্রবাহ (Cash Flow) এবং তহবিল প্রবাহ (Fund flow) এর বিবরণ; উক্ত গ্রুপ বীমা ব্যবসা আহরণে কোন কমিশন প্রদান করে থাকলে এজেন্টের নাম, লাইসেন্স, কমিশনের বিল ভাউচার এর কপিও চেয়েছে আইডিআরএ।