পরিদর্শন ম্যানুয়েল চূড়ান্ত, শিগগিরই মাঠে নামছে আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সরকারি-বেসরকারি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয় বা শাখা কার্যালয় পরিদর্শন করতে 'পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ ম্যানুয়েল' চূড়ান্ত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এ ম্যানুয়েল অনুসরণ করে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন করতে এরইমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিদর্শন দলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার সময় পরিদর্শন দলকে সহযোগিতা করার জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারি করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। নির্দেশনা অনুসারে খুব শিগগিরই পরিদর্শক দল মাঠে নামছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

পরিদর্শন ম্যানুয়েলে বলা হয়েছে, বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৪৯ এ বর্ণিত বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষ সময় সময় বীমা প্রতিষ্ঠানের বা তার শাখা কার্যালয়ের বই, হিসাব এবং লেনদেনসমূহ পরিদর্শন করতে পারবে। আইনের ৪৮ ধারা মোতাবেক কোন প্রয়োজন দেখা দিলে বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদন্তের স্বার্থে পরিদর্শন করতে পারবে।

পরিদর্শনকালীন বীমা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কোম্পানি আইন ১৯৯৪'র বিধান মোতাবেক আরজেএসসি'তে বার্ষিক রিটার্ন দাখিল, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪'র বিধান মোতাবেক উৎস স্থলে কর কর্তন এবং প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর প্রদান, মূল্য সংযোজন কর ১৯৯১'র বিধান মোতাবেক উৎস স্থলে মূসক কর্তন এবং বীমা সেবার ওপর প্রদেয় মূসক জমা এবং বার্ষিক মূসক রিটার্ন, স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯ মোতাবেক বীমা দলিলে বীমা স্ট্যাম্প ব্যবহার এবং সময়ে সময়ে সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত লেভি প্রদান সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ করার এখতিয়ার রয়েছে।

এ ছাড়াও বীমা আইনের বিধান মোতাবেক বীমা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনা; ব্যবসা সংগ্রহে ব্যয়ের শতকরা হার; ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার; লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট এবং এমপ্লয়ার অব এজেন্ট নিয়োগের অনুপাত; এজেন্ট এর বাস্তবতা যাচাই; বিনিয়োগ হার; বিনিয়োগ আয়ের হার; বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা; পুনর্বীমার সাথে ঝুঁকির অংশীদারিত্ব; প্রিমিয়াম ব্যতিত ঝুঁকি গ্রহণ; এজেন্ট কর্তৃক বীমা গ্রাহকের নিকট থেকে নগদ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করার পরও যথাসময়ে বীমা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা প্রদান না করা; ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে কমিশন প্রদান; লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এজেন্টের মাধ্যমে এক প্রতিষ্ঠানের পলিসি অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর এবং পলিসি তামাদির কারণ উৎঘাটন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ।

পরিদর্শনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বীমা আইন ২০১০ এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিধি ও প্রবিধানমালার বিধান এবং সময়ে সময়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পরিপালনপূর্বক বীমা প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালিত হয় কি না তা পরীক্ষা করা; বীমা গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট হিসাব যথাযথ সংরক্ষণ করা হয় কি না তা পরীক্ষা করা এবং বীমাকারী কর্তৃক বীমা আইন ২০১০'র বিধান পরিপালন সম্পর্কে মূল্যায়ন করা; প্রিমিয়াম সংগ্রহ এবং ব্যাংক জমার পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন; বীমা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সুবিধাসহ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন; বীমা দাবি ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন; ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন ইত্যাদি পরিদর্শনের উদ্দেশ্য।

পরিদর্শন ম্যানুয়েল অনুসারে, বীমা আইন ২০১০ এর ৪৯ ধারার ক্ষমতাবলে কর্তৃপক্ষ একজন সুপারভাইজার কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে একজন টিম লিডার এর নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তার সমন্বয়ে পরিদর্শন দল গঠন করবে। প্রয়োজনে স্টেকহোল্ডারদের সাথেও আলাপ আলোচনা করতে পারবে। পরিদর্শন দল তাদের প্রদত্ত পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শুরু করবে যাতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিদর্শন কাজ সম্পন্ন করে সুপারভাইজার কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ শাখা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানসহ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে শুনানির আয়োজন করবে পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ শাখা। শুনানির পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কারণসহ বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে জানিয়ে দিবে। বীমা প্রতিষ্ঠান সংক্ষুব্ধ হলে বীমা আইনের বিধান মোতাবেক রিভিউয়ের আবেদন করতে পারবে। রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে রিভিউ শুনানি আয়োজন করবে। রিভিউ শুনানি সম্পন্নের পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বীমা প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিবে।

উল্লেখ্য, বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম দুর্নীতি দূর করে বীমাখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পরিদর্শক দল গঠন করে আইডিআরএ। সে সময় ৪ সদস্য বিশিষ্ট দু'টি দল গঠন করা হয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে দু'সদস্য বিশিষ্ট ৫টি টিম গঠন করেছিল আইডিআরএ। আইডিআরএ গঠনের পর ২০১১ সালে প্রথম পরিদর্শক দল গঠন করে সংস্থাটি। এ সময়ে ৬টি পরিদর্শক দল গঠন করা হয়।

এসব পরিদর্শক দল নন-লাইফ বীমা কোম্পানির বাকিতে পলিসি করানো ও অবৈধ কমিশন বন্ধে গুরুত্ব দেয়। এ সময়ে পরিদর্শক দলের প্রতিবেদন অনুসারে বাকিতে পলিসি করানোর কারণে অধিকাংশ কোম্পানিকে জরিমানা করাসহ কয়েকটি ব্রাঞ্চও বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে নন-লাইফ বীমাখাতে বাকিতে পলিসি করানো প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। তবে কোরাম সংকটের কারণে পরিদর্শক দলের কার্যক্রম গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।