ফারইস্টের দুর্নীতি তদন্তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, আইডিআরএ’র গড়িমসি
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফের শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। গত ১৯ আগস্ট এক চিঠিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। কোম্পানিটির জমি ক্রয়ের নামে টাকা আত্মসাৎ সিকিউরিটিজ বন্ডে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ না করা, আর্থিক প্রতিবেদনে গোঁজামিল দিয়ে তথ্য উপস্থাপনসহ নানাখাতের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। তবে গত এক মাস আগে নির্দেশ দিলেও এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ।
এর আগে গত বছর জুলাই মাসে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও মূখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহ’র বিরুদ্ধে জমি ক্রয়সহ নানাখাতে অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির করে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় অর্থমন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতি তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরআরএ। কমিটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত কমিটি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহর মৌখিক বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তা আমলে নেয়নি আইডিআরএ। চলতি সপ্তাহেই প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে আইডিআরএ’র বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
তদন্ত দলের দাখিল করা এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হলেও ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের সিইও এবং চেয়ারম্যানকে এক প্রকার দায়মুক্তি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে সব দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এম এ খালেক’র ওপর দায় চাপানো হয়। পাশাপাশি আইডিআরএ’র কাছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করায় অভিযোগকারী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ফলে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই তদন্ত প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সূত্র মতে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৫০০ কোটি টাকা দুর্নীতির বিষয়ে আইডিআরএ’র তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম। গত ৯ জুলাই অর্থমন্ত্রণালয়ে এ অভিযোগ করা হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র এমন প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে হয় ওই অভিযোগে।
অভিযোগ পত্রে, ফকরুল ইসলাম সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে ৩০% বিনিয়োগ না করা, গোড়ান চটবাড়িতে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতে খরচ ১৪০ কোটি, কোটি টাকার অনিয়মে আইডিআরএ কার পক্ষে শীর্ষক সংবাদগুলোতে প্রকাশিত দুর্নীতির বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানান।
অন্যদিকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের দুর্নীতির বিষয়ে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সিইও মো. হেমায়েত উল্লাহর মৌখিক বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ায় বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা অনুসারে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এম এ খালেক।
নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আইডিআরএ’র কাছে করা একাধিক আবেদন করেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এম এ খালেক। সর্বশেষ তিনি আবেদন করেন গত ১৭ আগস্ট। এসব আবেদনে তিনি অভিযোগ করেন, আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সিইও হেমায়েত উল্লাহর অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।
এম এ খালেক আরো অভিযোগ করেছেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ কতিপর অসাধু ব্যক্তির যোগসাজসে তাকে ভয় দেখিয়ে ৩৭৬ কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পত্তির পাওয়ার অব এটর্নি লিখে নিয়েছে। তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার স্বার্থে নজরুল ইসলাম ও হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলেও আবেদনপত্রে দাবি করেছেন সাবেক এই পরিচালক।
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করে এম এ খালেক তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে যে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে তা কোম্পানিটির হাজার হাজার গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় এবং বীমা খাতে উন্নয়নের স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজন। একই সাথে প্রকৃত সত্য উৎঘাটন ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।