গ্রাহককে টাকা না দেয়ায় সানলাইফের কার্যক্রম তদন্তে আইডিআরএ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমার মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই অভিযোগে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে নেমেছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ইতোমধ্যেই ২ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে সংস্থাটি। বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা অনুসারে এই তদন্ত করবে সংস্থাটি।
কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুসারে ওই কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল, পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে প্রশাসক নিয়োগ দেয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এক্ষেত্রে সংস্থাটি যে সিদ্ধান্ত নিক না কেন তার বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলা বা প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
সূত্রমতে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৭ বছর ধরে রংপুরের গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করছে না সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। এসব গ্রাহকদের পাওনা টাকা আদায়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ অভিযোগ দায়ের করেন কোম্পানিটির রংপুর বিভাগের ব্লক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা।
ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৪ জুলাই বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-কে বিষয়টি তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলে দুদক। এর প্রেক্ষিতেই গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় আইডিআরএ বীমা আইন ৪৮ ধারা অনুসারে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়।
তথ্য অনুসারে, গত ১২ অক্টোবর বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা মোতাবেক তদন্ত পরিচালনার জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটির সদস্যরা হলেন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (লাইফ) মো. শাহ আলম ও জুনিয়র অফিসার মুহাম্মদ শামছুল আলম। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গণমুখী বীমা প্রকল্পের ৭৮০টি বীমা পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। নিয়ম অনুসারে মেয়াদ উত্তীর্ণের ৯০ দিনের মধ্যে বীমা টাকা পরিশোধ করার কথা। অথচ কোম্পানিটি দীর্ঘ ৭ বছরেও অনেক বীমা পলিসির টাকা পরিশোধ করেনি। এসব গ্রাহকের পাওনার পরিমাণ ৯৩ লাখ ২৮ হাজার ৮০৩ টাকা।
তবে গ্রাহকদের চাপের মুখে এবং কোম্পানিটির স্থানীয় কর্মকর্তাদের অনুরোধে দীর্ঘ দিন পর রংপুর ইসলামী ব্যাংক শাখায় ৫৬৩ বীমা গ্রাহকের নামে ৯৩ লাখ ২৮ হাজার ৮০৩ টাকার চেক ইস্যু করেন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বীমা গ্রাহকরা বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলে বারবার যোগাযোগ করেও ব্যাংকটি থেকে কোন অর্থ উত্তোলন করতে পারেনি। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব গ্রাহক।
এ অবস্থায় ভুক্তভোগী এসব বীমা গ্রাহক সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হতে থাকেন। মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন ও অপমানের শিকার হন কোম্পানিটির রংপুর বিভাগের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে এসব কর্মকর্তার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। এতো কিছুর পরও অদ্যবধি বীমার টাকা পরিশোধ করেনি সানলাইফ ইন্সুরেন্স।
এ বিষয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. মাসুদ রানা বলেন, এক বছরের বেশি সময় হলো দুদকে অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের বিষয়ে কয়েকদিন আগে আইডিআরএ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে শুনেছি। গত সপ্তাতে তারা ফোন করে আমার ঠিকানা নিয়েছে। সম্ভবত কয়েকদিনের মধ্যে আইডিআরএ থেকে লোকজন আসবে বিষয়টি সরেজমিন খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য। তবে এখন পর্যন্ত বীমা গ্রাহকদের কোন পাওনা পরিশোধ করেনি কোম্পানি।
আইডিআরএ’র পরিচালক (লাইফ) ও তদন্ত কমিটির দলনেতা মো. শাহ আলম বলেন, এরইমধ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আমাদেরকে ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে অভিযোগকারী, বীমা গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। এরপরই বোঝা যাবে ঘটনার বাস্তবতা। তদন্তের আগে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। কুমিল্লা অঞ্চলেও এ রকম অভিযোগ উঠেছিল, তবে সেটা কোম্পানির সাথে কথা বলে সমাধান করা হয়েছে। শিগগিরই ওই সব গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান প্রফেসর রুবিনা হামিদের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।