নন-লাইফ বীমায় সম্পদ বেশি গ্রীন ডেল্টার
তাফহিমুল ইসলাম: নন-লাইফ বীমা খাতে গ্রীন ডেল্টার সম্পদ সবচেয়ে বেশি। কোম্পানির মোট সম্পদ ১ হাজার ১৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা নন-লাইফ বীমা খাতের মোট সম্পদের ১২.২২ শতাংশ। করোনা মহামারিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ২০২০ সালেও কোম্পানিটি প্রায় ২ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পেয়েছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।
করোনায় বড় ধাক্কা গেলেও তেমন কোন প্রভাব পড়েনি কোম্পানির ব্যবসায়। দাবি উত্থাপনের পরিমাণ কমে যাওয়া,করোনার শুরুতে কমিশন বন্ধ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ব্যবস্থাপনা ব্যায়সহ অনান্য ব্যায় কমে যাওয়াকে সম্পদ বৃদ্ধি কারণ হিসেবে দেখছেন বীমা কোম্পানিটির সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালে থেকে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ৫ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখো গেছে, ধারা বাহিক ভাবে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে আসছে কোম্পানিটি। ২০১৬ সালে কোম্পনিটির মোট সম্পদ ছিল ৮শ’ ৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০২০ সালে এসে কোম্পানিটির ৪ বছরে মোট সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে ২শ’৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
২০২০ সালে ৩৯ হাজার ৫৯০ জন কৃষকের ১ লাখ ৬০ হাজার একরের বেশি জমি কৃষি বীমার আওয়াতায় নিয়ে এসেছে কোম্পানিটি। দেশের ৪২ জেলায় ১ লাখ ২১ হাজার পরিবার কোম্পানিটির ক্ষুদ্র বীমার সুবিধা গ্রহণ করছে। স্বাস্থ্য বীমার সেবা নেয়ার জন্য ৯ হাজার বেশি গ্রাহক ফোনে যোগাযোগ করেছে কোম্পানির সাথে।
২০২০ সালে বীমা কোম্পানিটির মোট সম্পদ ১ হাজার ১’শ ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে বিনিযোগ রয়েছে ৩শ ৭৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৪ টাকা, ক্যাশ ও ক্যাশ ইকুইভ্যালেন্ট রয়েছে ১০৬ কোটি ৩৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫৯ টাকা, জমি ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৭৪ হাজার ১০ টাকা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১২৫ কোটি ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৮ টাকা।
মুদ্রণ, স্টেশনারি ও স্ট্যাম্পের স্টক রয়েছে ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৯৩ টাকা, বীমা ইসুকারী অন্যান্য ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকে বকেয়ার পরিমাণ ৩৩৮ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১৯৯ টাকা, আউটস্ট্যানডিং প্রিমিয়াম ৫ কোটি ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং সানড্রি ডেবট’স (বিবিধ পাওনা) ৮৮ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ৫১৩ টাকা।
কোম্পানিটির নেট দাবি ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়লেও ২০২০ সালে এসে কমেছে। যেখানে ২০১৬ সালে নেট দাবি ছিল ৩৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৩৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ৪৭ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং ২০১৯ সালে ৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর ২০২০ সালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
২০২০ সালে এসে মোট বিনিয়োগও বেড়েছে কোম্পানিটির। ২০১৬ সালে মোট বিনিয়োগ ছিল ৫১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে মোট বিনিয়োগ ছিল ৫৩৬ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিল ৫৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর ২০২০ সালে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৫৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৮ ও ২০১৯ সাল এই দুই বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
প্রিমিয়াম আয়ের দিকেও কোম্পানিটি বেশে এগিয়ে। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি মোট প্রিমিয়াম আয় করেছিল ৩১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ৩২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ৩৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ৪১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে করোনার মধ্যে কোম্পানিটি ৩৬৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করে।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ২০২০ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য মতে, কোম্পানিটি ২০২০ সালে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি বীমা ঝুঁকি (বীমা অংক) গ্রহণ করেছে। নতুন বীমা পলিশি বিক্রি করেছে ৩৩ হাজার এবং ৮ হাজারের বেশি বীমা দাবি পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোগে ২০২০ সালে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম এসডিজি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্য অর্জনে দারিদ্র হ্রাস, সকল বয়সী মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ও শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা, নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা আনা, সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দিয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স।
বর্তমানে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে প্রায় সাড়ে ৬শ' কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করছে। এসব ব্যক্তির নিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রীন ডেল্টা ইতোবাচক ভূমিকা রেখেছে। কোম্পানিটিতে প্রায় ২৩ শতাংশ মহিলা কর্মী কাজ করছে। তাদের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচী, নারীদের অর্থায়ন, ক্যান্সার সচেতনতা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকলের জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ও জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। পরিবেশ উন্নয়নে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের নেয়া কর্মসূচির মধ্যে বিদ্যুৎ অপচয় হ্রাস করা, অন-লাইনে সকল তথ্য সংরক্ষণ করা, চা চাষ কর্মসূচি রয়েছে।