১৭ লাইফ বীমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয় ১১৫ কোটি টাকা

আবদুর রহমান আবির : সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০২১ সালে দেশের সরকারি বেসরকারি ১৭টি লাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা খাতে অনুমোদিত ব্যয়সীমার চেয়ে ১১৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। কমিশন, বেতন-ভাতা, অফিস ভাড়া ও নানাবিধ খাত দেখিয়ে এই অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে।

আইন বলছে, অতিরিক্ত ব্যয় অবৈধ। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র মতে, এ টাকা বীমা গ্রাহকের; তাই অতিরিক্ত ব্যয় অবৈধ।

২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যয় পুনর্ভরণের জন্য অঙ্গীকার করে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। তবে বেশ কিছু কোম্পানি সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

২০২০ সালেও ১৫টি লাইফ বীমা কোম্পানি অতিরিক্ত ব্যয় করে ১১৪.৩২ কোটি টাকা। তবে এরমধ্যে ১২টি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয়ের হার ২০২১ সালে এসে কিছুটা কমেছে।

তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ১৭টি লাইফ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৪৪২.১৩ কোটি টাকা। তবে কোম্পানিগুলোর প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৫৫৭.২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১১৫.১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশন অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৪৪.১৯ কোটি টাকা এরপরেই রয়েছে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কোম্পানিটি গেলো বছর ১২.২৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ১১.০৫ কোটি টাকা। প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৭.৮২ কোটি টাকা ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৬.৩৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

গেলো বছর বেস্ট লাইফ ২.২ কোটি টাকা, চার্টার্ড লাইফ ৩.২৪ কোটি টাকা, ডায়মন্ড লাইফ ১.৯৯ কোটি টাকা, যমুনা লাইফ ৩.৩ কোটি টাকা, এলআইসি বাংলাদেশ ২.৬৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ৫.৫৩ কোটি টাকা, বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ৪.৪৩ কোটি টাকা, পদ্মা ইসলামী লাইফ ৪.৭ কোটি টাকা, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ১.২৬ কোটি টাকা, জেনিথ ইসলামী লাইফ ১.৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে।

এ ছাড়াও ২০২১ সালে অনুমোদন পাওয়া এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১.২২ কোটি টাকা এবং আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১.০৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আমজান হোসেন খান চৌধুরী বলেন, গেলো বছরে আমাদের ব্যাপক রিক্রুটমেন্ট হয়েছে এবং ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যার কারণে অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণও বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত ব্যয়ের হার আগের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। এরইমধ্যে আমরা ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমার মধ্যে রাখার জন্য সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশাকরি ধিরে ধিরে এটা আরো কমে আসবে।

এ বিষয়ে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, ব্যবসা বৃদ্ধি করতে গিয়ে ব্যয় সংকোচন করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের জন্য । এছাড়াও রিস্ক এসেসম্যন্ট করে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানোর জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- কমিশন কমানো, যেসব অফিসে ব্যয় বেশি ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া, ব্যবসা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। এজন্য আমরা প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের মান বৃদ্ধি করে কাজ সহজ করে নিয়েছি ২০২১ সালে। এ ছাড়াও ব্যয় সামঞ্জস্য অফিস তৈরী করা হয়েছে। বিপণন বিভাগকেও ঢেলে সাজানো হয়েছে।

বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মনিরুল ইসলাম বলেন, গেলো বছর আমি কোম্পানিটিতে যোগদান করেছি এবং নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির তথ্য-প্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আগের কিছু পেন্ডিং কাজ করতে গিয়ে খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে।

তবে এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির ভালো হবে। এরইমধ্যে আমাদের কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ, লাইফ ফান্ডও বেড়েছে বেশ। ২০২৩ সাল নাগাদ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমে আসবে এবং এটা অনুমোদিত সীমার মধ্যে চলে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এম এম মনিরুল ইসলাম।