আকিজ তাকাফুল লাইফের মুখ্য নির্বাহী পদে আবেদন

অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ করেননি আলমগীর চৌধুরী, প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে

আবদুর রহমান আবির: আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন পেতে আলমগীর চৌধুরী শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন বিবিএ ও এমবিএ পাস। অথচ ২ বছর আগেও চাকরির আবেদনে তিনি বিবিএ ও এমবিএ পাসের কোন তথ্য দেননি। সে সময় চাকরির আবেদনে তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন বিকম পাস। এ অবস্থায় আলমগীর চৌধুরী এমবিএ পাস নাকি বিকম পাস -তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াও অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করার চিত্র উঠে এসেছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে।

আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদন দিতে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দীন। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুন আকিজ তাকাফুল লাইফের মুখ্য নির্বাহী পদে যোগদান করেন আলমগীর চৌধুরী।

মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদনের আবেদনে আলমগীর চৌধুরী দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা (ইউএনআইসি) থেকে ২০০৩ সালে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৪ সালে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সনদ দাখিল করেন। আলমগীর চৌধুরী ১৯৮৯ সালে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে দাখিল করা জীবন বৃত্তান্তে (রেজিম) আলমগীর চৌধুরী তার শিক্ষাগত যোগ্যতায় সর্বশেষ ডিগ্রি হিসেবে দেখান- বিকম পাস। ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে ট্রাস্ট লাইফে চাকরি নেয়ার সময়েও আলমগীর চৌধুর নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম পাস উল্লেখ করেন।

আলমগীর চৌধুরী যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, তাদের অনেকেই মনে করেন- আলমগীর চৌধুরীর বিবিএ এবং এমবিএ পাসের সনদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর এ কারণেই তিনি আগের কোম্পানিগুলোতে বিবিএ ও এমবি পাসের তথ্য গোপন করেছেন। তবে বিব্রত অবস্থায় না পড়তে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।

আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একেক সময়ে একেক রকম তথ্য দেয়ায় তার প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াও সনদ বিক্রির অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দাখিল করায় তার বিবিএ ও এমবি পাসের সনদের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিতর্কিত সনদের ভিত্তিতে বীমা কোম্পানির শীর্ষ পদে নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হলে তার দায় বর্তাবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ওপর-ই। এমনিতেই ‘‌‍নেতিবাচক ধারণা’ বীমা খাতের প্রধান সমস্যা। সেক্ষেত্রে এ ধরণের নিয়োগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি কতটা আস্থা থাকবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা (ইউএনআইসি)’র বিষয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানিয়েছে, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা অনুমোদন পায় ১৯৯৫ সালের ৪ ডিসেম্বর। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত না করার কারণে ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর কমিশন থেকে দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার আর অনুমোদন দেয়া হয়নি।

মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা নেই

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেতে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদে ৩ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অথচ মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর এই অভিজ্ঞতা রয়েছে ১ বছর ৩ মাস।

আলমগীর চৌধুরী ২০২১ সালের ২৭ জুন আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করেন। এরপর ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বীমা কোম্পানিটির ১১তম পর্ষদ সভায় তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই হিসাবে ২০২১ সালের ২৭ জুন থেকে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ‘১ বছর ৩ মাস’ মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদে কর্মরত ছিলেন মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী।

এর আগে তিনি কখনো মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদে ছিলেন না।

আলমগীর চৌধুরী ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি পান ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এই পদে তিনি চাকরি করেন ২ বছর ৬ মাস। এ সময়ে তিনি সরাসরি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন দাবি করে অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করেছেন।

তবে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ বলছে, কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এডি.এমডি) । উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) কোম্পানিটির তৃতীয় নিম্নপদ।

শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, যেখানে যা প্রয়োজন হয়েছে সেখানে সেটাই দাখিল করেছি; আমি অতিরিক্ত কিছুই দাখিল করিনি।

তিনি বলেন, আগের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিকম ডিগ্রিই যথেষ্ট ছিল; তাই সেখানে বিবিএ ও এমবিএ’র সনদ দাখিল করিনি। আইডিআরএ’র প্রয়োজনে এখন বিবিএ, এমবিএ’র সনদ দাখিল করেছি। এখানে বিকম ডিগ্রির প্রয়োজন নাই, তাই সেটা এখানে দাখিল করিনি।

এর আগে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে আলমগীর চৌধুরী বলেন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে প্রায় আড়াই বছর কর্মরত ছিলাম। যেখানে আমি সরাসরি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিচের দায়িত্ব পালন করেছি।

কারণ, ওই সময় কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী না থাকায় তৎকালীন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মুখ্য নির্বাহীর দায়িত্বে। আর আমি ডিএমডি হিসেবে মুখ্য নির্বাহীর নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এরপর আমি আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করি।

এই হিসাবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদে আমার অভিজ্ঞতা ৩ বছরের বেশি।

অবৈধ কর্মকাণ্ডে বন্ধ হওয়া দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার সনদ দাখিলের বিষয়ে আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমি যখন পড়েছি তখন বিশ্ববিদ্যালয়টির কোন সমস্যা ছিল না; সবই ঠিক ছিল। এখন কি অবস্থা তা আমি জানি না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়টির থেকে আমার সনদ ধারণে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।