বীমা খাত ও ইমেজ সংকট; কারণ ও করণীয়: পর্ব-১

ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আরটিভি'র সাপ্তাহিক আয়োজন বিজনেজ টক-এ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয় বীমা খাত ও ইমেজ সংকট; কারণ ও করণীয় শীর্ষক টক শো। সৈয়দ আশিক রহমানের উপস্থাপনায় এতে আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন এমপি, সিপিডি'র রিসার্চ ফেলো ডা. তৌফিকুল ইসলাম খান, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম ও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এম এ নাসের।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি'র বীমা খাত ও ইমেজ সংকট; কারণ ও করণীয় শীর্ষক টক শো'র ভিডিওটি ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের জন্য অনুলিখন করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে https://www.youtube.com/watch?v=Tqb5o7RqO1A&feature=youtu.be এই লিঙ্কে ঢুকে টক শো'র মূল ভিডিওটি দেখতে পারেন। টক শো'র প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হলো।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব জামাল এম এ নাসের, আপনি যদি বলেন বাংলাদেশের বীমা খাত আসলে কি অবস্থায় আছে, কেমন করছে বীমা খাত?

জামাল এম এ নাসের: বাংলাদেশের বীমা খাত এই মুহুর্তে আমি বলবো যে, কয়েকটা বেজ অতিক্রম করছে। কারণ আপনারা জানেন যে, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স নিয়ন্ত্রক হিসেবে ছিল এবং বাংলাদেশ সরকার যখন ২০১০ সালে বীমা আইন পাস করলেন এবং ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন বীমা আইন যখন আমাদের বাংলাদেশে আসলো এবং বীমা অধিদপ্তর অর্থাৎ আইডিআরএ বা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আসলো এবং সেখান থেকে বীমার কিছু কিছু বিষয় নজরে আসলো যেগুলো পূর্বে নজরে ছিল না।

কিন্তু নজরে আসলে কি হবে যে, দীর্ঘ দিন থেকেই এই ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছিল নিজস্ব গতিতে। প্রত্যেকটা কোম্পানি তাদের নিজস্ব গতিতেই এই ব্যবসাকে চালিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ১৯৩৮ সালের বীমা আইন এবং ১৯৫৮ সালের বীমা বিধি- এটা অনেক ক্ষেত্রেই পরিপালন হয়তো ঠিকমতো হচ্ছিল না।

কিন্তু আইনের যদি ব্যাখ্যা করা হয় হয়তোবা আইনেরও কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল বিধায় নতুন আইন আসলো। এই নতুন আইনটা যখন আমাদের দেশে ইমপ্লিমেন্ট করতে গেল আমাদের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হলো কর্তৃপক্ষকে এবং আমরা যারা ইউজার বা বীমা কোম্পানি কাজ করি আমরাও আমাদেরকে কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি।

যে কারণে আমাদের মানুষের কাছে যে বীমা সঠিক সংবাদ, সেটি পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি। গ্রাহকের টাকা আনার ক্ষেত্রে যে সঠিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ এজেন্ট। আমাদের চ্যানেল কোনটা? আমাদের বাংলাদেশে এই মুহুর্তে, ইন্স্যুরেন্সের এখন পর্যন্ত একটাই চ্যানেল; আমরা এজেন্ট চ্যানেল বলে থাকি।

এজেন্টের বিষয়ে বীমা নীতিমালা হলো ২০১৪ সালে সেখানে প্রশিক্ষণের কথা, বীমা আইনেও কিছুটা আছে। এই প্রশিক্ষণটা এজেন্টদের আমরা সেভাবে দিতে পারিনি। যদিও ইদানিং শুরু হয়েছে কিন্তু এটার ফলোআপ এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। যে প্রশিক্ষণটা আমরা এজেন্টকে দিচ্ছি সে এজেন্টগুলো আসলে রিটেনশনে আছে কি না, তারা ট্রেনিং নিয়ে কাজ করতে পারছে কিনা।

অর্থাৎ সঠিক বীমা এজেন্ট তৈরি না হওয়ার কারণে আমি বলবো যে, মানুষের ভিতর একটা অনাস্থা কাজ করছে এবং অনেক লোক ইতোমধ্যো এর ফাঁকে কিছু সুযোগ গ্রহণ করতেছে। এ সুযোগ গ্রহণ করার কারণে ইন্ডাস্ট্রি আজকে প্রশ্নবিদ্ধ।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব তৌফিকুল ইসলাম, প্রত্যাশিত বিকাশ হচ্ছে না বীমা খাতের। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ইমেজ সঙ্কটকে বা ইমেজ সঙ্কটকেই দায়ি করা হচ্ছে। আপনার বিশ্লেষণ শুনতে চাইছি, বীমা খাতে কেন এই ইমেজ সঙ্কট তৈরি হলো?

ডা. তৌফিকুল ইসলাম খান: এটা বিভিন্ন গবেষণায় বা প্রায়ই দেখা গেছে যখন পার্সেপশন সার্ভে করা হয়েছে। যারা সাধারণ জনগণ বা যারা বীমা গ্রাহক আছেন তারা মনে করেন যে, একটা বড় সমস্যা হলো বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব। এটা একটা খুব বড় সমস্যা তৈরি করেছে।

মুশকিলটা হলো যে, আপনি যদি বাংলাদেশের ৩টি প্রধান আর্থিক খাতের দিকে তাকান- একটা ব্যাংকিং, একটা পুঁজিবাজার এবং আরেকটি হলো বীমা। তার ভিতর আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে যে, এই বীমা এক ধরণের অবহেলার মাধ্যমে বেড়ে উঠেছে। নিজেরা বেড়ে উঠেছে- আমি বলবো যে বেশ অবহেলার মাধ্যমে বেড়ে উঠেছে।

এর একটা বড় কারণ হলো যে, ধারণা করা হতো এটার প্রয়োজনীয়তাটা বোধ হয় আমাদের অতোখানি। নেই। মানুষ এমনিই গরীব, বীমাতে আবার টাকা দিয়ে কিভাবে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের কারণগুলো- সাধারণ যে সঞ্চয় প্রবণতা, এই সঞ্চয় প্রবণতা থেকে বীমার সঞ্চয়টা, সাধারণ গ্রাহক হিসেবে কিছুটা অলাভজনক মনে হয় যখন আপনি জীবন বীমা করতে যাবেন।

যেহেতু এটা বীমা, এটা একই রকমভাবে আমাদের যে উচ্চ সুদের হার আছে অন্যান্য ডিপোজিটে। বীমার কিন্তু সেই অর্থে, আপনি যদি চিন্তা করেন ইন্টারেস্ট রেট; আমি যদি বলি তাহলে আপনি বেঁচে থাকলে ১৫ বছর ২০ বছরের একটা জীবন বীমা নিয়ে যে টাকাটা আপনি পাবেন, একচ্যুয়ালি এটার ডিভিডেন্টটা কম।

আর দ্বিতীয় যে সমস্যা হচ্ছে সেটা হলো- অনেকে শুরু করেন, তার পরে গিয়ে দেখা যায় যে এটা কন্টিনিউ করছেন না। যেহেতু এটা এজেন্টের মাধ্যমে হয়- এজেন্টতো আর ২০ বছর ধরে এই জায়গাটায় থাকা খুবই মুশকিল হয়। একটা সময় এজেন্টের হয়তো অনেক দরকার ছিল, তখন অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ছিল না, ইনফ্রাস্ট্রাকচার অতখানি ছিল না।

কিন্তু আপনি যদি ব্যাংকিংয়ের দিকে তাকান তাহলে ব্যাংক ব্যবস্থা যেভাবে আস্তে আস্তে গড়ে উঠেছে, এটার শাখা বিভিন্ন যায়গায় খোলা হয়েছে, এটার অনলাইন ব্যাংকিং আছে। আপনি চাইলে গিয়ে একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারছেন। ব্যাংকেরও হয়তো এরকম কিছু ক্লায়েন্ট সার্ভিস থাকে যেগুলো আপনার এজেন্টের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সার্ভিস দেয়।

কিন্তু বীমা সোললি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গেছে। খুব কম সংখক বীমা কোম্পানি আছেন যারা প্রিমিয়ামগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের সাথে একটা লিঙ্ক করছে। বিশেষত এগুলো পাওয়া যায় হয়তো সার্টেইন কিছু ব্যাংকের সাথে। এটা আবার সব ব্যাংকে থাকলে হবে না।

আমি যতটুকু জানি, ওনারা হয়তো আরো ভালো বলতে পারবেন। এইগুলো একটা সমস্যা তৈরি করে। এজেন্ট নির্ভরতা একটা সমস্যা। আবার অন্যদিকে এজেন্টের ক্যাপাসিটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারা ঠিকমতো বলতে পারেন না- এটার যে ম্যাকানিজম আছে, কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে, ভিতরে কি ধরণের শর্ত দেয়া আছে কি নাই। টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটা সমস্যা। এই সার্ভিকভাবে এটা আমাদের সমস্যা হচ্ছে।

কিন্তু বড় বিষয় হচ্ছে যে, এখান থেকে যদি আমরা আগাতে না পারি- এটা যে শুধুমাত্র আমার বীমা করার ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে, তা না। অর্থায়নের ক্ষেত্রেও যে সুযোগ-সুবিধাটা আমি কাজে লাগাতে পারতাম। পার্টিকুলারলি আপনি যদি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কথা বলেন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে সব জায়গাতেই- হয় বীমা অথবা পেনশনের টাকাগুলো বিভিন্ন দেশ কাজে লাগিয়েছে। আমাদের দেশে কিন্তু এটা পারিনি।

২০ বছরের একটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে আপনি ব্যবহার করতে পারেন, একটা ব্রিজ বানানোর ক্ষেত্রে। কারণ, তখন এটা ম্যাচিউর করে বেনিফিট দিলে এটা কাভার করবে। ব্যাংকের এই ৩ বছর মেয়াদী বা ৫ বছর মেয়াদী ঋণের মাধ্যমে কিন্তু এটা সম্ভব না।

ফলে বড় ইন্ডাস্ট্রির জন্য, ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জন্য বীমার অর্থায়নটা খুব জরুরি। কিন্তু আবার ওনাদের কথাই যদি বলি, যারা বীমা কোম্পানি আছেন তারা কিন্তু আবার ফুললি এটাকে খুব ফ্লেক্সিবললি, কানেক্টেটে ফান্ডটা আছে। এটা ব্যাবহারও করতে পারে না।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব এম জে আজিম, ভারতের জিডিপি'র আকার বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ। অথচ সেখানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে মাত্র ২২ থেকে ২৩টি। অথচ বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে ৭৮টি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির পরিধির তুলনায় প্রতিষ্ঠান বেশি হওয়ায় এক ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে কোম্পানিগুলো এবং দক্ষতার তো একটি বড় ঘাটতি রয়েছেই। যার অনিবার্য নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো বীমা খাতে।

আপনার বিশ্লেষণ চাচ্ছি এবং এতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন কেন ও অসুস্থ প্রতিযোগিতাটাইবা কাম্য কেন?

মো. জালালুল আজিম: ধন্যবাদ আপনাকে। যে স্ট্যাটিস্টিকস দিলেন তার সাথে একটু কারেকশন আমি করি।

আমাদের ৭৮টি কোম্পানি লাইফ ও নন-লাইফ মিলে। আর ভারতে ৫৭টি কোম্পানি। তারপরও আপনার কথাটি ঠিক যে, আমাদের ইকোনমি এবং ভারতের ইকোনমির সাথে কমপেয়ার করলে ৫০ গুণ; বা একটা বড় দেশ, বড় জনসংখ্যা, বড় ইকোনমির সাথে তুলনা করে আমিও বলবো এই কথাটি যে আমাদের এখানে যে ৭৮টি কোম্পানি নিঃসন্দেহে এ সংখ্যা অনেক বেশি।

বেশি এই জন্যই আমি বলবো যে, আমাদের সক্ষমতার কথাগুলো চিন্তা করার দরকার ছিল। আমাদের ইকোনমির কথা চিন্তা করার দরকার ছিল। হ্যা, লোক আমাদের ১৬/১৭ কোটি আছে। কিন্তু থাকলেই সেই বীমা গ্রহণ করার ক্যাপাসিটি কি আছে বা কিভাবে আমরা নিতে পারবো, না পারব না- এই দক্ষ জনবল আমাদের আছে কি না। ইমেজ সঙ্কটের যে কথাটা বললাম, আমরা ইমেজ সঙ্কটটাকে দূর করতে পেরেছি কি না। এসব কিছুই নিয়েই কিন্তু চিন্তা করা উচিত ছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেটা হয়নি। না হওয়ার ফলেই কিন্তু এই বাজারে টিকে থাকার জন্য এই অসুস্থ্য প্রতিযোগিতাটা আসছে এবং এই অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার শিকার কিন্তু আমরা সবাই। এখন আমরা চেষ্টা করছি এখান থেকে বের হওয়ার জন্য। যেটা কঠিন হয়ে গেছে আমাদের জন্য।

আমার বিশ্লেষণ যে, এটা দেয়া ঠিক হয়নি। বাট এনি ওয়ে- যেহেতু কোম্পানিগুলো চলে এসেছে। সম্ভাবনাও যেহেতু আছে। সম্মিলিতভাবে আমাদের একটা প্রচেষ্টা নেয়া দরকার। এই সম্মিলিতভাবে আমি বলতে চাচ্ছি- সরকার থেকে আরম্ভ করে সরকারের যে নিয়ন্ত্রণকারী বডি এখানে রয়েছে ইড্রা তারা, আমরা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি যারা আছি, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন আছে। ইভেন আপনাদের মিডিয়া আছে। সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর বীমাখাত। একইভাবে সবচেয়ে অবহেলিত বীমাখাত।

কিন্তু এই সরকারই প্রথমবারের মতো এটার গুরুত্ব অনুধাবন করছে। এই সরকার আমাদের খুব একটা ভালো জিনিস উপহার দিয়েছে। যেটা ২০১৪ সালের অগাস্টে- জাতীয় বীমা নীতি। এই বীমা নীতিতে সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করে সমাধানের পথ বাতলানো আছে এবং স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা দেয়া আছে এবং ১৪ থেকে ১৫টা অর্গানাইজেশন যারা কে কোন কাজ করবে, না করবে সেটা বলা আছে।

আমি মনে করি, এই বীমা নীতিটাকেই বাস্তবায়ন করা হয়, সেখান থেকে আমরা ইমেজ সঙ্কট দূর করে আসতে পারবো, দক্ষ জনবলও আমরা তৈরি করতে পারবো। একদিনে হবে না, সময় লাগবে। আমরা আমাদের এই কোম্পানিগুলো সার্ভাইব করতে পারবে সুন্দরভাবে। অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা থাকবে না এবং দেশের ইকোনমিতে একটা ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।  

দুর্ভাগ্যবশতঃ ২০১৪ সালে যেটা এসেছিল আমাদের, তাতে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা ছিল ২ বছর। ২ বছর কিন্তু অতিক্রম হয়ে গেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে- একটা সিঙ্গেল স্ট্র্যাটেজির মধ্যে যে একশনপ্ল্যানগুলো ছিল, একটা একশন প্ল্যানও বাস্তবায়ন হয় নাই।

আজ আমি অনুরোধ করব আপনাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে- আপনাদের কাছে, আমাদের যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য আছেন- ওনারা যদি এদিকটা একটু দেখেন যে, বীমা নীতিটাকে যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এর মাধ্যমেই কিন্তু আমরা সব কিছু থেকে উতরানোর একটা পথ খুঁজে পাবো বলে আমি মনে করি।

সৈয়দ আশিক রহমান: জনাব ফরহাদ হোসেন এমপি, যেমনটি এম জে আজিম বলছিলেন যে, আসলে যাদের দেখভালের কথা; কর্তৃপক্ষ যারা আছে তারা আসলে তাদের সক্ষমতা এবং তাদের ইচ্ছা শক্তিটা বোঝা যাচ্ছে না। সরকার বীমা খাতের প্রতি কতটুকু মনযোগী অথবা আন্তরিক?

ফরহাদ হোসেন এমপি: আপনি জানেন যে, বীমা খাতটি আসলে আমাদের যেভাবে ছিল, ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পরে ২০১০ এ আমাদের বীমা আইন- সেটা কিছু সংস্কার করা হয়েছে এবং বীমা যে আমাদের ইকনোমিক সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিপার্টমেন্ট এবং সেটাকে চিহ্নিত করে এটাকে কিভাবে আরো রিফর্মস আনা যায় এবং এটাকে কিভাবে আরো মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া যায়- এটা কিন্তু সরকার উপলব্ধি করেছে। উপলব্ধি করার পরে এতে প্রবলেমগুলো, এর কি কি ছিল এটাকে ভালো করে স্টাডি করে তারপর আমরা ২০১৪'তেও এটা নিয়ে আমাদের স্টাডি কমিটির মিটিংয়ে তুলে আমরা এটাকে বিস্তারিতভাবে আলোচনাও করেছি।

আলোচনার পর আমরা আমাদের ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন- তাদেরকে নিয়ে বসেছি এবং বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যান তাদেরকে নিয়ে আমরা বসেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা সমস্যাগুলো শোনার চেষ্টা করেছি যে, আসলে কিভাবে কোনটা আমরা কি করলে, কি রিফর্ম করলে বা আমরা কি ধরণের ইনিশিয়েটিভ নিলে আমরা এই খাতটিকে আরো উন্নততর একটা অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি। সেখান থেকে ভালো পরামর্শ এসেছে।

তারপরে আমাদের যে নীতিমালা তৈরি হয়েছে। সেখানে একটা কথা, গুরুত্বপূর্ণ দু'টি বিষয় ছিল, আমার মনে আছে ওই মিটিংয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে ছিল যে, মানুষের ট্রাস্টের অভাব। মানুষের কাছাকাছি এটাকে ওভাবে গ্রহণযোগ্য করা যাচ্ছে না। আরো একটা জিনিস যে, এখানে দক্ষ জনবল যারা মানুষের কাছে যাবে- সেলসম্যান। তারাও কিন্তু অতটা প্রশিক্ষিত না বা এদেরকে কিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়- সেগুলো মাথায় নিয়েই কিন্তু সরকার এ ধরণের সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছে। আমাদের যেটা ইন্স্যুরেন্স একাডেমি আছে- এখান যাতে আরো দক্ষ বীমা কর্মী তৈরি হয়, এ ধরণের কিন্তু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

সৈয়দ আশিক রহমান: ইন্স্যুরেন্স একাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি কোন কার্যকরীতা দেখাতে পারছে না। এমনকি আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, এটা একটা মৃত প্রতিষ্ঠান- একে উজ্জীবিত করতে হবে।

ফরহাদ হোসেন এমপি: প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে আমরা আউটপুট পাইনি।

সৈয়দ আশিক রহমান: তাহলে তাদের জবাবদিহীতার মধ্যে আনা যাচ্ছে না কেন?

ফরহাদ হোসেন এমপি: আমাদের যে বীমা কোম্পানিগুলো আছে তাদেরকেও কিন্তু এখানে ভালো রোল প্লে করতে হবে। তাদের তাগিদ অনুভব করতে হবে। যেহেতু এই সেক্টরটার একটা প্রসপেক্ট আছে। বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের দেশে। কারণ, ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ আমাদের বীমা কোম্পানিগুলোর আগামীতে যে একটা ভালো ভবিষ্যৎ আছে এখানে কিন্তু সন্দেহ নাই। মানুষের আস্থার মধ্যে আসা, এটা কিন্তু কোম্পানিগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে তাদের করা দরকার।

বীমা কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের যেভাবে এগিয়ে নেয়ার কথা ছিল সেটা তারা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, আপনারা যদি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কথা চিন্তা করেন; বীমা কোম্পানিগুলোর যে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখবেন- এত চমৎকার চমৎকার অ্যাডভার্টাইজমেন্ট। একটা বীমা কিনতে চায়তো মানুষ ওই অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখে; তার ফিউচার সেফটি, অনেক কথা চিন্তা করে, শিশুদের কথা চিন্তা করে। ওখানে এডুকেশন ইন্স্যুরেন্স আছে, হেলথ ইন্স্যুরেন্স আছে, বিভিন্ন ধরণের ইন্স্যুরেন্স। এতো চমতৎকার চমৎকার অ্যাডভার্টাইজমেন্ট। আমরা কি সেভাবে এগুতে পেরেছি আসলে?

সৈয়দ আশিক রহমান: আজ থেকে ৩০ বছর আগেও সুন্দর সুন্দর বীমার বিজ্ঞাপন দেখতাম। খুব টাচ করে যেতো। বিটিভি'তে আমরা দেখেছি এবং উজ্জীবিত হত। মানুষ ফিল করতো যে, হ্যাঁ- ওখানেই আমার স্থান। বিপদে-আপদে সব কিছুর জন্য আমার লাইফ ইন্স্যুরেন্স আছে, আমাদের বিভিন্ন বীমা আছে। এখন অনেকগুলো বেসরকার টেলিভিশন আছে, অনেকগুলো বীমা প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু ওরকম কিছু কিন্তু আর দেখছি না।

ফরহাদ হোসেন এমপি: আমার মনে হয় এরা কিন্তু সেলফ সেন্টারর্ড হয়ে গেছে। নতুন কোম্পানি তার নিজস্ব বন্ধু-বান্ধব আছে, তাদের মাঝে বীমাটা করছি। কিন্তু এই গন্ডির বাইরে যে যাওয়া উচিত, ব্যাপকতার মধ্যে যাওয়া উচিত- এটার তাগিদটা মনে হয় অতটা না। তারা একটা মিনিমাম লাভের কথা চিন্তা করছে, ওইটুকুতেই তারা সেটিসফাইড থাকছে। আসলে এ বিষয়গুলো মনে হয় আমাদের কালচারে কিছু সমস্যা আছে।

যারা এখানে উদ্যোক্তা রয়েছেন, বীমা কোম্পানিগুলো রয়েছে- তাদেরকে ভালো উদ্যোগী একটা ভূমিকা পালন করতে হবে। এটা আমাদের দেশে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই যে বীমা বিক্রি করার মতো বিশাল অংকের টাকা, এই টাকাটা যদি বিনিয়োগ করা যায়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে কত ক্ষেত্র রয়েছে। আপনি দেখেন যে, রেল সেক্টরেই যদি তারা বিনিয়োগ করে। বড় বড় সেক্টর রয়েছে। আপনি হেলথ সেক্টরেই যদি বিনিয়োগ করেন এই বীমার টাকাগুলো। তাহলে কিন্তু আমাদের এত সংখ্যক লোকের ভারতে যেতে হয় না, দেশের বাইরে যেতে হয় না। আমাদের কিন্তু কাজ করার, ইনভেস্টমেন্ট করার অনেক জায়গা আছে।