কৃষি বীমার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

এ কে এম এহসানুল হক:

বাংলাদেশ প্রধানত কৃষি ভিত্তিক দেশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ। দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ গ্রামে বাস করে। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠির জীবীকা অর্জনের প্রধান উপাদান হচ্ছে কৃষিকাজ। দেশের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিক কৃষি কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

কৃষক সম্প্রদায় প্রায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। কোন বছর খড়া, কোন বছর প্লাবন আবার কোন বছর ঝড় তুফানে তাদের কষ্টার্জিত উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়। বিধির বিধানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সম্ভব নয়। অসহায় কৃষককূল করুণ দৃষ্টিতে আকাশে ঘন কালো মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে এই বুঝি ঝড় তুফান শুরু হলো, যেমন ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ যেমন- ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডে সরকার কৃষি বীমার উপর বিশেষ গুরুত্ব এবং প্রাধান্য আরোপ করেছে।

কৃষক সম্প্রদায়কে জাতির প্রাণ বললে ভুল হবে না, কারণ কৃষকগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ক্ষেতে ফসল ফলায় এবং জাতির জন্য খাদ্য জোগাড় করে। অবিশ্বাস্য হলেও এ কথা সত্য যে কখনও কখনও কৃষকের চুলায় আগুন জ্বলে না এবং হাড়িতে ভাত চড়ে না। ভাগ্যে কি নিমর্ম পরিহাস। জাতির জন্য যারা খাদ্য যোগায় তারাই অভূক্ত থাকে। জাতির জন্য এটি একটি কলঙ্কজনক ব্যাপার।

কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য অনেক কিছু করার আছে। সরকারকে এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেবলমাত্র হাতে গোণা কিছু পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করা সরকারের জন্য যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে সরকারের দায় ছাড়া মনোভাব অত্যন্ত দুঃখজনক।

সরকারের পক্ষে এককভাবে কৃষি বীমা পরিচালনা করা ব্যয়বহুল হতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের শ্রীলঙ্কার মডেল অনুসরণ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সরকার আইন করে আর্থিক সংস্থা যেমন ব্যাঙ্ক এবং বীমা কোম্পানীর বাৎসরিক মুনাফার উপর নির্ধারিত করপোরেট ট্যাক্সের উপর অতিরিক্ত শতকরা ২ ভাগ লেভী বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এই অতিরিক্ত টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা না হয়ে সরাসরি কৃষি বীমা ফান্ডে জমা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের এই ফান্ড থেকে (প্রথম বছরেই ৫০০ কোটি টাকা লেভী অর্জন) শ্রীলঙ্কা সরকার কৃষকদের জন্য কৃষি বীমার ব্যবস্থা করেছে। এখন এই খাতে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পরে না।

বাংলাদেশ সরকারের অবিলম্বে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ কথা ভুললে চলবে না যে, কৃষক সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের একটি অন্যতম দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কোন প্রকার গড়িমসি বা খাম খেয়ালি করা দায়িত্ব এড়িয়ে চলার সমান। কৃষক জাতির প্রাণ। কৃষক না বাঁচলে জাতিও বাঁচবে না!

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।