আন্ডাররাইটিং বা অবলিখন চর্চা: কিছু প্রশ্ন

এ কে এম এহসানুল হক:

অগ্নি বীমায় সম্পত্তি বা মালামাল, যা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট ঋণের পরিবর্তে বন্ধক বা গচ্ছিত রাখা হয় (Property Under Hypothecation) সেক্ষেত্রে বিদেশে যেভাবে বীমা পলিসি ইস্যু করা হয় তা এখানে তুলে ধরা হল;

প্রথমত: বীমা গ্রহীতার নাম যেভাবে বর্ণিত থাকে-

Insured: Name of business organization and/or bank and/or financial institution for their respective rights and interests.

-Subject to Mortgage Clause.

দ্বিতীয়ত: বীমা পলিসিতে যখন একাধিক ধরণের মালামাল আবরিত করা হয় যেমন, স্টক, মেশিনারী, বিল্ডিং, আসবাবপত্র ইত্যাদি তখন প্রত্যেকটি মালামালের মূল্য পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয় এবং সকল মালামালের সর্বমোট মূল্য দেখানো হয়। যা সার্ভেয়ারের পক্ষে ক্ষতি নিরূপনের বেলায় সহজসাধ্য হতে পারে।

বাংলাদেশে যেভাবে পলিসি ইস্যু করা হয় তার নমুনা এখানে তুলে ধরা হল;

প্রথমত: বীমা গ্রহীতার নাম যেভাবে বর্ণিত থাকে-

Insured: Name of bank as mortgagee and name of business organization as mortgagor.

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পলিসিতে বন্ধকদাতা (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) এবং বন্ধক গ্রহীতা (ব্যাংক) তাদের নির্ধারিত স্বার্থ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশে অগ্নি বীমায় ঋণ দাতা ব্যাংককে প্রথম পক্ষ এবং ঋণ গ্রহীতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়।

অথচ বহির্বিশ্বে ঋণ গ্রহীতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই প্রথম পক্ষ এবং ঋণ দাতা ব্যাংককে দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ তারা বীমা গ্রাহীতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।

দ্বিতীয়ত: বীমা পলিসিতে যখন একাধিক ধরণের মালামাল আবরিত করা হয় যেমন, স্টক, মেশিনারী, বিল্ডিং, আসবাবপত্র ইত্যাদি তখন প্রত্যেকটি মালামালের মূল্য পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয় না বরং সকল মালামালের সর্বমোট মূল্য দেখানো হয়। যা সার্ভেয়ারের পক্ষে ক্ষতি নিরূপনের বেলায় কষ্টকর।

বাংলাদেশে যেভাবে ভিন্ন পদ্ধতিতে পলিসি ইস্যু করা হয় তা আন্তর্জাতিক অবলিখন চর্চার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটা বিতর্কের বিষয়।

অন্য একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন যা ক্ষতি নিরূপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

দাবির বেলায় কোন কোন ক্ষেত্রে সার্ভেয়ার ক্ষতিগ্রস্থ মালামালের মূল্য নিরূপনের বেলায় পলিসিতে বর্ণিত কর্তন (Policy deductable) প্রয়োগ করা ছাড়াও উদ্ধারকৃত মালামালের (Salvage) ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ করে থাকে।

অথচ আন্তর্জাতিক চর্চা হচ্ছে, এক্ষেত্রে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের উপর কর্তন (Policy deductable) প্রয়োগ করা হয়, উদ্ধারকৃত মালামালের উপর নয়।

এদিক থেকে বাংলাদেশে প্রচলিত চর্চা আপাতঃদৃষ্টিতে সঠিক প্রতীয়মান নাও হতে পারে।

সার্ভেয়ারের এই হিসাব পদ্ধতি সঠিক বা নিয়মতান্ত্রিক কিনা তা নিয়ে মত বিরোধ থাকতে পারে।

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো পরিস্কার করতে বীমা বিশেষজ্ঞদের মতামত বা ব্যাখ্যা সহায়তা করবে।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।