বীমাখাতে বেতন কাঠামো বৈষম্যের মাত্রা প্রসঙ্গে
কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই:
উপরোক্ত বিষয় নিয়ে আমার প্রথম লেখা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় গত ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ ব্যাপারে পুনরায় কলম ধরতে বাধ্য হচ্ছি। আশা করি লেখাটি এক ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করবে।
আমার জানামতে বেশ কিছু মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা গড়ে মাসিক বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা উপার্জন করে থাকে।
অন্যদিকে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পদস্থ কর্মচারীর বেতন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এই সমস্ত কর্মচারীর অধিকাংশই স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত। আবার কেউ কেউ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত।
এসব কর্মচারীর মাসিক বেতন এতটাই নিম্নমুখী যে এটা শুধু দুঃখজনকই নয় বরং অসম্মানজনকও। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীর খেয়ে পরে টিকে থাকাই এক প্রকার দুঃসাধ্য ব্যাপার।
উপরে বর্ণিত হিসাব অনুযায়ী একজন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মাসিক বেতন-ভাতা প্রায় ১৫০ জন কর্মচারীর মাসিক বেতনের সমান। অর্থাৎ আনুপাতিক হিসাবে যা গিয়ে দাঁড়ায় ১:১৫০।
অধিকাংশ বীমা কোম্পানি আর্থিকভাবে দুর্বল এবং অসুস্থতায় ভুগছে। বিশেষ করে লাইফ বীমা কোম্পানি আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে সময় মতো বীমা গ্রাহকের দাবি পরিশোধে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বা হিমসীম খাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময় বীমা আইনে নির্ধারিত ব্যবস্থাপনাখাতে অনুমোদিত টাকার অতিরিক্ত ব্যয় সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে একের অধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি বীমা আইন লঙ্ঘন করে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটি সামনে আসছে সেটি হচ্ছে- মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উচ্চ পদস্থ কর্মচারীর অস্বাভাবিক রকম উচ্চ মূল্যে নিয়োগ করার কি যুক্তি বা সার্থকতা থাকতে পারে?
আশা করি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং বীমাখাতে বিরাজমান বেতন কাঠামো সংক্রান্ত বৈষম্য দূরীকরণে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
লেখক: বীমা বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট ফ্যাকাল্টি (ডিপার্টমেন্ট অব ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স)।