ক্ষুদ্র বীমার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা

ভূমিকা:

কৃষিকাজে বিশেষ করে শস্য উৎপাদনের বেলায় ক্ষুদ্রবীমার ভূমিকা অপরিসীম। ক্ষুদ্রবীমা বলতে সাধারণত গতানুগতিক বীমাকে বোঝায় না। শস্য বীমা প্রধানত প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়-তুফান, শিলা বৃষ্টি, বন্যা, খরা ইত্যাদির বিপরীতে গ্রহণ করা হয়। এই বীমা কৃষিপ্রধান দেশ সমূহের জন্য অধিক প্রয়োজনীয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, লাউস ও কম্বোডিয়া ইত্যাদি প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ। এই সমস্ত দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। দৃষ্টান্তস্বরূপ বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান প্রায় এক তৃতীয়াংশ।

কৃষকশ্রেণির অধিকাংশই গ্রামে বাস করে। এদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে কৃষিকাজ। এই শ্রেণি সমাজের গরীবদের মধ্যে অন্যতম। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্যি যে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জাতির জন্য খাদ্য যোগাড় করে তারাই সময়ে সময়ে অভূক্ত থাকে এবং দরিদ্রতার চরম নিষ্পেসনে জর্জরিত।

ক্ষুদ্রবীমার প্রকারভেদ:

ক্ষুদ্র বীমা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যেমন শস্যবীমা (ধান, গম, যব, বার্লি, ভুট্টা) গৃহপালিত পশুপাখি (গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগি) মৎস্য বীমা ইত্যাদি। এছাড়াও কৃষকের জীবন বীমা, ঘর এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি যেমন; ট্রাক্টর, পানির পাম্প ইত্যাদি ক্ষুদ্রবীমার অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।

ক্ষুদ্রবীমায় সরকারের ভূমিকা:

গরীব দেশসমূহে সরকারি ভর্তুকি ছাড়া শস্য বীমা এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার। বীমা কোম্পানির জন্য এই বীমা মোটেও আকর্ষণীয় নয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যের বিস্তৃত ক্ষতির কারণে বছরের পর বছর বীমা কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাধারণত সরকারিভাবে শস্যবীমার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

গরীব চাষীদের পক্ষে শস্যবীমার জন্য পর্যাপ্ত প্রিমিয়াম বহন করা সম্ভব নয়। তাই সরকারকে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

শ্রীলঙ্কা মডেল:

বিগত কয়েকবছর ধরে শ্রীলঙ্কা সরকার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির বাৎসরিক মুনাফার উপর সাধারণ কর্পোরেট টেক্সের উপর অতিরিক্ত ২ শতাংশ (শস্য বীমার জন্য বরাদ্দকৃত) লেভী ধার্য করা হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা সরকার একটি বৃহৎ ফান্ড তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এই ফান্ড ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার কৃষক সমাজ শস্যবীমার উপকারিতা ও সুফল ভোগ করছে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন কৃষিপ্রধান দেশসমূহ শ্রীলঙ্কার এই অভিনব মডেল গ্রহণ করতে পারে এবং বাধ্যতামূলকভাবে শস্য বীমা চালু করতে পারে।

উপসংহার:

পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান আবহাওয়া/জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমান অবস্থা ক্রমশ অধিকতর অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই কারণে শস্য বীমার চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো হাত নেই। কিন্তু তাই বলে শস্য বীমা ছাড়া কৃষককূলকে সম্পূর্ণভাবে নিয়তির হাতে ছেড়ে দেয়া সরকারের পক্ষে এক প্রকার  দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।

এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে কৃষক সমাজকে চরম আর্থিক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়ে এবং অভূক্ত রেখে জাতির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়!

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই