কোভিড-১৯ এবং দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব
এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অবদান অসামান্য। দেশের জিডিপি’তে কৃষিখাতের অবদান প্রায় এক তৃতীয়াংশ। অথচ দেশের কৃষক শ্রেণী এক চরম আর্থিক অবস্থার মধ্যে কালাতিপাত করছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জার ব্যাপার যে, যারা জাতির জন্য খাদ্য যোগান দিচ্ছে তারাই অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছে।
বর্তমান বাংলাদেশের রাজস্বের সিংহভাগ আসে বিদেশে তৈরি পোষাক রপ্তানী এবং প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে প্রেরিত অর্থ থেকে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এই বিশাল উপার্জনের উপর এক প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। যার নেতিবাচক প্রবাব এখন থেকেই বেশ উপলব্ধ হচ্ছে। নিঃসন্দেহে করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক রকম ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি করবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে উপরে বর্ণিত বৃহৎ দু’টি উপার্জনের পথ ক্রমশই ক্ষীণ এবং সংকীর্ণ হয়ে আসছে।
এমতাবস্থায় কৃষিই বাংলাদেশের প্রধান ভরসা। তাই সরকারের উচিত হবে কৃষিকে অগ্রাধিকার প্রদান করা এবং কৃষিখাত এবং গরীব কৃষকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অতীতে কৃষিখাতের উন্নয়নের কথা ফলাও করে প্রচার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কৃষিখাতে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষক শ্রেণী দীর্ঘদিন অবহেলিত হয়ে আসছে। এই অবস্থার অবসান ঘটানো প্রয়োজন।
বর্তমান অবস্থার সার্বিক উন্নয়নে সরকারের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে কৃষিখাতের উন্নয়নের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন স্বল্পমূল্যে উন্নত মানের বীজ ও সার সরবরাহ, গতানুগতিক চাষাবাদ পদ্ধতি পরিহার করে আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করা। সর্বোপরি কৃষককুলকে আর্থিক সাহায্য এবং উৎসাহ প্রদানের জন্য বিনা সুদে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বন্যা, পঙ্গপাল ইত্যাদির হাত থেকে কৃষকের কষ্টের ফসল রক্ষা করার জন্য কৃষি বা শস্যবীমা চালু করা।
আশা করি দেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাতের মূল্যবান অবদানের কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে জাতীয় বাজেটে খাতটির উন্নয়নে বর্তমানের তুলনায় প্রয়োজন অনুযায়ী আরো অধিক টাকা বরাদ্দের ব্যাপারে সরকার অধিক মনোযোগী হবেন।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশ প্রধানত একটি কৃষি ভিত্তিক দেশ যার অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষির উপর নির্ভরশীল।
লেখক: জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটি (বিআইপিএস) ।