করোনায় বীমা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: বর্তমান করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে ভূপেন হাজারিকার সেই গানটা কেবল কানে বাজে। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা ….

আজ বীমা কর্মীদের সহানুভূতি, আর্থিক প্রণোদনা, সাময়িক সহযোগিতা করার জন্যও তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কোম্পানিগুলো যেন ১- ২ মাসে কেউ বা আংশিক কেউ বা পুরো বেতন দিয়ে হাপিয়ে উঠেছে অথচ এই বিশাল কর্মী বাহিনী কোম্পানির জন্য জীবন বাজী রেখে প্রিমিয়াম আয় করেছে কোম্পানিকে সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছে অথচ এই অনাকাংখিত দুর্যোগে তেমন গ্রহণযোগ্য সহযোগিতা কারো কাছে পাওয়া যাচ্ছে না।

আগে জানতাম জীবনের জন্য জীবিকা। করোনা ভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে জীবিকাই জীবন

কারো কাছে হাত পাতা যাবে না, ছোট হওয়া যাবে না, জীবন যুদ্ধে নিজেকেই পুরোপুরি নিয়োজিত করতে হবে তাই চাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা। কারণ জীবন আমার নিজের এবং পরিবার পরিজনের জন্য নিজেকে সুরক্ষা করেই আমাকে জীবিকা অর্জন করতে হবে বা অর্থ উপার্জন করতে হবে ।

কতগুলো অত্যন্ত সহজ টিপস বীমাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া হলো যা জীবিকা অর্জনে সহযোগী হতে পারে:

১. বাড়ী থেকে বের হবার সময় সৃষ্টিকর্তার বন্দনা করুন। যার যার ধর্মীয় রীতিগুলো মানুন। হাসি মুখে বাড়ি থেকে বের হউন। সবসময় মানসিকভাবে পজেটিভ থাকুন।

২. মাস্ক ব্যবহার করুন, তবে প্রতিটি মাস্কই ৬ ঘণ্টা ব্যবহার উপযোগী। ধুঁয়ে ফেলুন / বিকল্প মাস্ক ব্যবহার করুন। বাসায় বা অফিসে যখন একা থাকবেন তখন মাস্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

৩. বাহিরে ব্যবহারের জন্য আলাদা জুতা ব্যবহার করুন। এটাকে ঘরে আনবেন না।

৪. প্রয়োজনে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করুন।

৫. প্রয়োজন না হলে মোবাইল ফোন সাথে নিবেন না।নিলে ভালো করে স্যানিটাইজ করবেন। পারলে স্পিকার দিয়ে কথা বলুন ।

৬. ঘড়ি, ছাতা, আংটি, চেইন ইত্যাদি করোনাকালে অবশ্যই ব্যবহার করবেন না। আপনার মোবাইল ফোনেই সময় দেখতে পারবেন।

৭. মাথায় ক্যাপ, টুপি, স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

৮. নিজে হাঁচি কাশি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। সব সময় হাতের কাছে টিস্যু বা রুমাল রাখুন। অন্যদের এড়িয়ে চলুন।

৯. দুই ঘন্টা পরপর সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন । হাত, মুখ নাক থেকে দূরে রাখার অভ্যাস করুন। 

১০. বাহির থেকে বাসায় এসে সরাসরি গোসল খানায় ঢুকুন । গরম পানি সাবান দিয়ে গোসল ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

১১. আপনার ব্যবহৃত কাপড় প্রতিদিন আধ ঘণ্টা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সাবান, ডেটল ইত্যাদি দিয়ে প্রতিদিনের বাহিরে ব্যবহৃত কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলুন ।

১২. বাজার, গণ-পরিবহনসভা-সমিতি এড়িয়ে চলুন। কাউকে গায়ে ঘেষতে দিবেন না।

১৩. প্রচুর পরিমাণে আদা, রসুন, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, লেবু, লবণ পানি (গরম), ভিটামিন জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেতে হবে।

১৪. সকাল, বিকাল/ সন্ধ্যা, রাতে গরম পানি লবণ দিয়ে গার্গেল করতে হবে। রং চা, দুধ, গরম পানি  ঘন ঘন পান করতে হবে।

১৫. বাজারের ভাঁজা পোড়াহোটেলের খাবার, ফাষ্টফুড করোনাকালে পরিহার করতে হবে।

১৬. যেখানে সেখানে হেলান দেয়া, বসা, কনুই- ভর দেয়া ভুলে যেতে হবে।

১৭. বাইরে থেকে বা বাজারে পাওয়া টাকা আলাদা পলিথিনে আনুন, এনে পারলে ২-৩ দিন একটু খোলা হাওয়ায় ট্রেতে রেখে দিন ।

১৮. বাইরে খাবার পানি কারো সাথে শেয়ার করবেন না।

১৯. পকেটে সবসময় স্যানিটাইজার রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় হাতে ঘসুন।

২০.পাবলিক ওয়াশরুম যতটুকু পারেন এড়িয়ে চলুন।

সরকার যতই লকডাউন তুলে দিক, আপনার জীবনের জন্য আপনি ততোই কাঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি আগামী মাস অন্তত: মেনে চলুন। মনে রাখবেন আপনি আপনার প্রিয়জনের কাছে পুরো পৃথিবী কিন্তু আপনি আক্রান্ত হলে এই প্রিয়জনের কাউকে পাশে পাবেন না। কারণ তখন আপনার কারণে আপনার পরিবার, পাশের বাড়ীর পরিবার, পুরো এলাকা আক্রান্ত হবে। এখনো আমরা জানি না কে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত । কারন এখন আর এই মহামারীর কোন লক্ষণ বুঝা যায় না।

আসুন নিজে নিরাপদে থেকে অন্যকে নিরাপদে রাখতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড।