বীমা খাতের উন্নয়নে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্প এবং আমাদের প্রত্যাশা
শিপন ভূঁইয়া: বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের ১১৮.৫০ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক এর ৫১৩.৫০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩২ কোটি টাকার অর্থায়নে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিআইএসডিপি) বাস্তবায়নের কাজ চলছে, যা ২০২২ সালে শেষ হবে।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাল ১ জানুয়ারি ২০১৮ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ১০ এপ্রিল। আর সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ৪ জুলাই ২০১৮ সালে। প্রকল্পের Project Effectiveness ঘোষণা হয় ৮ জুলাই এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট গঠন হয় ২৭ আগস্ট ২০১৮ সালে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ৩০ অক্টোবর ২০১৮ সালে, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
উক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনকে পেশাদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রমসমূহ:
বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সামর্থ্য বৃদ্ধিকরণ সমূহের মধ্যে রয়েছে- বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কর্মপদ্ধতির সার্বিক অটোমেশন বাস্তবায়ন, ঝুঁকিভিত্তিক কার্যকর তত্ত্বাবধান পদ্ধতি প্রবর্তন, তথ্য প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণ, Mortality এবং Morbidity table প্রণয়ন, বীমা তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র বাস্তবায়ন, বীমা ব্যবস্থাপনা , নীতি ও প্রতিবিধি, তত্ত্বাবধান পদ্ধতি প্রভৃতি বিশেষায়িত ক্ষেত্রে সামর্থ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ, Insurance Core Principle (ICP) বাস্তবায়ন, বিদ্যমান আইনের আলোকে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের Governance framework ও সাংগঠনিক কাঠামো আধুনিকায়ন। গ্রাহকদের বীমা দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ ওয়ান-স্টপ সার্ভিস প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করা সহ ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফরম স্থাপনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
আইন কাঠামো শক্তিশালীকরণ ক্ষেত্রে IDRA এর বীমা আইন ২০১০ এর আওতায় ১৩টি বিধিমালা এবং ৩১টি প্রবিধানমালাসহ মোট ৪৪টি বিধিমালা ও প্রবিধানমালা প্রণয়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যার মধ্যে ৮টি বিধিমালা ও ১৪টি প্রবিধানমালা সম্পন্ন হয়েছে। এ বিধি ও প্রবিধানসমূহ সম্পন্ন করার মাধ্যমে আইনী কাঠামো শক্তিশালীকরণ করা হবে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির আধুনিকায়ন প্রকল্পে রয়েছে বীমা বিষয়ক আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন, বীমা একাডেমীর Course curriculums and manuals যুগোপযোগীকরণ, বীমা একাডেমির প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি ও তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো নির্মাণ।
বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্পে আমাদের প্রত্যাশাসমূহ:
উন্নত দেশের জিডিপি’তে বীমা খাতের অবদান যেখানে ৮-১০% সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ০.৫%। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে জিডিপিতে বীমার অবদান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীতে উন্নত দেশসমূহের ন্যায় বাংলাদেশের বীমা খাতের অবদান যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে সেভাবে আমাদেরও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বীমা পেশায় আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত পেশাদারিত্ব সৃষ্টি এবং পেশার সকল ক্ষেএে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণসহ উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসলে বীমা খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে।
সরকারের গৃহিত প্রকল্প সঠিক বাস্তবায়ন করে বীমা শিল্পের উন্নয়ন করতে হবে যা বীমা সেক্টরের সাথে জড়িতদের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। তাছাড়া সঠিক প্রকল্পের মাধ্যমে বীমা শিল্পের যে সকল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- বাংলাদেশের বীমা খাতের পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে।
- জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান বৃদ্ধি করতে হবে।
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র পূরণে ইতিবাচক ভূমিকা তৈরি করতে হবে।
- নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদারকি ও নজরদারী আরও কার্যকরী এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
- আইডিআরএ’র বীমা খাত নিয়ন্ত্রণে অধিকতর উপযোগী নীতি ও পদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে।
- বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আস্থা ও সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করতে হবে।
- জীবন বীমার পলিসি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাধ্যকতা সৃষ্ট করতে হবে।
- উন্নততর গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
- বীমা বিষয়ে আপামর জনগোষ্ঠীর আর্থিক চাহিদা ও আর্থিক পরিকল্পনা সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
- রাষ্ট্রায়ত্ব বীমা কর্পোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে হবে।
- নতুন বীমা পণ্য উদ্ভাবন ও বীমা সেবা বিতরণ এবং সম্পদ -দায় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে।
- পুনর্বীমা পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে হবে।
- বীমা শিল্পের প্রতিটি সেক্টরের জবাবদিহিতা ও বীমার প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
- অভিন্ন সাংগঠনিক কাঠামো ও আধুনিক বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে শিক্ষিত তরুনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কমিশন ভিত্তিক জনবলের স্তর পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
- ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সময়উপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধি ও কার্যক্রমের প্রচার বাড়াতে হবে।
- ইন্স্যুরেন্স বিষয়ের ওপর বিভিন্ন ডিগ্রীধারীদের পদোন্নতি ও আর্থিক প্রনোদনা দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে বীমার সম্ভাবনা’
লেখক: রিজিওনাল হেড, এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড।