বাংলাদেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত প্রয়োজন

শিপন ভূঁইয়া: সাড়ে সাত কো‌টি বাঙা‌লি সাড়ে সাত কো‌টি কম্বল। আমার কম্বল কোথায় ? এই প্রশ্ন ছি‌লে স্বাধীন বাংলা‌দে‌শের স্থপ‌তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমা‌নের। সেই সময় ছি‌লে কম্বল চু‌রি- এখন কা‌লের বিবর্তনে হ‌চ্ছে ব‌্যাংক, বীমা, শেয়ার বাজার থে‌কে অর্থ চু‌রি।

বঙ্গবন্ধু আজ জী‌বিত নেই। থাকলে অবশ‌্যই বীমার অর্থ চু‌রি ও অনিয়ম নি‌য়ে কথা বল‌তেন। ‌তি‌নি বল‌তেন আমার হা‌তে গড়া বাংলা‌দে‌শের বীমা শিল্প আজ ধ্বং‌সের প‌থে ! বর্তমা‌নে কে ঠেকাবে এই ধ্বংস ?  বঙ্গবন্ধুও জী‌বিত নেই । তাই  সৃ‌ষ্টিকর্তার বি‌শেষ হস্ত‌ক্ষেপ বাংলা‌দে‌শের বীমা শি‌ল্পের উন্নয়‌নে প্রয়োজন।

১৯৬০ সা‌লে ১ মার্চ  জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমান বীমা শি‌ল্পে যোগদান ক‌রেন। বঙ্গবন্ধু বীমা শিল্প‌কে ভা‌লোবাস‌তেন তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বীমা শিল্পকে জাতীয়করণ ক‌রে বীমা শি‌ল্পের উন্নয়‌নে বি‌ভিন্ন পদ‌ক্ষেপ গ্রহণ ক‌রেন।

বঙ্গবন্ধু ‌শেখ মু‌জিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তার বীমা অফি‌সে ব‌্যবহার করা চেয়ার টে‌বিল জা‌তীয় জাদু্ঘ‌রে বর্তমা‌নে সংর‌ক্ষিত র‌য়ে‌ছে। রাষ্ট্র সম্মান করলে তার ব‌ীমা অফি‌সে ব‌্যবহার করা চেয়ার টে‌বিলকে। কিন্তু  বীমা শি‌ল্পের উন্নয়ন নি‌য়ে তার যে স্বপ্ন ছি‌ল সেটা স্বাধীন বাংলা‌দে‌শে কে বাস্তবায়ন কর‌বে ?

ঘুমন্ত মানুষ‌কে জাগ্রত করা যায় কিন্তু যে না ঘু‌মি‌য়ে ঘু‌মের ভান ক‌রে তা‌কে তো কখ‌নো জাগা‌নো যায় না। বাংলা‌দে‌শের বীমা শি‌ল্পের করুন দশা, তা দে‌শের নী‌তি নির্ধার‌কেরা সবাই জা‌নে। কিন্তু তা‌দের ঘুম কখন ভাঙ‌বে তা কল্পনা করাও মুশ‌কিল। ‌

যে দেশ সাহস ক‌রে নিজ অর্থায়‌নে প্রায় ৩০ হাজার কো‌টি টাকা ব‌্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ কর‌তে পা‌রে সে দেশ সাহস ক‌রে বীমা শি‌ল্পের ধ্বং‌সের নায়ক‌দের শনাক্ত ক‌রে শায়েস্তা কর‌তে পা‌রে না!

বঙ্গবন্ধু- ১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎ‌ক্ষেপনের মাধ‌্যমে সব ধর‌নের তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব হ‌লেও কোন কোন বীমা প্রতিষ্ঠান মানু‌ষের বীমাকৃত টাকা ফেরৎ দি‌চ্ছে না তা রাষ্ট্র এবং জা‌তি জান‌তে পার‌ছে না। সুতরাং এসব বীমা দস‌্যু‌দের দমনে বাংলাদে‌শে  সৃ‌ষ্টিকর্তার বি‌শেষ রহমত প্রয়োজন।

দে‌শে বিদ‌্যমান ৩৩টি জীবন বীমা কোম্পা‌নি র‌য়ে‌ছে যার বে‌শির ভাগ রাজ‌নৈ‌তিক ছত্রছায়ায় বা বি‌শেষ সু‌বিধায় অনু‌মোদন হ‌য়ে‌ছে। এসব প্রতিষ্ঠা‌নের বে‌শিরভাগ মা‌লিক বীমা কোম্পা‌নি ক‌রে‌ছে মানুষের আমানত ফেরত না দি‌য়ে লু‌টেপু‌টে খাওয়ার জন‌্য।

বাংলা‌দে‌শে গ্রাহ‌কের টাকা ফেরত না দেয়ার অপরা‌ধে বা বীমা শি‌ল্পের অনিয়‌মের জন‌্য কাউকে এখনো রা‌ষ্ট্রের কা‌ছে জবা‌দি‌হিতা কর‌তে হ‌য়ে‌ছে এমন‌টি কিন্তু শোনা যায়‌নি। দেশ ও জা‌তি কখ‌নো এমন বীমা প্রতিষ্ঠা‌নের নামও জান‌তে প‌ার‌ছে না।

আপাতত ম‌নে হ‌চ্ছে এসব বীমা সন্ত্রা‌সীরা দেশ ও সরকা‌রের চে‌য়েও বে‌শি শ‌ক্তিশালী। সৃ‌ষ্টিকর্তার কা‌ছে ভুক্ত‌ভোগী গ্রাহক‌দের বিচার দেয়া ছাড়া আপাতত বে‌শি কিছু করার নেই।

বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি বল‌তে পার‌বে দে‌শে কয়‌টি  জীবন বীমা কোম্পা‌নি গ্রাহ‌কের ম‌্যাচু‌রি‌টি, মৃত‌্যুদাবির টাকা  দি‌চ্ছে না ? কত জন গ্রাহক টাকা ফের‌তের আশায় বছ‌রের পর বছর বীমা অফি‌সে ধর্ণা দি‌চ্ছে! স‌ঠিক সংখ‌্যা কা‌রো জানা নেই। জানা থাক‌লেও কিছু করার নেই।

এক‌টি প্রচ‌লিত কথা র‌য়ে‌ছে- বাংলা‌দে‌শের ফুটবল দল এবং বীমা শিল্প অনেক কিছু ক‌রেও কর্তৃপক্ষ আশার আলো দেখ‌ছে না। তা হ‌লে এসব প্রতিষ্ঠান কি পদ্মার পা‌ড়ের মত বিলীন হ‌য়ে যা‌বে। না‌কি বর্তমান বীমা শিল্প নি‌য়ে সরকারকে নতুন ক‌রে ভ‌াব‌তে হ‌বে।

বীমা শি‌ল্পের উন্নয়‌নের জন‌্য ৬৩২ কো‌টি ট‌াকার প্রকল্প হয়‌তো কাঠা‌মোগত কিছু উন্নয়ন হ‌বে। ত‌বে নৈ‌তিকতার উন্নয়ন কি ঘট‌বে! পূ‌র্বে কোন জা‌তি যখন অনেক পাপ কা‌জে লিপ্ত হয়ে‌ছে সৃ‌ষ্টিকর্তা সে জা‌তি‌কে ধ্বংস ক‌রে নতুন জা‌তি প্রেরণ ক‌রেছে।

বাংলা‌দে‌শের বীমা শিল্প এতই কলু‌ষিত হ‌য়ে‌ছে যে হয়‌তো সৃ‌ষ্টিকর্তা তা ধ্বংস ক‌রে নতুন বীমা শিল্প জা‌তি‌কে উপহার দি‌তে পা‌রেন। সোশ‌্যাল মি‌ডিয়াতে ভাইরাল হওয়া সেই সংলাপ‌টি বীমা শি‌ল্পের ক্ষেত্রে বর্তমা‌নে উপযুক্ত। সংলাপ‌টি হ‌ল-

'হে আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম'।

লেখক: রি‌জিওনাল হেড, এলআইসি বাংলা‌দেশ লি‌মি‌টেড।