বীমা খাতে অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা প্রসঙ্গে

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: আইন ভঙ্গ করার অভ্যাস মানুষের মধ্যে চিরন্তন। এই কারণে বিভিন্ন সময়ে দেশে দেশে নানা প্রকার আইনের প্রবর্তন করা হয়েছে। এই সমস্ত আইন এবং নিয়মাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং প্রয়োগ করার নিমিত্তে কোর্ট-কাচারী, হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বীমা খাতে অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১। বীমা কোম্পানি:

বীমা কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে দেশে প্রচলিত বীমা আইন ২০১০ অমান্য বা ভঙ্গ করে চলেছে। এদের অনেকেই সুস্পষ্ট অপরাধের সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বেও নানা কৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ- মনগড়া অডিট রিপোর্ট তৈরির মাধ্যমে সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া, কোম্পানি এবং বীমা গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদি।

গুরুতর অপরাধে অপরাধী বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করেছে বলে তেমন কোন প্রমাণ নাই।

২। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি:

বীমা খাতে বেশকিছু বীমা কোম্পানি রয়েছে যারা নানা প্রকার দুর্নীতিতে জড়িত থাকা সত্ত্বেও ‘এএএ’ ক্রেডিট রেটিং এর অধিকারী।

দৃষ্টান্তস্বরূপ- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

সংশ্লিষ্ট ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি কি এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্বহীনতা অস্বীকার করতে পারে?

৩। চার্টার্ড একাউন্টেন্সি ফার্ম:

চার্টার্ড একাউন্টেন্সি ফার্ম বীমা কোম্পানির সার্বিক ব্যবসা পরিচালনা এবং আর্থিক দিক সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বাৎসরিক প্রতিবেদন (অডিট রিপোর্ট) তৈরি করে থাকে। এটি অডিট ফার্মের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

অডিট ফার্মের এই সকল প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে জালিয়াতি এবং পেশাগত দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়।

৪। সার্ভে ফার্ম:

প্রি-ইন্সপেকশন প্রতিবেদন থেকে শুরু করে ক্ষতির কারণ বা পরিমাণ নির্ধারণ প্রতিবেদন সকল কিছুতেই সার্ভে ফার্মের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।

৫। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ):

২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র জন্ম। সরকারের এই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বীমা খাতে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দমন করা।

সুদীর্ঘ এক দশক অতিক্রান্ত হলেও বীমা কর্তৃপক্ষ তাদের উপর ন্যস্ত গুরুদায়িত্ব পালনে কতটা কৃতকার্য হয়েছে তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

উপরে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকলাপ দেখে মনে হয়, এরা যেন অবৈধভাবে টাকা রোজগারের এক জঘন্য প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।

বীমা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সততা, দক্ষতা এবং পেশাগত দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমেই কেবল এই খাতে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব হতে পারে।