বীমা দাবি সঠিক তদন্ত ও ক্ষতি নিরূপণ প্রসঙ্গে
এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই : মানুষ জন্মগতভাবে অপরাধ প্রবণ। সুযোগ পেলেই আইন ভঙ্গ করার সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে মানুষের মাঝে। গরু-ছাগলের মত মানুষকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষকে শৃংখলাবদ্ধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের বীমা খাত সম্পর্কে বাহিরে নানান ধরনের দুর্নাম রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দাবির আশ্রয় নিয়ে বীমাকারী এবং পুনর্বীমাকারীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া।
দাবির বেলায় বীমাকারী এবং জরিপকারীকে অত্যন্ত সতর্কতা বা বিচক্ষণতার সাথে অনুসন্ধান এবং দাবির টাকা নিরূপণ করতে হবে।
পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, কিছু কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা থেকে যতটা না মুনাফা অর্জন করে। তার চেয়ে অধিক পরিমানে টাকা ভুয়া দাবির মাধ্যমে অর্জন করে থাকে ।
কতিপয় বীমা জরিপকারীর সাথে কথা বলে মনে হয়েছে তারা বীমা দাবির অনুসন্ধান এবং ক্ষতি নিরূপণের ব্যপারে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম কানুন বা চর্চা মেনে চলেন না।
বাংলাদেশের বীমা খাতে পেশাগত জরিপকারী নাই বললেই চলে। বীমা জরিপ একটি জটিল এবং বিশেষায়িত কাজ। এটিকে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। কাজের মান আন্তর্জাতিক মানের কথা না হয় বাদই দিলাম, এমনকি বীমার জরিপকারীর কাজের মান সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহের তুলনায় নিম্নমানের, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
বীমা খাতের জন্য এটি একটি মারাত্মক সমস্যা, যার সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। বীমা জরিপকারীকে অবশ্যই পেশাগত যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বীমা খাত সম্বন্ধে যারা খবর রাখে তাদের অজানা নয় যে, ১৯৮৮ সালে একটি বিশেষ বীমা দাবিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে শীর্ষ স্থানে প্রতিষ্ঠিত পুনর্বীমা কোম্পানি ‘মিউনিক রিইন্স্যুরেন্স’ বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বীমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।
বীমা খাত বর্তমানে যেভাবে চলছে তাতে ভবিষ্যতে পৃথিবীর নামি দামি এবং শক্তিশালী পুনর্বীমা কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর সেটা বাংলাদেশের বীমা খাতের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনবে।