ফারইস্ট লাইফ কী বীমায় শেষ লাল কার্ড!
শিপন ভূঁইয়া: ফুটবলে হলুদ কার্ড হলো সতর্ক বার্তা। সর্তক করার পরও কেউ যখন নিয়ম ভঙ্গ করে তখন তাকে চূড়ান্তভাবে লাল কার্ড দিয়ে মাঠের বাহিরে বের করে দেয়া হয়। প্রকৃত খেলোয়ারের কাছে লাল কার্ড কখনো কাম্য নয়। একটি লাল কার্ড পুরো ম্যাচের জন্য সর্তক বার্তা বয়ে বেড়ায়। তা হলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি কি এদেশের বীমা জগতের শেষ লাল কার্ড?
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা গত ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা থেকে ২১শ’ কোটি টাকার বেশি লোপাট করেছে যা সম্প্রতি একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই অডিট করেন। নিরীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি গত আগস্ট মাসে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বোর্ডকে পুনর্গঠন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেন ১০ জন।
বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বকেয়া দাবির পরিমাণ ১৩শ’ কোটি টাকা, যা ৬ জানুয়ারি মুখ্য নির্বাহী কর্তৃক বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বীমা কোম্পানিটি বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানিয়েছিলো তাদের বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবির পরিমাণ ৭৮০ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ ৩ মাসে বকেয়া আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৫২০ কোটি। ক্রমান্বয়ে দায় বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু ফারইস্টের সম্পত্তি শূন্যের কোটায় যা বিএসইসি কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালকগণ গত ১৮ নভেম্বর এমন তথ্য দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
অপর দিকে ডেল্টা লাইফ ভ্যাটের ৩৫ কোটি টাকা ও ট্যাক্সের ৩৩০ কোটি টাকা সরকারকে পরিশোধ না করে লোপাট এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ও মৃত্যুদাবির ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ না করাসহ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে ৬৩৮ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। যা গত ১৭ অক্টোবর ২০২১ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অবগত করেন।
বীমা কোম্পানিগুলোর এই দুর্নীতির ধারাবাহিকতার জন্য বীমায় গ্রাহকের আস্থার সংকট চরম দৃশ্যমান। কষ্টে অর্জিত টাকা জেনেশুনে কেউ এই শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না। বর্তমানে কিছু কিছু জীবন বীমা কোম্পানি এমএলএম কোম্পানির মত মুখরোচক মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্ট করে বীমা পলিসি বিক্রয় করছে। কিছু কোম্পানি নতুন ব্যবসা সংগ্রহের জন্য নিয়ম বর্হিভূত টাকা অবাধে খরচ করছে যা ফিল্ড পর্যায়ে দৃশ্যমান। এসব কোম্পানির লাইফ ফান্ড কতটা শক্ত অবস্থানে তা যাচাই জরুরি। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এসব বীমা কোম্পানি দিন শেষে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মত বীমাশিল্পে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। সময় থাকতে বীমা শিল্পের উন্নয়নে ফারইস্টকে শেষ সর্তক বার্তা মনে করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সহ অর্থ মন্ত্রণালয়কে আরো কঠোর হওয়া জরুরি।