নানা ব্যাধিতে ভুগছে বীমা খাত

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: এ কথা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, সুদীর্ঘ ৫ দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বীমা খাত নানা প্রকার ব্যাধিতে বা সমস্যায় ভুগছে।

বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ'র একার পক্ষে এ খাতের সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। বীমা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের সাহায্য এবং সহযোগিতা ছাড়া বীমা খাতের বর্তমান নৈরাশ্যজনক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।

বীমা খাত যে সকল সমস্যায় ভুগছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সুশাসনের অভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতি ইত্যাদি।

প্রথমে অনিয়মের কথায় আসা যাক-

বীমা আইন ২০১০ এ নির্দিষ্টভাবে বীমা কোম্পানির কি করণীয় বা দায়িত্ব তা বলা আছে। তা সত্ত্বেও বীমা কোম্পানি জেনেশুনে প্রতিনিয়ত তাদের খেয়াল খুশিমতো বীমা আইন ভঙ্গ করে চলেছে এবং বীমা কর্তপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্যায় এবং অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে।

এই ব্যপারে বীমা কোম্পানির নীতি-নৈতিকতা সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে। যেখানে যেকোন মূল্যে মুনাফা অর্জন করাটাই মূখ্য উদ্দেশ্য, সেখানে ন্যায়-নীতির প্রশ্ন অবান্তর বৈকি।

বীমা কোম্পানির অপরাধ করার প্রবণতা সংবরণ সম্ভব কেবল বীমা আইন যথাযথ পালনের মাধ্যমে এবং এর মাধ্যমেই বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পাবে। যত দিন পর্যন্ত না সেটা হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত বীমা খতে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

দক্ষ জনবলের অভাব বীমা খাতে উন্নতির পথে এক বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বীমা খাতে বেশ কিছু বীমা শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল রয়েছে। তবে তাদের বেশির ভাগই বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বীমা খাতের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ব্যাপারটি বিশেষভাবে বিবেচনা করা দরকার।

বীমা খাতের আরেকটি মূল সমস্যা হচ্ছে বীমা সার্ভেয়ারদের পেশাগত দক্ষতা, যোগ্যতা এবং উপযুক্ত জনবলের অভাব। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া যায়।

অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হয় বীমা আইনের ফাঁক-ফোকর থাকার কারণে বীমা কোম্পানি নানা প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি করতে উৎসাহ বোধ করে থাকে ।

বীমা খাতের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বীমা আইনের সংশোধন এবং প্রয়োজনীয় নতুন আইন পাশ করতে হবে।

সর্বোপরি বীমা কর্তৃপক্ষকে বীমা আইন ভঙ্গকারী এবং দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে এবং আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আশা করি বীমা কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব পালনে সচেতন ও সচেষ্ট হবে।