জীবন বীমায় বিনিয়োগে আর্থিক নিরাপত্তা, সঞ্চয় ও কর রেয়াত সুবিধা
এস এম জিয়াউল হক, এফএলএমআই: কর রেয়াত হল সরকার প্রদত্ত আয়করের ওপর একটি সুবিধা। বোনাস এবং অন্যান্য সুবিধাসহ এক বছরে মোট বেতনের ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বার্ষিক কর আসবে এবং বছর শেষে আপনাকে অবশ্যই ট্যাক্স ফাইল জমা করতে হবে।
কিন্তু ধরুন আপনি আপনার মোট বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কোথাও বিনিয়োগ করেন বা ডিপিএস বা এই জাতীয় কোন সেভিংস একাউন্টে সঞ্চয় করেন। সেক্ষেত্রে, আপনাকে সেই বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর রেয়াত দেয়া হবে।
আপনি যদি কর রেয়াত সুবিধা পেতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বেতন, বোনাস এবং অন্যান্য সুবিধাসহ বার্ষিক উপার্জনের পরিমাণ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কর রেয়াতের জন্য আপনি কতটুকু বিনিয়োগ করতে পারবেন?
প্রথমত, কর রেয়াতের সুবিধা ছিল মোট আয়ের ৩০% বিনিয়োগ যোগ্য। কিন্তু এটি বাতিল করা হয়েছে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫% এ হ্রাস করা হয়েছে।
বর্তমান আয়কর বিধি অনুসারে, মোট আয়ের ২০% কর রেয়াত সুবিধা পাওয়ার জন্য বিনিয়োগ করার অনুমতি দেয়া হয়। তার মানে আপনি আপনার মোট আয়ের ২০% বিনিয়োগ করতে পারেন এবং ১৫% কর রেয়াত সুবিধা পেতে পারেন।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে- আপনি কোথায় মোট আয়ের ২০% বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং ১৫% কর রেয়াত সুবিধা পেতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনার বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রে হচ্ছে- জীবন বীমা পলিসি ক্রয় এবং যেকোন তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ।
আসুন জেনে নেই জীবন বীমা পলিসি ক্রয় এবং যেকোন তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগের তুলনামূলক সুবিধা-
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান:
মাসিক ৫০০০ টাকা X ১২ = ৬০,০০০ টাকা
জীবন বীমা কোম্পানি:
মাসিক ৫০০০ টাকা X ১২ = ৬০,০০০ টাকা
ত্রৈমাসিক ১৫,০০০ টাকা X ৪ = ৬০,০০০ টাকা
অর্ধবার্ষিক ৩০,০০০ টাকা X ২ = ৬০,০০০ টাকা
অথবা, বার্ষিক ৬০,০০০ টাকা
জীবন বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে মাসিক কিস্তির পাশাপাশি ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক এবং বার্ষিক প্রিমিয়াম প্রদানের সুযোগ রয়েছে।
আবার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে যে ব্যক্তি বিনিয়োগ করে তার জন্য আলাদাভাবে জীবনের ঝুঁকি প্রদান করা হয় না। কিন্তু জীবন বীমা কোম্পানিতে কর রেয়াতের পাশাপাশি বীমাকৃত ব্যক্তির জীবনের উপর ঝুঁকি প্রদান করা হয়।
বীমা পলিসির মেয়াদের মধ্যে, বীমা গ্রাহকের অনাকাঙ্খিত মৃত্যু হলে তার নমিনী বা মনোনীতককে অর্জিত মুনাফাসহ বীমা অংকের পুরো অর্থ প্রদান করা হবে।
যদি বীমা গ্রাহকের বয়স ৩০ বছর হয় এবং তিনি ১২ বছর মেয়াদি একটি তিন কিস্তি বীমা পলিসি গ্রহণ করে থাকেন তাহলে বার্ষিক ৬০,০০০ টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করলে তিনি ৬,২৫,০০০ টাকা বীমা অংকের ঝুঁকির নিশ্চয়তা পাবেন।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ৬০,০০০ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু জীবন বীমা কোম্পানিতে আপনার মোট আয়ের ২০% বিনিয়োগ করতে পারেন এবং ১৫% কর রেয়াত সুবিধা পেতে পারেন।
অর্থাৎ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কেউ বার্ষিক ২,০০,০০০ (দুই লাখ) টাকা বিনিয়োগ করলেও ৬০,০০০ টাকার উপর কর রেয়াত পাবে অর্থাৎ ৯,০০০ টাকার বেশি কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু কেউ যদি জীবন বীমা কোম্পানিতে ২,০০,০০০ (দুই লাখ) টাকা বিনিয়োগ করে তাহলে ৩০,০০০ টাকা কর রেয়াত পাওয়ার সুয়োগ রয়েছে।
জীবন বীমা কোম্পানিতে কর রেয়াতের পাশাপাশি বীমাকৃত ব্যক্তির জীবনের উপর ঝুঁকি প্রদান করা হয়।
যদি বীমা গ্রাহকের বয়স ৩০ বছর হয় এবং তিনি ১৫ বছর মেয়াদি একটি মানি ব্যাক প্ল্যান বীমা পলিসি গ্রহণ করে থাকেন তাহলে বার্ষিক ২,০০,০০০ (দুই লাখ) টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করলে তিনি ৫১,০০,০০০ (একান্ন লাখ) টাকা বীমা অংকের ঝুঁকির নিশ্চয়তা পাবেন।
অর্থাৎ বীমা পলিসির মেয়াদের মধ্যে যেকোন সময় বীমাগ্রহীতার অকালমৃত্যু হলে তার নমিনীকে বীমা অংকের পুরো অর্থ প্রদান করা হবে।
আমরা জানি, স্বাভাবিক এবং ৬৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের জন্য ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত; ৩,০০,০০০ উপরে পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ৫% হারে, পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ১০% হারে, পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ১৫% হারে, পরবর্তী ৫,০০,০০০ এর উপর ২০% আয়কর দিতে হবে এবং অতিরিক্ত আয়ের উপর তাকে ২৫% আয়কর দিতে হবে।
সাধারণ মহিলা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়করমুক্ত; ৩,৫০,০০০ উপরে পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ৫% হারে, পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ১০% হারে, পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ১৫% হারে, পরবর্তী ৫,০০,০০০ এর উপর ২০% আয়কর দিতে হবে এবং অতিরিক্ত আয়ের উপর তাকে ২৫% আয়কর দিতে হবে।
তাই আপনার আয়করের বোঝা কমাতে ৩০ জুন ২০২৩ এর মধ্যে জীবন বীমা পলিসিতে বিনিয়োগ করে আয়কর রেয়াত নিশ্চিত করুন।