সেকেন্ডারি লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে এশীয় বিনিয়োগকারীদের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এশিয়ার বিনিয়োগ বাজারে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলছে সেকেন্ডারি লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা লাইফ সেটেলমেন্ট খাত। প্রচলিত শেয়ারবাজার, ঋণপত্র ও রিয়েল এস্টেট থেকে আলাদা স্থিতিশীল আয়ের উৎস খুঁজতে গিয়ে ক্রমেই এই খাতের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষত সিঙ্গাপুর, হংকং এসএআর এবং জাপানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ফ্যামিলি অফিসগুলো তাদের পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময় করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি নগদ প্রবাহ সুরক্ষিত করতে এই সম্পদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
লাইফ সেটেলমেন্ট মূলত বিদ্যমান জীবন বীমা পলিসি কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করার প্রক্রিয়া। এতে পলিসি হোল্ডার এককালীন নগদ অর্থ পান, আর ক্রেতা ভবিষ্যতে মৃত্যুদাবি সুবিধা গ্রহণের অধিকারী হন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এই বাজার বহু বছর ধরে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও এশিয়ায় এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। তবু সাম্প্রতিক প্রবণতা দেখাচ্ছে, আঞ্চলিক বিনিয়োগকারীরা বিকল্প আয়ের নিশ্চয়তা হিসেবে এটিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন।
বিশ্বব্যাপী এই খাতের সম্ভাবনা বিপুল। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের জীবন বীমা পলিসি ল্যাপস হয়ে যায়। অনেক সময় পলিসি হোল্ডার বিকল্প পথ সম্পর্কে জানেন না, ফলে কার্যকর সম্পদটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। যদি এই নীতিগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি হয়, তবে বিনিয়োগকারীরা টেকসই রিটার্নের সুযোগ পাবেন এবং একই সঙ্গে পলিসি হোল্ডাররা ন্যায্য আর্থিক সুরাহা পাবেন।
এশিয়ায় আগ্রহ বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বিনিয়োগকারীরা মার্কিন বীমা কোম্পানির উচ্চ রেটিং পাওয়া সম্পদে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতায় ইকুইটি ও ক্রেডিট মার্কেটে নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প আয়ের উৎস খোঁজা জরুরি হয়ে পড়েছে। তৃতীয়ত, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সম্পদের তারল্য বাড়াতে লাইফ সেটেলমেন্ট একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
তবে এই খাত সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রক কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় নীতি-অসঙ্গতি, আইনি জটিলতা ও নৈতিক বিতর্কের প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, শক্তিশালী নিয়ম-কানুন, স্বচ্ছতা এবং গ্রাহক সুরক্ষার নিশ্চয়তা ছাড়া বাজারের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সেকেন্ডারি লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাত এশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য এক নবদিগন্ত উন্মোচন করছে। সঠিক কৌশল, নিয়ন্ত্রক সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে এটি ভবিষ্যতে অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ খাতে পরিণত হতে পারে। (সংবাদ সূত্র: ইন্স্যুরেন্স এশিয়া)