ওবামাকেয়ারে আস্থা কমছে, নবায়ন হার নামল ১৯.৯ শতাংশে
.jpg)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ), যা ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত, তার আওতায় স্বাস্থ্য বীমা নিবন্ধন ২০২৬ সালের জন্য কমতে শুরু করেছে, যা দেশটির স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেইড সার্ভিসেসের প্রশাসক মেহমেত ওজ জানিয়েছেন, আগামী বছরের জন্য ওবামাকেয়ারের আওতায় নিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় ১৫.৬ মিলিয়নে, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ মিলিয়ন। এই পতনকে স্বাস্থ্যনীতি বিশেষজ্ঞরা মহামারিকালীন বাড়তি ভর্তুকির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে দেখছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় স্বাস্থ্য বীমাকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে যে অতিরিক্ত ফেডারেল ভর্তুকি চালু করা হয়েছিল, তার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। এর ফল হিসেবে ২০২৬ সাল থেকে ওবামাকেয়ারের আওতায় থাকা ভর্তুকিপ্রাপ্ত বীমা পরিকল্পনার প্রিমিয়াম দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারি প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, গড় বার্ষিক প্রিমিয়াম ২০২৫ সালের প্রায় ৮৮৮ ডলার থেকে বেড়ে ২০২৬ সালে প্রায় ১ হাজার ৯০৪ ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা কার্যত দ্বিগুণেরও বেশি। এই ব্যয় বৃদ্ধি নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর জন্য গুরুতর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মেহমেত ওজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বক্তব্যে দাবি করেছেন, জাল ও অনিয়মিত নিবন্ধন রোধে সিএমএস-এর নেয়া পদক্ষেপের কারণেও মোট নিবন্ধনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে এই ব্যাখ্যার পক্ষে নতুন কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। চলতি মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ সিএমএস প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে মাত্র ১৯.৯ শতাংশ গ্রাহক তাদের স্বাস্থ্য বীমা নবায়ন করেছেন, যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল প্রায় ২০.৫ শতাংশ, যা নবায়ন প্রবণতার দুর্বলতা নির্দেশ করে।
ভর্তুকি শেষ হলে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে একটি সাম্প্রতিক জরিপে। স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা কেএফএফ পরিচালিত ওই জরিপে দেখা গেছে, ওবামাকেয়ারের আওতাভুক্ত প্রায় ২৫ শতাংশ গ্রাহক বলেছেন, প্রিমিয়াম যদি প্রত্যাশামতো দ্বিগুণ হয়, তাহলে তারা ২০২৬ সালে স্বাস্থ্য বীমা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, ভর্তুকি নবায়ন না হলে প্রায় ২৪ মিলিয়ন আমেরিকান হঠাৎ করেই উল্লেখযোগ্য খরচ বৃদ্ধির মুখে পড়তে পারেন এবং অনেকেই বীমার বাইরে চলে যেতে পারেন।
২০২৬ সালের জন্য ওবামাকেয়ারের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে নভেম্বর মাসে এবং চলবে জানুয়ারি ১৫ পর্যন্ত। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জানুয়ারির শুরুতে নিবন্ধনের হার সাধারণত বাড়ে এবং গত কয়েক বছরে নিবন্ধনের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষ করে ২০২১ সালে যেখানে নিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ মিলিয়ন, সেখানে মহামারিকালীন বাড়তি ভর্তুকির কারণে পরবর্তী বছরগুলোতে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছায়। তবে এবার ভর্তুকি না থাকায় বীমা কোম্পানি ও অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের কর্মকর্তারা ২০২৬ সালে মোট নিবন্ধনে উল্লেখযোগ্য পতনের আশঙ্কা করছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ভর্তুকির ভবিষ্যৎ ও বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রিপাবলিকানরা ওবামাকেয়ারের বিকল্প আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও, এখনো এমন কোনো পরিকল্পনা সামনে আসেনি যা ভোক্তাদের সুরক্ষা বজায় রেখে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
ফেডারেল ভর্তুকির মেয়াদ শেষ হওয়া, দ্রুত বাড়তে থাকা প্রিমিয়ামের আশঙ্কা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু ওবামাকেয়ারের নিবন্ধন কমাচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতে কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং আস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। (সংবাদ সূত্র: রয়টার্স)




