লেনদেন হয়নি আজ, সর্বশেষ লেনদেন ৬৫ টাকা

৪ বছর ধরে লভ্যাংশ নেই প্রগ্রেসিভ লাইফে

আরেফিন ফয়সাল:

সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন লভ্যাংশ দেয়নি ঢাকা স্টক এক্সেঞ্জের তালিকাভুক্ত বীমাখাতের কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ৩১ ডিসেম্বরকে সমাপ্ত হিসাব বছর ধরে সর্বশেষ ২০১২ সালে ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ আর্থবছর শেষ হলেও শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ ফেরত দেয়ার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কোম্পানিটি।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি আয়, চলমান ব্যবসা, শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ এমনকি বছর ভিত্তিক কোম্পানিটির কোন আর্থিক বিবরণী নেই ডিএসই’তে। কোম্পানিটিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের টাকা দিয়ে কি করা হচ্ছে, কোথায়, কিভাবে টাকাগুলো আছে, কিভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তার কোন বার্ষিক তথ্য দেয়ানি ডিএসই’তে।

প্রতি কার্যদিবসে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোতে যেখানে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয় এবং প্রায় প্রতিটি কোম্পানিতে ১ থেকে ৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয় সেখানে আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোন লেনদেন হয়নি প্রগ্রেসিভ লাইফের। গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসের দু'দিনই কোন লেনদেন হয়নি কোম্পানিটির। তাছাড়া তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল মাত্র একটি শেয়ার, যার মূল্য ৬৫ টাকা ৫০ পয়সা।

শেয়ার দর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত এক মাসের লেনদেনে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম কমেছে ১৪ বার এবং বেড়েছে ৬ বার। সর্বনিম্ন শেয়ার দর হয়েছিল ৬২ টাকা ৩ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ৬৬ টাকা ২৪ পয়সা। গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল সর্বনিম্ন ৪৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৯ টাকা ১ পয়সা।

কোম্পানিটির লেনদেনে এই নিম্নমুখীর প্রবণতার কারণ সম্পর্কে পুঁজিবাজারে কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত কোম্পানির প্রতি আস্থাহীনতাই শেয়ার লেনদেনে এই বেহাল অবস্থা। ডিএসই'র একজন নিয়মিত শেয়ারহোল্ডার রেদওয়ানুল হক ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, এখন প্রায় প্রতিটি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ফেরত দিচ্ছে। যে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা দিচ্ছে সেই কোম্পানিগুলোর প্রতি সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। তিনি আরো বলেন, প্রগ্রেসিভ লইফ গত কয়েক বছর ধরে লভ্যাংশ দিচ্ছে না এবং বছর ভিত্তিক কোম্পানিটির কোন আর্থিক বিবরণী দেয়া নেই ডিএসই’তে। তাই স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করছে।

কোম্পানিটির বছর ভিত্তিক আয়ের হিসাবে দেখা যায়, ২০০৮ সালে মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৮৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে ব্যবসার পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। ২০১০ সালে ছিল ১৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২০১১ সালে ছিল ১৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এরপর থেকে কোম্পানির বার্ষিক কোন তথ্য নেই ডিএসইতে।

ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, ২০০৮ সালে কোম্পানিটি খরচ করেছিল মোট আয়ের শতকরা ৫১ ভাগ। এরমধ্যে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ ৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য বাবদ খরচ বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ খরচ ৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য বাবদ খরচ প্রায় ৩ কোটি টাকা। ২০১০ সালে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ খরচের পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য বাবদ খরচ বাবদ ছিল ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১১ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও অন্যান্য বাবদ খরচ বাবদ ব্যয় ছিল প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এরপর ২০১২ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত কোম্পানিটির আয়-ব্যায়ের কোন তথ্য নেই ডিএসইতে।

ডিএসই'র তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বরকে সমাপ্ত বছর ধরে ২০০৮ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার প্রতি ১০ টাকা ৮৫ পয়সা করে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এরপর ২০০৯ সালে বোনাস লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ার প্রতি ১২ টাকা ৩৬ পয়সা  করে  ১০ শতাংশ। ২০১০ শেয়ার প্রতি ১৯ টাকা ৫৮ পয়সা করে  ১২ শতাংশ। ২০১১ সালে ১৮ শতাংশ এবং ২০১২ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল ১৮ শতাংশ। এরপর চার বছর চলে গেলেও বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের বছর ভিত্তিক তথ্য এবং লভ্যাংশ ফেরত দেয়ার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি কোম্পানির পক্ষ থেকে ।

৪টি অর্থ বছর শেষ হলেও বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের লভ্যাংশ কেন দেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে কোম্পানির শেয়ার বাজারের দায়িত্বে থাকা বুলবুল চৌধুরী ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে জানান, পরিচালক পরিষদের কয়েকজনের মধ্যে একাধিক মামলা থাকায় তারা মূলত বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ ফেরত দিতে পারছে না।

পরিচালকদের পারষ্পারিক দ্বন্দ্বের কারণে শেয়ারহোল্ডারদের কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং কবে নাগাদ তাদের লভ্যাংশ ফেরত দেয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিচালক পর্যায়ে একাধিক মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বে লভ্যাংশ দেবার কোন সুযোগ নেই এবং কবে নাগাদ মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে তাও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে বছর শেষে কোম্পানিটির মোট স্থিতি মূলধন দাঁড়ায় ১৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে মোট স্থিতি মূলধন দাঁড়ায় ২০৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০১০ সালে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং ২০১১ সালে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির ২০০৮ সালে লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ১৪১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১০ সালে ছিল ২০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এবং ২০১১ সালে ছিল ২৮৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।

২০০৮ সালে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার যার বাজার মূল্য ছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ লাখ ৫০ হাজার এবং বাজার মূল্য ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১০ সালে এই সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না এবং ২০১১ সালে শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯২ লাখ ৪০ হাজার এবং বাজার মূল্য ৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৬টি। এরমধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার।