তামাদি পলিসি পুনর্বহালে করণীয়

তামাদি পলিসি: জীবন বীমার পলিসি একটি মূল্যবান নগদ সম্পত্তি। আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পলিসি গ্রহণ করা হয়। তবে সময়মতো প্রিমিয়াম জমা না দেয়ায় অনেক পলিসি ল্যাপস বা তামাদি হয়ে যায়। বীমা গ্রহীতা পলিসির অনুকুলে প্রিমিয়াম কিস্তির অর্থ প্রদানের নির্দিষ্ট তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পরও অনুগ্রহকাল হিসেবে ৩০ দিন অতিরিক্ত সময় পেয়ে থাকেন। এই অনুগ্রহকালের মধ্যে যদি বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হয়, তাহলেও বীমাটি কার্যকর বলে গণ্য হবে।

তবে অনুগ্রহকালের মধ্যে কিস্তির অর্থ জমা দেওয়া না হলে ‘বিচ্যুতি’ ঘটেছে বলে বিবেচিত হবে। দু’বছর নিয়মিত প্রিমিয়াম দেয়ার পূর্বে অনুরূপ ‘বিচ্যুতি’ ঘটলে সংশ্লিষ্ট তারিখ হতে বীমা পলিসিটি অচল ও তামাদি হয়েছে বলে গণ্য হবে। পলিসি তামাদি অবস্থায় বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে তার মনোনীতক/মনোনীতকগণ অথবা ওয়ারিশগণ বীমার প্রদেয় সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।

পলিসি তামাদি হওয়ার কারণ: বিভিন্ন কারণে পলিসি তামাদি হতে পারে। যেমন- বীমা গ্রহীতার সামর্থের চেয়ে কম বা বেশি টাকার বীমা দেয়া। অর্থাৎ ১০,০০০ টাকা প্রিমিয়াম দিতে যিনি অক্ষম তাকে ২০,০০০ হাজার টাকার বীমা দিলে প্রথম ২/১টি প্রিমিয়াম দিতে পারলেও পরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার যার সামর্থ আছে ৫০,০০০ টাকা প্রিমিয়াম দেয়ার তাকে ১০,০০০ টাকার বীমা দিলে গ্রাহক মন খারাপ করে ওই পলিসি নাও চালাতে পারেন।

আর্থিক বিপর্যয়ের ফলেও পলিসি তামাদি হতে পারে। যেমন-ছেলে-মেয়ের বিবাহ প্রদান, নতুন ব্যবসায় লোকসান, চাকরি হারানো ইত্যাদি কারণে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এজেন্ট জোর করে সম্ভাব্য গ্রাহককে বীমা পলিসি দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে গ্রাহক ওই পলিসি আর চালায় না ফলে তামাদি হয়ে যায়।এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম আত্মসাতের কারণেও পলিসি তামাদি হতে পারে।

অনেক সময় দীর্ঘ মেয়াদী বীমায় ত্রৈমাসিক বা ষান্মাষিক প্রিমিয়াম দিতে দিতে এক সময় অধৈর্য হয়ে প্রিমিয়াম দেয় না, তখন পলিসি তামাদি হয়ে যায়।আবার বিক্রয় পরবর্তী গ্রাহক সেবার অভাবেও পলিসি তামাদি হতে পারে। যেমন নোটিশ না দিলে অনেক সময় গ্রাহক ভুলে গিয়ে প্রিমিয়াম জমা নাও দিতে পারেন। গ্রাহকের কাছে বীমার প্রয়োজন বা গুরুত্ব না থাকলেও পলিসি তামাদি হতে পারে।

তামাদি পলিসি পুনর্বহালে করণীয়: তামাদি পলিসি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি কোম্পানি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া পলিসি তামাদির মেয়াদের ওপরও বিষয়গুলো নির্ভর করে। সাধারণত দুইভাবে তামাদি পলিসি পুনরুদ্ধার করা যায়। এক. সাধারণ পুনর্বহাল ও দুই. বিশেষ পুনর্বহাল। বীমা যোগ্যতার সন্তোষজনক প্রমাণ দাখিল এবং সকল বকেয়া প্রিমিয়াম কিস্তিসহ অন্যান্য পাওনা (যদি থাকে) পরিশোধ করে প্রিমিয়াম প্রদান বন্ধের তারিখ হতে ৫ বছরের মধ্যে বীমা পলিসিটি সাধারণ পুনর্বহাল করা যায়।

আর সমর্পন মূল্য অর্জনের পূর্বে যদি বীমা পলিসি তামাদি হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রদান বন্ধের তারিখ হতে ন্যূনতম ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে বিশেষ পুনর্বহাল পদ্ধতি গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে। এ জন্য বীমাযোগ্যতার সন্তোষজনক প্রমাণ বীমা গ্রহীতার নিজ ব্যয়ে কোম্পানির নিকট প্রদান করতে হবে। এ ব্যবস্থায় বীমার কার্যকরিতা শুরু দিন এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির সময় এগিয়ে দিয়ে যথাযথ পুনর্বহাল মাশুল ও বীমা গ্রহীতার বর্ধিত বয়সের জন্য প্রযোজ্য প্রিমিয়াম, কিস্তির বাড়তি অর্থ প্রদান করে বীমা পুনর্বহাল করা যাবে। তবে বীমা গ্রহীতা তার পলিসির মেয়াদকালে শুধুমাত্র একবারই এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।

বিশেষ পুনর্বহাল পদ্ধতিতে নবায়নে যা প্রয়োজন: বিশেষ পুনর্বহাল পদ্ধতিতে নবায়ন করতে হলে কিছু চাহিদার প্রয়োজন। সেগুলো হলো- গ্রাহক কর্তৃক প্রস্তাবপত্রের স্বাক্ষরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বাক্ষরসত আবেদন পাঠাতে হবে। মূল বীমা দলিল ও প্রিমিয়াম জমার বিবরণী বই পাঠাতে হবে। সকল পিআর/ডি অ্যান্ড আর কপি (গ্রাহক কপি) পাঠাতে হবে। নবায়ন ফি বাবদ ২০ টাকার ব্যাংক জমা স্লিপ/এমআর পাঠাতে হবে। অবিরাম ভাল স্বাস্থ্যের ঘোষণাপত্র (DGH) যথাযথভাবে পূরণ ও স্বাক্ষর করে পাঠাতে হবে। বয়স প্রমাণ না করা থাকলে বীমা গ্রহীতার বয়স প্রমাণের জন্য যথাযথ সন্তোষজনক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। সার্বজনিন বীমার কেন্দ্রীয় কার্যালয় হতে প্রেরিতচাহিদা অনুযায়ী প্রদেয় একটি মাসিক প্রিমিয়াম কিস্তির পিআর কেটে এর গ্রাহক কপি পাঠাতে হবে।

যা স্মরণে রাখা প্রয়োজন: পলিসি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন। যখন তামাদি পলিসি পুনরুদ্ধার করা হয় তখন কোম্পানি নতুন চুক্তি করে। অতিরিক্ত কালক্ষেপণ করলে পলিসি পুনরুদ্ধারে জটিলতা বাড়ে।পাশাপাশি বীমা কোম্পানি বেশি জরিমানা ধার্য করতে পারে। যদি কোন পলিসি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পুনরুদ্ধার না করা হয় তাহলে বীমা কোম্পানি ওই পলিসির সমর্পন মূল্য প্রদান করতে বাধ্য।

তামাদি এড়ানোর উপায়: নির্ধারিত সময়ে প্রিমিয়াম পরিশোধের নিশ্চিত মাধ্যম হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ক্লিয়ারিং সার্ভিস বা ইসিএস। যার মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিমিয়ামের টাকা কেটে নেয়া হয়। এভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধের ব্যবস্থা করলে পলিসি তামাদি এড়ানো সম্ভব। জীবন বীমা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগেই নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝা বহনের চেষ্টা না করাই ভালো। সর্বোপরি পলিসি তামাদি রোধে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়। পলিসি তামাদির কুফলগুলো গ্রাহককে বুঝাতে হবে এবং সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবার মাধ্যমে বীমা পলিসি চালু রাখার চেষ্টা করতে হবে।

প্রকাশের তারিখ-২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭