মোটর বীমা দাবি প্রত্যাখ্যান হওয়ার সাধারণ কারণ
এ এ সাদী: বাংলাদেশে মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ অনুযায়ী গাড়ি বীমা করা বাধ্যতামূলক। মূলত অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির বোঝা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য মোটর ইন্স্যুরেন্স গ্রহণ করা হয়ে থাকে। একটি ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির বিপরীতে যখন ক্ষতিপূরণ পাবার লক্ষ্যে বীমা দাবি উপস্থাপন করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই বীমাগ্রাহক দ্রুত অর্থপ্রাপ্তির আশা করেন। যদি সে অর্থপ্রাপ্তি ব্যর্থ হয় তাহলে গ্রাহক খুবই হতাশ হন। অতএব, এমন পরিস্থিতি এড়াতে বীমাগ্রাহকের প্রকৃতভাবে করা বীমা দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পারে এমন কারণগুলো জেনে রাখা উচিৎ।
১. ড্রাইভার বা চালক সংশ্লিষ্ট ব্যাপার
বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, এই দুইটি প্রধান কারণে মোটর বীমায় দাবি নাকোচ হয়ে যায়। আইনগত বিধি-নিষেধের কারণে বীমাকারী দাবি পরিশোধ করতে পারে না।
২. যথা সময়ে পলিসি নবায়ন না করা
পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবার আগেই তা নবায়ন করে নিতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া পলিসির বিপরীতে বীমা দাবি কখনোই পরিশোধ করা যাবে না। এমতাবস্থায় বীমাকারী কর্তৃক দাবি প্রত্যাখ্যান হবে।
৩. দুর্ঘটনার তথ্য জানাতে বিলম্ব করা
বীমাকারী আশা করে যে, গ্রাহক খুব দ্রুত বীমা দাবি সম্পর্কে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করবে। যদি বীমা গ্রাহক বীমা দাবি সম্পর্কে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বীমা কোম্পানিকে জানাতে দেরি করে এবং দাবি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রেরণ না করে তাহলে বীমা দাবি প্রত্যাখ্যান করা হবে। গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত করতে পাঠানোর পূর্বে প্রথম কাজ হচ্ছে, বীমা কোম্পানিকে জানানো।
৪. যানবাহনের যন্ত্রাংশ সংযোজন-বিয়োজন বা রিপেয়ার করা
একটি পলিসি নবায়ন করা হলে পূর্বের পলিসি অনুযায়ী গাড়ির সব কিছুই পলিসিতে কভার করা হয়ে থাকে। তবে গাড়ি কোন প্রকার যন্ত্রাংশ সংযোজন-বিয়োজন বা রিপেয়ার করা হলে তা বীমাকারীকে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম প্রদানের করে অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ সংযোজন বা গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি হলে তা কভার গ্রহণ করা হবে। যদি যন্ত্রাংশ সংযোজন-বিয়োজন বা রিপেয়ার করার তথ্য প্রদান না করেন তাহলে বীমা দাবি প্রত্যাখ্যান হবে।
৫.নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমার বাইরে গাড়ি চালানো
পলিসিতে উল্লেখিত ভৌগলিক সীমানার বাইরে গাড়ি চালানো অবস্থায় উক্ত গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ক্ষতিপূরণ দাবি প্রত্যাখ্যান হবে। যেমন, বাংলাদেশের গাড়ি নেপাল, ভুটান বা মালদ্বীপে চালানো ।
৬. নিয়মিত ব্যবহারের ফলে সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি
গাড়ির রঙ উঠে যাওয়া, চাকার অবক্ষয় ইত্যাদি ধরনের সাধারণ ক্ষতিসমূহ হয় প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে। এ সকল সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি বীমা পলিসিতে কভার করে না। শুধুমাত্র দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিপরীতে করা বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়।
৭. গাড়ি ব্যবহারের নিয়ম লংঘন
একটি গাড়ির বীমা করার সময় তার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় তার ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী। যেমন, প্রাইভেট কার (Private Vehicle Insurance), বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত বা ভাড়ায় চালিত গাড়ি (Commercial Vehicle Insurance)।
উদাহরণ স্বরূপ: ১৫০০ সি.সি. একটি প্রাইভেট কার কম্প্রিহেন্সিভ বীমা পলিসি গ্রহণ করল। এই পলিসির আওতায় থাকাবস্থায় গাড়িটি ব্যাক্তিগতভাবে ব্যবহৃত না হয়ে ভাড়ায় চলাকালীন কোন দুর্ঘটনায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লো।
এই অবস্থায় বীমাদাবী প্রত্যাখ্যান হবে। কেননা, পলিসিতে বলা ছিল, গাড়িটি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা হবে, অথচ ভাড়ায় চলাকালে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। যা পলিসির শর্ত ভংগ করে। সুতরাং মোটর বীমাগুলোর জন্য দাবি করা সবচেয়ে সহজতম এবং সবচেয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়া হলো পলিসিতে উল্লেখিত সকল টার্মস এন্ড কন্ডিশন তথা শর্তাবলি যথাযথ ভাবে অনুসরন করা।
লেখক: অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।