প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কার্যকর হাতিয়ার বীমা

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনজীবনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব প্রশমিত করতে একটি কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে বীমা। বীমার এই ভূমিকা সম্পর্কে সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলোকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এমনটাই জানিয়েছেন বীমা বিশেষজ্ঞ, দাতা সংস্থার কর্মকর্তা এবং সরকারের মন্ত্রীরা।

সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স সোসাইটি গ্লোবাল ফোরামের সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে ব্রিটেনের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)'র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিগত ২০ বছরে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া হারিকেন এবং মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে ৭৭টি দরিদ্র দেশের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

ধনী দেশগুলোতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়-ক্ষতির প্রায় অর্ধেকই বীমার আওতায়। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোতে এই কভারেজের পরিমাণ ৫ শতাংশেরও কম, জানায় ডিএফআইডি।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং আইডিএফ এর কো-চেয়ার জোয়াকিম লেভি বলেন, যেহেতু জলবায়ূর কাছ থেকে বড় ধরণের ঝুঁকির শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, বিভিন্নমুখী হুমকি মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক সামর্থ শক্তিশারী করার জন্য আমরা বীমা ও ঝুঁকি অর্থায়নের পথ ব্যবহার করতে পারি।

এ খাতে রেকর্ড পরিমাণ আন্তর্জাতিক সহায়তা থাকার পরও পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহের জন্য মানবিক আবেদন বেড়েই চলছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ক্রমেই বাড়ছে এবং জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব আরো শক্তিশালী হচ্ছে। তাই বিভিন্ন দেশের সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে বিকল্প তহবিল গঠনের পথ খুঁজছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্র দেশগুলোতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হতে পারে বীমা।

ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (আইডিএফ)'র চেয়াম্যান স্টিফেন ক্যাটলিন বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় বীমার টাকা সহজে পাওয়া গেলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দ্রুত হয়, মানবিক দুর্ভোগ কম হয় এবং করদাতাদের খরচও অনেক কমে- এটা প্রমাণিত।

ফোরামের সভায়, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন দেশগুলোর প্রয়োজন মোকাবেলায় প্রাকৃতিক ঝুঁকি অর্থায়ন কার্যক্রমে ২০ মিলিয়ন ইউরো তথা ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রদানের ঘোষণা দেয় জার্মানি।

জলবায়ূ এবং বিপর্যয় ঝুঁকিতে অর্থায়ন ও বীমা ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারী তহবিলে এই অর্থ জমা হবে। ব্রিটিশ ও জার্মান সরকার এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এই আন্তর্জাতিক অংশীদারী তহবিল গঠন করেছে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দরিদ্রতম দেশগুলোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান এবং সংকটের ঘটনার সময় দ্রুত অর্থ সরবরাহের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে একটি নতুন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে অংশীদারিত্বে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ লন্ডনে এই কেন্দ্র খোলা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সঙ্কটকালে টাকা ছাড়ের জন্য দ্রুততর এবং নির্ভরযোগ্য পন্থা তৈরিতে সহায়তা করার জন্য সেন্টার ফর গ্লোবাল ডিজাস্টার প্রোটেকশন (সিজিডিপি) আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে । (সূত্র: রয়টার্স)