কেনিয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা এখন বাংলাদেশের মাসুদুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাইফ বীমাখাতে কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিদেশি লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছা আমার শুরু থেকেই ছিল। আর যখন থেকে আমার লক্ষ্য নির্ধারণ করলাম, তখন থেকেই নিজেকে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে গড়ে তোলা শুরু করেছি। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, ব্যক্তির উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এই বিশ্বাস এবং চেষ্টা আজ আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।

এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স অব আফ্রিকা নামে কেনিয়ার একটি বীমা কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশের মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান খান। তিনি সোমালিল্যান্ডের রাজধানী হার্গেইসায় অবস্থিত কোম্পানিটির শাখা অফিসের মেডিকেল আন্ডাররাইটিং অ্যান্ড ক্লেইমস বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে নিজের সফলতার গল্প বলেন মাসুদুজ্জামান।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এসিআইআই এবং একচ্যুয়ারিয়াল সায়েন্স শিক্ষার সুযোগ রয়েছে, যা বীমাখাতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। আমি এসিআইআই (২২০ পয়েন্ট) ডিগ্রি অর্জনের পর একচ্যুয়ারিয়াল সায়েন্সে এমএসসি সম্পন্ন করেছি।এরপরই একটি ইন্টারন্যাশনাল জব পোর্টালে নিজের জীবন বৃত্তান্ত জমা দেই। পোর্টালটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

ওই পোর্টাল থেকেই তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স অব আফ্রিকা কর্তৃপক্ষ আমার জীবন বৃত্তান্ত পছন্দ করে এবং আমার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে একটি বার্তা পাঠায়। এরপর আমার সাক্ষাতকারের জন্য একটি দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয় এবং স্কাইপি ও হোয়াটসআপ’র মাধ্যে আমার সাক্ষাতকার গ্রহণ করে।এসময় তারা আমার ওপর সন্তোষ প্রকাশ করে এবং মেডিকেল আন্ডাররাইটিং অ্যান্ড ক্লেইমস বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করে।

এর কিছু দিন পর আমি সকল শর্তাবলীসহ আমার নিয়োগপত্র হাতে পাই। এভাবেই আমার সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। আমি মনে করি, বিদেশিদের সামনে আমাদেরকে তুলে ধরার এটাই সময়। একটি জিনিস আমাদের প্রয়োজন, আর তা হলো নিজেদেরকে প্রস্তুত করা এবং সারা বিশ্বের মুখোমুখি হওয়ার সাহস অর্জন করা।

তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স অব আফ্রিকা’র আগে তিনি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অপারেশনস, ইননোভেশন অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেল বিভাগের এজিএম ছিলেন। ২০০১ সালের জুনে ফারইষ্ট লাইফের সেন্ট্রাল আন্ডাররাইটিং অ্যান্ড রিইন্স্যুরেন্স বিভাগের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মাসুদুজ্জামান খান।

এছাড়া চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে আন্ডাররাইটিং বিভাগের বিভিন্ন পদে তিনি কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের কর্মজীবনে মিউনিক রি (জার্মানি ও ইন্ডিয়া), এশিয়ান রিতাকাফুল (মালয়েশিয়া) ও স্কোর গ্লোবাল লাইফে (ফ্রান্স ও সিঙ্গাপুর) পুনর্বীমা বিষয়ে কাজ করেছেন মাসুদুজ্জামান খান।

২০১৬ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি একচ্যুয়ারিয়াল সায়েন্সে এমএসসি (৫১ ক্রেডিট পয়েন্ট) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরআগে ২০০১ সালে সাবসিডিয়ারি বিষয় হিসেবে ম্যাথমেটিকস ও স্ট্যাটিস্টিকসহ ফিজিকসে বিএসসি (অনার্স) ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে ইউকে’র চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট থেকে সার্ট সিআইআই অর্জনের পর এখন তিনি অ্যাসোসিয়েট ইন সিআইআই পড়ছেন।

লাইফ ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স, আন্ডাররাইটিং, রিইন্স্যুরেন্স, ক্লেইমস, কাস্টমার সার্ভিস, মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স, সিএসআর, এইচআর সম্পর্কিত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত লাইফ বীমার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।

মাসুদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার ফরিদপুরের জন্তিহারে। তবে বাবা-মা’র চাকরিসূত্রে বেড়ে উঠেছেন নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলকায়। বাবা হাসানুজ্জামান ও মা মুর্সিদা জামান দু’জনই নারায়ণঞ্জ বন্দরে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনে চাকরি করতেন। তাদের একমাত্র ছেলে মাসুদুজ্জামান। তবে তার তিন জন বোন আছে, যারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত।

বন্দর শিশুবাগ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন মাসুদুজ্জামান। পরে সরকার তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি অর্জনের পর ভর্তি হন বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর তাদের সংসারের হাল ধরে মা মুর্সিদা জামান। যিনি এখনো জীবিত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে মাসুদুজ্জামান বিবাহিত। তার স্ত্রী সুপর্ণা মাসুদ পেশায় শিক্ষক। তাদের দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে।

Published on: Tuesday, January 31 2017, 17:48