নন-লাইফে অবৈধ কমিশন বন্ধ ও লাইফ বীমার কমিশন শিডিউলে যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন
নিজস্ব প্রতিবেদক: লাইফ বীমার কমিশন শিডিউলে যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস এবং নন-লাইফে অবৈধ কমিশন বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করে করেছেন বীমা খাতের সংস্কার বিষয়ক সেমিনারের আলোচকরা। তাদের মতে, দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতের উন্নয়নে এ দু’টি বিষয় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবৈধ কমিশনের কারণে যেমন নন-লাইফ বীমার কোম্পানিগুলো কোন উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। তেমনি অযৌক্তিক কমিশন সিডিউলের কারণে লাইফ বীমায় ব্যাপক হারে পলিসি তামাদি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এ খাতের কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত লাইফ ফান্ড তৈরি হচ্ছে না এবং সময় মতো বীমা দাবি পাচ্ছে না গ্রাহকরা।
সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। পাক্ষিক অর্থকাগজ পত্রিকার রজত জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক প্রণব কুমার মজুমদার।
সেমিনারে ‘জীবন বীমা শিল্পের উন্নয়নে সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোনালী লাইফের সাবেক মহাব্যবস্থাপক বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস। নন-লাইফ বীমা খাতের ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিরসনে সংস্কারমূলক ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক এ বি এম নুরুল হক। লাইফ পর্বের সঞ্চালক ছিলেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিআইএফ’র জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান, বেঙ্গল ইসলামি লাইফের মুখ্য নির্বাহী এম এম মনিরুল আলম, চার্টার্ড লাইফের সাবেক মুখ্য নির্বাহী এস এম জিয়াউল হক, অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী ড. এ কে এম সরোয়ার জাহান জামিল।
‘জীবন বীমা শিল্পের উন্নয়নে সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধে বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রথম বর্ষ ব্যবসার ওপর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বাধিক সুযোগ থাকায় কোম্পানিগুলোর সেদিকে ঝোঁক বেশি। নবায়ন ব্যবসার প্রতি তাদের তেমন কোন দৃষ্টিপাত নেই। ফলে দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পনের আগেই লাইফ বীমার ৭০ শতাংশ পলিসি তামাদি হয়ে মূল্যহীন হয়ে যায়। ভবিষ্যতে কোন অর্থ ফেরত না পাওয়ায় গ্রাহকের মাঝে তৈরি হয় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
এ কারণে প্রথম বর্ষ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের কমিশন ব্যয়ের মধ্যে এমন একটি যৌক্তিক বিন্যাস থাকা উচিত যার কারণে কোম্পানি ও বিপণন কর্মীরা নতুন পলিসি ও নবায়ন পলিসির প্রতি সমান দায়িত্বশীল আচরণে আগ্রহী হয়। এর ফলে নির্ধারিত তারিখে প্রতিশ্রুত বীমা দাবি পরিশোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে প্রথম বর্ষ থেকেই পেইড-আপ ভেল্যু অর্জনের বিধান চালু করে জীবন বীমার প্রতি মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভব।
‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিরসনে সংস্কারমূলক ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রবন্ধে এ বি এম নুরুল হক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বীমা শিল্প গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। এই খারাপ অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। একটু একটু করে অব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা তথা কোম্পানিগুলোর সার্বিক প্রশাসনিক ও আর্থিক দুর্বলতা ক্রমশ দানা বেঁধে আজকের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এক্ষেত্রে বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা অর্জনের জন্য আর্থিক বুনিয়াদ শক্ত ও মজবুত করা প্রয়োজন। ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন বীমা পরিকল্প প্রচলন করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে এবং উন্নতমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব।
এ বি এম নুরুল হক বলেন, বিদেশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় থার্ড পার্টি মটর বীমাকে। অথচ বাংলাদেশে এটি বন্ধ করে দেয়া হলো। যার কারণে এখন কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয় যেমন কমে গেছে তেমনি সরকারও বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নন-লাইফ বীমা খাতে কমিশন হার বেশি হওয়ায় এখন এজেন্ট পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ কোম্পানি আইডিআরএর’ বেধে দেয়া হারে কমিশন দেয় না। গ্রাহক ধরতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়ার কথাও আমরা জানি। এই অবৈধ কমিশন এ খাতের উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে আছে। এটি বন্ধ করতে হবে।