শহিদুল ইসলামের বিএ-এমএ সনদের বৈধতা নেই, নিয়োগ না-মঞ্জুর করেছে আইডিআরএ
আবদুর রহমান আবির: ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে মো. শহিদুল ইসলামের নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন না-মঞ্জুর করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মঙ্গলবার (১৬ মে) বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে।
আইডিআরএ বলছে, শহিদুল ইসলামের বিএ এবং এমএ সনদপত্র দুটি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যু না করায় তা বিবেচনা করা সুযোগ নেই। ফলে প্রবিধানমালা অনুসারে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তার নিয়োগ অনুমোদনের আবেদনটি না-মঞ্জুর করা হয়েছে।
এই নিয়োগ বাতিলের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো- শহিদুল ইসলাম এর আগে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ভূয়া সনদ দাখিল করেই দীর্ঘ ৫ বছর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চাকরি করেছেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূয়া সনদ দিয়ে চাকরি করার দায়ে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অন্যথায় এ ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আরো ঘটতে পারে।
এর আগে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে ‘শহিদুল ইসলামের বিএ-এমএ সনদের বৈধতা নেই’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি ক্যাম্পাস থেকে ইস্যুকৃত এ সংক্রান্ত বিভিন্ন চিঠি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে শহিদুল ইসলামের বিএ এবং এমএ সনদের কোন বৈধতা না থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয় ওই সংবাদে।
সনদ দুটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানিয়েছে, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুর ক্যাম্পাসের কোন বৈধতা নেই। আবার সাময়িক অনুমোদন পাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বৈধ ক্যাম্পাস ধানমন্ডি থেকেও বলা হয়েছে, শহিদুল ইসলামের সনদ দু’টি ধানমন্ডি ক্যাম্পাস থেকে ইস্যু করা হয়নি।
শহিদুল ইসলামের বিএ এবং এমএ শিক্ষাগত সনদের বৈধতা নেই মর্মে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’তে বিভিন্ন সময় একাধিক সংবাদ প্রকাশসহ সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে তার সনদ যাচাইয়ের প্রেক্ষিতে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকেও সনদ দুটি যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, গত ১৮ এপ্রিল দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে শহিদুল ইসলামের সনদ দুটির সঠিকতা বা বৈধতা যাচাই করতে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এ প্রেক্ষিতে গত ৯ মে দারুল ইহসান ট্রাস্টের প্যাডে সনদ দুটির বিষয়ে মতামত পাঠানো হয়।
আইডিআরএ’কে পাঠানো মতামতে বলা হয়, “সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর উল্লেখিত প্রোগ্রামের সাময়িক সনদপত্র দুটি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ী নং ২১, রোড-৯/এ, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা-১২০৯ থেকে ইস্যু করা হয়নি”।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মতামত অনুযায়ী দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুরস্থ ক্যাম্পাসও কমিশনের অনুমোদিত ছিল না।
দারুল ইহসান ট্রাস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এই মতামত অনুযায়ী ডেল্টা লাইফের প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কর্তৃক দাখিলকৃত বিএ এবং এমএ সনদপত্র দুটি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রহণ বা বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে আইডিআরএ।
এই প্রেক্ষিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুসারে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় শহিদুল ইসলামের নিয়োগ অনুমোদনে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষের আবেদনটি না-মঞ্জুর করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
একইসাথে ভবিষ্যতে ডেল্টা লাইফে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম অভিজ্ঞতা, বয়স ও অন্যান্য যোগ্যতা মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুসারে যাচাই বাছাই করে কর্তৃপক্ষে আবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে।
আইডিআরএ’র চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(৪) ধারা মোতাবেক ডেল্টা লাইফের মুখ্য নির্বাহী পদ একাধারে ৩ মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাবে না বিধায় ৩ মাস পূর্তির ১৫ দিন পূর্বে প্রবিধানমালা অনুযায়ী যোগ্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ প্রস্তাব কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাতে হবে।
এর আগে চলতি বছরের ২ এপ্রিল ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের ২৫৫তম সভায় শহিদুল ইসলামকে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই নিয়োগ অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আবেদন জানান কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার।
আইডিআরএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র (উপসচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, শহিদুল ইসলামের দাখিলকৃত শিক্ষাগত সনদের বৈধতা না থাকায় তার নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন না-মঞ্জুর করেছে কর্তৃপক্ষ।এ ছাড়াও অতীতে যেসব কোম্পানিতে তিনি এই অবৈধ সনদ দিয়ে চাকরি করেছে সে বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। কারণ, অবৈধ সনদ দিয়ে চাকরি নেয়া অপরাধ।