শাহ আলমের গোড়ায় গলদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মোহাম্মদ শাহ আলম এফসিএ। মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ নীতিমালার শর্ত পূরণ না করেই তিনি নিয়োগের অনুমোদন পান।  এ নিয়োগটি তিনি পান ২০১০ সালে। এরপর গত ৬ বছরে আরো ২ বার তাকে নিয়োগের অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।  অর্থাৎ গোড়াতেই গলদ রেখে গত ৯ বছর ধরে মূখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। প্রতিবারই মোটা অংকের বেতনে মূখ্য নির্বাহী পদে কোম্পানির সাথে চুক্তি করেন শাহ আলম। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ নীতিমালার শর্ত পূরণ ছাড়াই কোন ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হলে তা হবে অবৈধ। প্রথম বারের নিয়োগ অবৈধ হলে তার পরের সব নিয়োগই অবৈধ বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে তার সকল নিয়োগ বাতিল হবে। অন্যদিকে বেতন-ভাতা বাবদ নেয়া সকল টাকাই তাকে ফেরত দিতে হবে।

মূখ্য নির্বাহী নিয়োগে সাবেক বীমা অধিদফতরের অনেক কর্মকর্তার উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ সকলেরই জানা বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পেতে হলে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে হবে।  এ শর্ত ছিল ২০০৭ সালে জারি করা “বেসরকারি বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহীর নিয়োগ নীতিমালা’ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে।  

অথচ ৩ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার ওই বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণ না করেই মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন পান মোহাম্মদ শাহ আলম এফসিএ। মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে শাহ আলমের কর্ম অভিজ্ঞতা ছিল ২ বছর ৪ মাস ২৭ দিন।  আইন ভঙ্গ করে শাহ আলমের মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পাওয়ার ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালে।  ওই নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেন সাবেক বীমা অধিদফতরের উপ-বীমা নিয়ন্ত্রক জগদ্বীশ চন্দ্র বিশ্বাস। শাহ আলম সেবারই প্রথম মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পান।   

উল্লেখ্য, ১৮ জুলাই ২০০৭ সালে জারি করা সাবেক বীমা অধিদফতরের বেসরকারি বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহীর নিয়োগ নীতিমালা’র ৫ এর (গ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি বীমা কোম্পানির কর্মকর্তার ক্ষেত্রে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিচের পদ যেমন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা সমমানের পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।  

সাবেক বীমা অধিদফতর বিলুপ্ত হওয়ার পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) শাহ আলমকে আরো ২ মেয়াদে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পুনর্নিয়োগ অনুমোদন করা হয় ২০১২ সালে।

এরপর ৩০ জুলাই ২০১৫ সালে শাহ আলম মেঘনা লাইফ থেকে ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

২০১৫ সালে কোম্পানি পরিবর্তন করে ১০ লাখ টাকা বেতনে মূখ্য নির্বাহী পদে প্রাইম ইসলামী লাইফের সাথে চুক্তি করেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শাহ আলমকে প্রাইম ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয় ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে।  আইডিআরএ তার বেতন নির্ধারণ করে ৬ লাখ টাকা। তবে এ নিয়োগপত্রটিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শর্ত জুড়ে দেয় যে, ভবিষ্যতে মূখ্য নির্বাহীর আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত ডকুমেন্টস জাল বা ভুল প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবে।  

সর্বেশষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর শাহ আলমকে মূখ্য নির্বাহী হিসেবে পুনর্নিয়োগ দিতে আবারো আবেদন করেছে প্রাইম ইসলামী লাইফ। ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান এম এ খালেক।  আবেদনপত্রে শাহ আলমকে ২ বছর ৬ মাস মেয়াদের জন্য নিয়োগের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। তবে বেতন আগের বারের চেয়ে ২ লাখ টাকা কমিয়ে ৮ লাখ টাকা করা হয়।

আবেদনপত্রের সাথে দাখিল করা জীবন বৃত্তান্তে শাহ আলম উল্লেখ করেন তার বীমাখাতে চাকরির অভিজ্ঞতা ৩৮ বছর। এর মধ্যে ৪ অক্টাবর ২০১৫ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রাইম ইসলামী লাইফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন্ড সিইও, ২০১০ থেকে ১ অক্টোবর ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এছাড়াও সেপ্টেম্বর ২০০৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১০ পর্যন্ত সময়ে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মে ২০০৮ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রাইম ইসলামী লাইফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এই হিসাবে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অর্থাৎ মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে শাহ আলমের কর্ম অভিজ্ঞতা ২ বছর ৪ মাস ২৭ দিন।

জুলাই ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস-প্রেসিডেন্ট, একই সময়ে তিনি ওই কোম্পানির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সিএফও।  তবে এর আগে ২০১৫ সালে দাখিল করা অপর একটি বায়োডাটায় তিনি উল্লেখ করেন ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি ন্যাশনাল লাইফের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে চাকরি করেন।

এ বিষয়ে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সাথে আলাপকালে মোহাম্মদ শাহ আলম দাবি করেন, ওই সময় ন্যাশনাল লাইফে এক্সিকিউটিভ ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিল কোম্পানিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ।

অথচ ন্যাশনাল লাইফ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর করা বর্তমানে প্রগ্রেসিভ লাইফের মূখ্য নির্বাহী পদে থাকা দীপেন কুমার সাহা রায় এফসিএ’র অভিজ্ঞতার প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়, অর্গানোগ্রাম অনুসারে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোম্পানিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ।  একই সাথে ন্যাশনাল লাইফের ২০০৮ সালে প্রকাশিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি কোম্পানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ।

মোহাম্মদ শাহ আলমের অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সদস্য ড. এম মোশারফ হোসেন ফাইল না দেখে মন্তব্য করতে রাজি হননি।