সাংসদের চেয়ে ফারইস্ট চেয়ারম্যানের মূল্য ১০ গুণ বেশি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন সংসদের চেয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের মূল্য ১০ গুণ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ও প্রাক্তণ আমলার চেয়ে তার মূল্য ১৪ গুণ বেশি। নজরুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান।

উন্নয়ন সভা, মরনোত্তর বীমা দাবির চেক বিতরণ, সুধী সমাবেশ জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে কোম্পানির চেয়ারম্যান  প্রধান মেহমান (প্রধান অতিথি) থাকলে সেই অনুষ্ঠানের খরচ নির্ধারণ করা হয় ৭০ হাজার টাকা। একজন সাংসদ প্রধান অতিথি হলে ওই অনুষ্ঠানের খরচ করা হয় ৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন সাংসদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি খরচ করা হয় কোম্পানির চেয়ারম্যান কোন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হলে।

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান/ ভাইস চেয়ারম্যান/ পৌরসভা মেয়র, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, প্রাক্তত আমলা/ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন প্রধান মেহমান হলে খরচের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ এসব ব্যক্তিকে কোন অনুষ্ঠানের প্রধান মেহমান করা হলে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানকে প্রধান মেহমান করার চেয়ে ১৪গুণ খরচ কম হবে।

কোম্পানির বিভিন্ন সভার খরচের সিলিং অনুমোদনে প্রধান মেহমান (প্রধান অতিথির) হিসেবে এসব পদবির এমন মূল্য নির্ধারণ করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ। ২০১৭ সালে ১৩ এপ্রিল পরিচালনা পর্ষদের ২১৭তম সভায় ব্যবসা উন্নয়ন সভা/ মরনোত্তর বীমা দাবির চেক বিতরণ/ সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানের খরচের এ সিলিং পুনর্নির্ধারণ করে অনুমোদন দেয় পরিচালনা পর্ষদ।

শুধু কি চেয়ারম্যান, কোম্পানির মূখ্য নির্বাহীর মূল্যও কম নয়। কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী প্রধান অতিথি হলে খরচ অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন সাংসদের চেয়ে তা দ্বিগুণের বেশি। আর বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র শিক্ষক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রাক্তণ আমলার চেয়ে মূখ্য নির্বাহীর মূল্য ৩ গুণ বেশি।

এর আগে ২০১৩ সালে ২৮ ডিসেম্বর ১৭৩তম বোর্ড সভায় এ খাতে খরচের সিলিং অনুসারে একজন সাংসদের চেয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানের মূল্য ছিল ৫ গুণ বেশি।

এ সময়ে একজন সাংসদকে কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হলে সে অনুষ্ঠানের খরচ ১৫ হাজার টাকা। আর চেয়াম্যানকে প্রধান অতিথি করা হলে খরচ ৭৫ হাজার টাকা।

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান/ ভাইস চেয়ারম্যান/ পৌর সভা মেয়র, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, প্রাক্তত আমলা/ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন প্রধান মেহমান হলে খরচের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ এসব বক্তির চেয়ে চেয়ারম্যানের মূল্য সাড়ে ১২ গুণ বেশি।

এ সময়ে মূখ্য নির্বাহীকে কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হলে সে অনুষ্ঠানের খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা। যা সাংসদের চেয়ে দেড় গুণের বেশি।

আর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান/ ভাইস চেয়ারম্যান/ পৌর সভা মেয়র, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, প্রাক্তণ আমলা/ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনের চেয়ে ৪ গুণের বেশি। 

সর্বশেষ হিসাব অনুসারে অন্যদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হলে খরচের যে সিলিং নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো- ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য ৫০ হাজার, বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের জন্য ৫০ হাজার, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানের জন্য ৫০ হাজার, সাব কমিটির চেয়ারম্যানের জন্য ৫০ হাজার, ডাইরেক্টর এর জন্য ৫০ হাজার টাকা, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য ১৫ হাজার, শরীয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের জন্য ১০ হাজার, এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের জন্য ১০ হাজার, শরীয়াহ কাউন্সিলের সদস্যের জন্য ১০ হাজার, ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের জন্য ৬ হাজার, অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের জন্য ৬ হাজার, ইনচার্জ/ ওয়েস্টার্ন ও ইস্টার্ন রিজিওন, একক/ সাবী এর জন্য ৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ’র সাথে আলাপকালে তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে বোর্ড সভার কার্যবিবরণী দেখানো হলে এ ধরনের খরচের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি।