বীমা কর্মীদের সহায়তায় সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছে বীমাখাত

আবদুর রহমান আবির: বীমা কর্মীদের সহায়তায় সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছে দেশের বীমাখাত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন পাঠানোর পাশাপাশি মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন বীমা মালিকরা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’ও কাজ করছে বিষয়টি নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুসারে, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে সাধারণ ছুটি। নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ রয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান। সংক্রমন রোধে ঘরে বন্দি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ। এদিকে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির কমিশন ভিত্তিক বীমা কর্মীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে বীমা পলিসি বিক্রি ও নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। ফলে বীমা শিল্পের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস শেষে নির্ধারিত বেতন-ভাতা পেলেও কোন কমিশন পাচ্ছেন না এসব এজেন্ট। কারণ, নিয়ম অনুসারে বীমা পলিসি বিক্রির নির্ধারিত কমিশনের বাইরে কোন বেতন-ভাতা নেই এজেন্টদের।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হয়নি বীমা কর্মীদের। এরমধ্যে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে সাধারণ ছুটি। দীর্ঘ এই বন্ধে সম্পূর্ণ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে কমিশন ভিত্তিক বীমা কর্মীরা। এ অবস্থায় সরকার বা মালিক পক্ষের কোন সহযোগিতা না পেলে মানবেতর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তাদেরকে। পরিবার পরিজন নিয়ে আসন্ন ঈদও কাটাতে হবে সম্পূর্ণ খালি হাতেই।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। নতুন আরেকটি লাইফ বীমা কোম্পানি সম্প্রতি অনুমোদন লাভ করেছে। এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্টসহ এসব বীমা কোম্পানির বিভিন্ন পদে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ নারী-পুরুষ।

২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে দেশের ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির এজেন্ট সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৫১। আর এমপ্লয়ার অব এজেন্ট রয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ১৭৮। অন্যদিকে ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির এজেন্ট সংখ্যা ২ হাজার ৬০৭। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বর্তমানে এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রণোদনার জন্য বিআইএ’র পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবকেও জানানো হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এখন আইডিআরএ’কে চেষ্টা করে এটা আনতে হবে।

শেখ কবির হোসেন বলেন, সরকার যদি প্রণোদনা না দেয় তাহলে আইডিআরএ’র যে ফান্ড রয়েছে সেখান থেকেও এই অর্থ দেয়া যেতে পারে। পরে সরকার দিলে সেখান থেকে সমন্বয় করতে পারবে। অথবা কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের কাছ থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমেও ফান্ডের অর্থ ফেরত দিতে পারবে।

বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট বলেন, বীমা কর্মীদের দেখভালের দায়িত্ব আইডিআরএ। তাদের কাছে এজেন্টদের তালিকা আছে। তারা এজেন্টদের নিবন্ধন দেয়া। ফিও নেয় তারাই। এখানে এসোসিয়েশনের করার কিছু নেই। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আইডিআরএ’কে এখানে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নিয়ন্ত্রণ করার সময় আইডিআরএ কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন গাছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে। বীমা কর্মীদের নিয়ে আইডিআরএ’কে ভাবতে হবে। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। এখন আইডিআরএ’কে সেটা সংগ্রহ করে কর্মীদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।