আবারো আইন লঙ্ঘন করে ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন দিল আইডিআরএ
আবদুর রহমান আবির: এবারও আইন লঙ্ঘন করে চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২) সিআইবি রিপোর্ট ছাড়াই তরিঘড়ি করে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
মাত্র ৮ বছর ৩ মাস চাকরির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়। এই অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১৫ বছর কর্ম অভিজ্ঞতার বাধ্যবাধকতা থেকে একচ্যুয়ারিয়াল সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকার কারণে ৫ বছর সিথিল করা হয়। তবে এরপরও তার অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ হয়নি।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পদ্মা ইসলামী লাইফের নিয়োগ, বীমা খাত ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তবে এ ধরণের বিবেচনার কোন এখতিয়ার দেয়া হয়নি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে।
বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারূপে নিয়োগ করা যাইবে না এবং নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত অনুরূপ যোগ্যতা ও বীমাক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সন্তুষ্ট না হইলে ঐরূপ নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করিবে না’৷
তথ্য অনুসারে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন পেতে গত ৬ জানুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠিত বীমা কোম্পানিটির বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মো. রহমত উল্লাহ।
চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিন এর আগে পদ্মা ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ওই সময়ও আইন লংঙ্ঘন করে ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
পদ্মা ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী পদে ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন করা হয় ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। পরে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পদ্মা ইসলামী লাইফ থেকে পদত্যাগ করেন চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিন। যদিও আইডিআরএ তাকে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ অনুমোদন করেছিল।
ওয়াসিউদ্দিন ২০১০ সালে ১ জুন পদ্মা ইসলামী লাইফে নিয়োগ নিয়ে ৬ মাস চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। এরপর তিনি চলে যান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে। সেখানে ৮ মাস চাকরি করে আবারো তিনি পদ্মা ইসলামী লাইফের ডিএমডি পদে নিয়োগ নেন। পরে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পান ২০১৩ সালের ৩ মার্চ। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ থেকে কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী পদে চলতি দায়িত্ব পালন করে।
ওয়াসিউদ্দিনকে পদ্মা ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দিতে আবেদন করা হয় ২০১৬ সালের ১৬ জুন। এ সময় কর্ম অভিজ্ঞতা না থাকায় ওয়াসিউদ্দিনকে মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। তবে অদৃশ্য কারণে পরবর্তীতে ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আইডিআরএ ওয়াসিউদ্দিনকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের ৯৩তম সভায়। সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিটির তৎকালিন চেয়ারম্যান ড. এ বি এম জাফর উল্লাহর আবেদনকেই বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।
অথচ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অুনমোদন সংক্রান্ত আইডিআরএ’র নথিতে উল্লেখ করা হয়, ওয়াসিউদ্দিনের এফসিএ ডিগ্রি থাকায় ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থেকে ৩ বছরের ছাড় পাবেন। কিন্তু ওয়াসিউদ্দিনের বীমা খাতে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা নেই।
নিয়োগ নথিতে আইডিআরএ’র তৎকালীন সদস্য (আইন) মো. মুরশিদ আলম তার মতামতে উল্লেখ করেন, ‘অনুচ্ছেদ ২০ এর বর্ণনা অনুযায়ী ১২ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জন না হওয়ায় জনাব চৌধুরী মো. ওয়াসিউদ্দিনকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করা যাইতে পারে না’।
ওয়াসিউদ্দিন পদ্মা ইসলামী লাইফ থেকে পদত্যাগ করেন ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ। এই হিসেবে বর্তমানে ওয়াসিউদ্দিনের কর্ম অভিজ্ঞতা ৮ বছর। অর্থাৎ এফসিএ ডিগ্রিধারীদের ১২ বছর বীমা খাতে কর্ম অভিজ্ঞতার যে ছাড় দেয়া হয়েছে সেটি এখনো অর্জন হয়নি ওয়াসিউদ্দিনের।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে তার মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।