ফারইস্টের ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জড়িত সাবেক চেয়ারম্যানসহ সকল পরিচালক
আবদুর রহমান আবির: ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার তহবিল তসরুফ হয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফে। যার মধ্যে ২ হাজার ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা তসরুফ করা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে জমি ক্রয় ও উন্নয়ন দেখিয়ে, এমটিডিআর বন্ধক রেখে পরিচালক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া এবং ক্ষতিকর বিনিয়োগ করে। বাকি ৪৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা তসরুফ করা হয়েছে পরিচালনাগত ত্রুটি ও অনিয়ম করে।
এ বিপুল পরিমাণ টাকা তসরুফের জন্য দায়ী করা হয়েছে বীমা কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ সকল পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহকে। তবে হেমায়েত উল্লাহ সুনির্দিষ্টভাবে কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি।
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’তে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের জমি ক্রয় সংক্রান্ত অনিয়মের সংবাদের পর বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা অনুসারে কোম্পানিটিতে তদন্তকারী নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং সেই তদন্ত প্রতিবেদনেই দায়ী করা হয়েছে তাদেরকে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই তদন্তের জন্য গত ২৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে তদন্তকারী হিসেবে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. কে নিয়োগ করে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১৮ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
জমি ক্রয়েই ফারইস্টের ৬৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ঢাকাসহ দেশের ১৪টি স্থানে জমি ক্রয় করে। এসব জমি ক্রয় করা হয় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল এই ৪ বছরে। এরমধ্যে ৭টি স্থানের জমি ক্রয় ও এতে ভবন নির্মাণ, বালু ফেলা ও নানাবিধ উন্নয়নের নামে ৬৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে নানা প্রক্রিয়ায়।
কোনো জমি কেনা হয়েছে বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে। আবার জমিগুলো কেনা হয়েছে বাজার দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে। গোপন করা হয়েছে জমির ক্রয় বাবদ প্রকৃত খরচও। বালু ফেলা বা মাটি ভরাট না করেই দেখানো হয়েছে জমির উন্নয়ন ব্যয়। একই জমি আবার রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে একাধিকবার।
গোড়ান চটবাড়ির জমিতেই আত্মসাৎ ১৮০ কোটি টাকা:
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গোড়ান চটবাড়ির জমি ক্রয়ের দুর্নীতি নিয়ে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি ২০২০ সালে ২৪ জুন ‘সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতেই খরচ ১৪২ কোটি টাকা’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপরই ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নানা খাতের শত শত কোটি টাকা তহবিল তসরুফের বিষয়টি সামনে আসে। তদন্তে নামে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ।
এ সময়েই বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা অনুসারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের দুর্নীতি তদন্তে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করেন এম এ খালেক। একই সময়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক ফকরুল ইসলামও ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তহবিল তসরুফ নিয়ে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রীট মামলা দায়ের করেন। এ রীট মামলায় উচ্চ আদালত রুল জারি করলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে স্বতন্ত পরিচালক নিয়োগ করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বিএসইসি।
পরবর্তীতে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, সাবেক পরিচালক এম এ খালেকের অভিযোগ এবং উচ্চ আদালতে ফকরুল আলমের রীট মামলার প্রেক্ষিতে বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধরা অনুসারে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বীমা খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। প্রথমে তদন্তকারি সংস্থা হিসেবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মোস্তফা এন্ড কোং-কে নিয়োগ করা হলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে সিরাজ খান বসাক এন্ড কোং-কে নিয়োগ করা হয়।
সিরাজ খান বসাকের এই তদন্তে গোড়ান চটবাড়িতে ৭৮৬ শতাংশ জমি ক্রয় ও উন্নয়নের নামে ১৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও জমি রেজিস্ট্রি বাবদ ১ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে গোড়ান চটবাড়ির জমিতে মোট আত্মসাৎ করা হয়েছে ১৮০ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
গোড়ান চটবাড়ির জমিটি ক্রয় ও উন্নয়ন বাবদ ১৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ১৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ জমি ক্রয় বাবদ প্রকৃত খরচ ১৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
মোট খরচ ১৯৮ কোটি টাকার মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে চেকে দেয়া হয়েছে ৬৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৮৫ টাকা। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, কেডিসি কন্সট্রাকশন ও মাহবুবা এসোসিয়েটকে চেকে দেয়া হয়েছে ৪০ কোট টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ চেকে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
বাকী টাকা দেয়া হয়েছে নগদে। এর মধ্যে পেমেন্ট গ্রহীতা বা সহায়ক তথ্য ছাড়াই নগদে পরিশোধ করা হয়েছে ৭০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। জমি উন্নয়ন বিল দেয়া হয়েছে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা অন্যান্য ল্যান্ড ফিলিং ভেন্ডরের বিলের বিপরীতে সমন্বয় দেখানো হয়েছে। পেমেন্ট রেফারেন্স বা সহায়ক তথ্য ছাড়াই আরো ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নগদে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
কাকরাইলের জমিতে আত্মসাৎ ১৬০ কোটি টাকা:
বীমা কোম্পানিটির ৭২ কাকরাইলের জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং এর ফলে রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হয়েছে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ৪ বছরে ভাড়া বাবদ আয়ে লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
তোপখানা রোডের জমিতে আত্মসাৎ ১৪৪ কোটি টাকা:
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৩৬ তোপখানা রোডের জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ১২৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং এর ফলে রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হয়েছে ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ ছাড়াও জমিটিতে থাকা জরাজীর্ন ও পরিত্যাক্ত ভবনের মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের জমিতে আত্মসাৎ ৮৯ কোটি টাকা:
কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক এম এ খালেকের ফেরত দেয়া ১০০ কোটি টাকা মূল্যের গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের ৪০/১ নং প্লটে লোকসান দেখানো হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। জমিটি ফারইস্ট ইসলামী লাইফকে ফেরত দেয়া হয়েছে দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেননি সাবেক পরিচালক এম এ খালেক।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের গত ১৪ মার্চের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ৩৭৬ কোটি টাকার সম্পদ প্রতিষ্ঠানটিকে ফেরত দিয়েছে। যার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের এই ৪০/১ নং প্লটও ছিল। আর এই জমিতেই লোকসান ৮৯ কোটি টাকা।
গুলশানের দুই জমিতে আত্মসাৎ ৮০ কোটি টাকা:
বীমা কোম্পানিটির গুলশান-২ এর রোড নং ৫০ এর প্লট নং ২ এর জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এর ফলে রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। একই এলাকার রোড নং ৬১ এর প্লট নং ১/এ ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত প্রদান করা হয়েছে ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
বরিশালের জমিতে আত্মসাৎ ১১ কোটি টাকা:
সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. এর বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, বরিশালের আলেকান্দায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং এর ফলে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন খরচ হয়েছে।
এমটিডিআর বন্ধক রেখে যেভাবে ১৩৩৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ
সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. এর বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, এমটিডিআর বন্ধক রেখে ১৩৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক পরিচালনা পর্ষদ। প্রতিবেদনটিতে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসাব ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এম এ খালেক, প্রাইম প্রোপার্টি, প্রাইম ফাইন্যান্স, ম্যাকসন্স, মিজানুর রহমানের নামে লিয়েন রেখে ৫৪২ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এ ছাড়াও ফারইস্টের এমটিডিআর বন্ধক রেখে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির নামে ১৬৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; পিএফআই প্রোপার্টিজের নামে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা; ফারইস্ট প্রোপার্টিজের নামে, ১৫১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; প্রাইম এশিয়া ফাউন্টেশনের নামে ৯২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; মিথিলা প্রোপার্টিজের নামে ৬৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; পিএফআই সিকিউরিটিজের নামে ৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা; মিথিলা টেক্সটাইলের নামে ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা; কে এম খালেদের নামে ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা; মোল্লা এন্টারপ্রাইজের নামে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা; আজাদ অটোমোবাইলস’র নামে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং কামাল উদ্দিনের নামে ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
ক্ষতিকর বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনটির তথ্য অনুসারে, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিকর বিনিয়োগের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ২৮৭ কোটি টাকার তহবিল আত্মসাৎ করে কোম্পানিটির সাবেক পরিচালনা পর্ষদ।
এর মধ্যে বাংলালায়ন কনভার্টিবল জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৩৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা; পিএফআই সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৩২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; প্রাইম ফ্যাইন্যান্সিয়াল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং আল-ফারুক ব্যাগস লিমিটেডে বিনিয়োগের মাধ্যমে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
অ্যাডভান্সসহ কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া ব্যাংক একাউন্টে আত্মসাৎ ৮৪ কোটি টাকা
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট খুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে কোম্পানিটির ১০ কোটি টাকার তহবিল। এ ছাড়াও কর্মকর্তাদের দ্বারা সরাসরি আত্মসাৎ হয়েছে ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাডভান্সের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৪৮ কোটি ১২ লাখ টাকা।
তিন বছরে ৪৩৩ কোটি টাকার পরিচালনাগত ত্রুটি ও অনিয়ম
সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. এর বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ৪৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার পরিচালনাগত ত্রুটি ও অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালনাগত ত্রুটি হয়েছে ৩৪ কোটি টাকার এবং অনিয়ম হয়েছে ৩৯৯ কোটি টাকার।
এর মধ্যে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ কেটে রাখা ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার উৎসে কর সরকারি ফান্ডে জমা দেয়া হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ লঙ্ঘন করে প্রশ্নবিদ্ধ নগদ প্রদান -আত্মসাৎ, ওভার ইনভয়েসিং, স্ফীত মূল্য, গোপন সহায়তা ইত্যাদির কারণে কোম্পানির ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ছাড়াও সাবেক মুখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহকে পারফরমেন্স বোনাস প্রদান এবং কোম্পানি কর্তৃক অতিরিক্ত আয়কর বহন করা হয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ পরিচালনাগত অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- এফআইএলআইসিএল-ইসিএসএল’কে ১২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং পিআইএলআইএল-ইসিএসএল’কে ৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান।
দাবি খরচের সাথে ২৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার কালেকশন ইন হ্যান্ড সমন্বয় এবং দাবি নিষ্পত্তি বেশি দেখানো হয়েছে ৭২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
জমিতে করা আত্মসাৎ ঢাকতে কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোন গ্রহণ। এফআইএসএল’র জন্য ডিএসই’তে ১৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রদান। সানড্রি ডেবটরসে অনিয়ম ১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
অসঙ্গত প্রক্রিয়ায় আজাদ অটোমোবাইলস থেকে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকার মটরগাড়ি ক্রয়সহ পরিবহন সংক্রান্ত অনিয়ম হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্টদের আইনের বাইরে ৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাতাদি প্রদান। আইন লঙ্ঘন করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে ৭ কোটি ৫ লাখ টাকার হোমলোন প্রদান। পলিসি ও রেভিন্যু স্ট্যাম্প বিষয়ে ৭৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত দেখানো।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও সংস্থাটির মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ৪৮ ধারায় যে তদন্ত হয়েছে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের লাইফ অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলতে পারবেন; বিষয়টি সম্পর্কে আমার তেমন কিছু জানা নেই।
উল্লেখ্য, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অর্থ আত্মসাৎ ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় এরইমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন কোম্পানিটির সাবেক ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম এবং কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ও তার ছেলে রুবায়াত খালেক।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুব আহমেদ শুনানি শেষে নজরুল ইসলামকে দু’দিনের রিমান্ড এবং এম এ খালেক ও তার ছেলে রুবায়াত খালেককে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন।