সার্টিফিকেট হারাবে তা আগেই জানতেন সাবেক চেয়ারম্যান সালেহ হোসেন

ব্যাংকে বন্ধক রাখা শেয়ার হারিয়ে গেছে দাবি করে হোমল্যান্ড লাইফের পর্ষদে ৫ পরিচালক

আবদুর রহমান আবির: ব্যাংকে বন্ধক শেয়ারের মূল সার্টিফিকেট। সেগুলো ‘হারিয়েছে’ দাবি করে ইস্যু করা হয় ডুপ্লিকেট। পাঁচ পরিচালকের ৫০ হাজার শেয়ারের সার্টিফিকেট ‘হারিয়ে’ যাবে এ তথ্য আগেই জানতেন হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান সালেহ হোসেন। এসব ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট দেখিয়েই হোমল্যান্ডের পরিচালক পদ কব্জায় রেখেছেন সিলেটের ৫ লন্ডন প্রবাসী। পরিচালক পদে থেকে তারা বোর্ড সভার ফি-সহ হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। শেয়ারগুলো অবৈধভাবে কেনারও অভিযোগ রয়েছে।

বন্ধক গ্রহীতা আইসিবি ইসলামী ব্যাংক দাবি করছে, যেসব শেয়ারের ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে তা ২০০৫ সাল থেকেই ব্যাংকটির কাছে বন্ধক আছে। তাই হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালনা পর্ষদে তাদের অন্তভুক্ত করতে হবে। সেই সাথে বিগত বছরগুলোর লভ্যাংশও তাদেরকে পরিশোধ করতে হবে। গত ৫ অক্টোবর হোমল্যান্ড লাইফকে চিঠি দিয়ে এসব দাবি করে ব্যাংকটি।

শেয়ারের মালিকানার বিষয়ে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ বন্ধক রাখা ৮০ হাজার শেয়ারের মূল সার্টিফিকেট, শেয়ার হস্তান্তরের ১১৭ ফরমসহ সকল প্রয়োজনীয় নথিপত্রই আছে ব্যাংকের কাছে। ফলে বন্ধক রাখা শেয়ারের মালিকানা দাবি করে অন্য কারো পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই।

যদিও ৫ পরিচালক দাবি করেছেন, ১৯৯৬ সালে পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাদের শেয়ার গ্রহীতা ও পরিচালক হিসেবে অনুমোদন করা হয়। তবে পরিচালনা পর্ষদের এসব সভার কার্যবিবরণী পরে তৈরি করা বলে অভিযোগ রয়েছে। কার্যবিবরণীগুলোতে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের যে স্বাক্ষর রয়েছে তার সাথে প্রকৃত স্বাক্ষরের মিল নেই।

এ অবস্থায় হোমল্যান্ড লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ৫ জন পরিচালকের শেয়ারের মালিকানা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এই ৫ জন পরিচালক হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ও বর্তমান পর্ষদের পরিচালক জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদ।

হোমল্যান্ড লাইফের ৫ পরিচালকের শেয়ারের মূল সার্টিফিকেট হারানো, ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যু সংক্রান্ত কাগজপত্রের নানা অসংগতি ও শেয়ার মালিকানার নানা অসংগতি নিয়েই সাজানো হয়েছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদন।

সার্টিফিকেট হারাবে তা আগেই জানতেন সাবেক চেয়ারম্যান সালেহ হোসেন:

শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে থাকলে জিডির কপি ও পত্রিকায় হারানোর বিজ্ঞপ্তিসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দাখিলের জন্য ৫ জন পরিচালককে চিঠি দেন হোমল্যান্ড লাইফের তৎকালিন চেয়ারম্যান সালেহ হোসেন। এর ৩ মাস পর থেকেই ওই ৫ পরিচালকদের শেয়ার সার্টিফিকেট হারাতে শুরু করে।

সালেহ হোসেন ৫ জন পরিচালককে চিঠি দেন ২০১৪ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি। আর পরিচালকরা তাদের শেয়ার সার্টিফিকেট হারাতে শুরু করেন ১০ মে থেকে।

অর্থাৎ শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর ৩ মাস আগে থেকেই সালেহ হোসেন জানতেন ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যাবে।

আবার যেসব মূল সার্টিফিকেটের বিপরীতে ৫ পরিচালকের নামে ২০১৬ সালে ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়, সেসব শেয়ারের মূল সার্টিফিকেটগুলো ২০০৫ সালেই আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজি এনাম উদ্দিন আহমেদ।

যে ভাবে হারিয়ে যায় ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেট

শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে থাকলে এ সংক্রান্ত থানায় দায়ের করা জিডির কপি, পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তির কপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করতে ৫ জন পরিচালককে একটি চিঠি দেন হোমল্যান্ড লাইফের তৎকালিন চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক সালেহ হোসেন।

সালেহ হোসেন এই চিঠি দেন ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর ৩ মাস পরে ১০ মে প্রথমে শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন দুই আপন ভাই জামাল মিয়া ও কামাল মিয়া। তারা দু’জনই বাড়ি থেকে বাসায় আসার পথে তাদের ব্রিফকেসে থাকা শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো হারিয়ে ফেলেন।

ওই ঘটনার ৭ মাস পর ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন জামাল উদ্দিন। তিনি বর্তমানে হোমল্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন। বাসা থেকে সিলেটের বন্দর বাজারে যাওয়ার পথে তিনি শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন।

যেদিন জামাল উদ্দিন শেয়ার সার্টিফিকেট হারালেন তার পরের দিনই ৯ সেপ্টেম্বর শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদ দুই ভাই। এই ২ ভাইয়ের শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় কোম্পানির মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয় থেকে বেলা ১১ টায়।

অদ্ভুতভাবে ২ ভাই একই দিনে একই সময়ে শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন। তবে হারানোর সময় তাদের শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো প্রধান কার্যালয়ের কোথায় ছিল তা তারা জিডিতে উল্লেখ করেননি।

শেয়ার সার্টিফিকেটের অস্তিত্বহীন নাম্বার দিয়ে থানায় জিডি

শেয়ার সার্টিফিকেট হারানো বিষয়ে ৫ পরিচালকই থানায় জিডি করেন। জিডিতে যেসব শেয়ার সার্টিফিকেট নাম্বার উল্লেখ করা হয় তা নতুন করে ইস্যু করা ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট নাম্বার। যা ইস্যু করা হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে।

অথচ এসব সার্টিফিকেট হারানোর জন্য পরিচালকরা থানায় জিডি করে ২০১৪ সালে। আর শেয়ারের মূল সার্টিফিকেটগুলো আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয় ২০০৫ সালে।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেটের নাম্বারগুলো কি করে তারা আগেই জানলেন। আসলেই তাদের শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়েছে কি না। নাকি বন্ধকি শেয়ার সার্টিফিকেট নাম্বারের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে পরিচালক হতে ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যুর জন্য শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর নাটক সাজানো হয়েছে।

হোমল্যান্ড লাইফের ৫ জন পরিচালকের মধ্যে প্রথমে শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন দুই ভাই জামাল মিয়া ও কামাল মিয়া।

কামাল মিয়ার দাবি অনুসারে তিনি উদ্যোক্তা পরিচালক গউস আলী খানের শেয়ার নিয়ে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালক হয়েছেন। গউস আলী খানের ১০ হাজার শেয়ারের মূল সার্টিফিকেট নাম্বার ২৩, ৫৪, ১০৪ ও ১০৫। যা আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রাখা।

অথচ কামাল মিয়া জিডিতে উল্লেখ করেন ১৩৭, ১৩৮ ও ১৩৯ নাম্বার শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়েছে। যা মূলত ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট নাম্বার। যা ইস্যু করা হয় ২০১৬ সালে।

অপর ভাই জামাল মিয়ার দাবি অনুসারে তিনি উদোক্তা পরিচালক সাবের আলী খানের শেয়ার নিয়ে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালক হয়েছেন। সাবের আলী খানের মূল সার্টিফিকেট নাম্বার ২৮, ৬০, ১১৬ ও ১১৭। যা ব্যাংকে বন্ধক রাখা।

অথচ জামাল মিয়ার দাবি অনুসারে তার হারানো সার্টিফিকেটগুলোর নাম্বার ১৪৬, ১৪৭ ও ১৪৮। এই নাম্বারগুলো জামাল মিয়ার নামে ইস্যু করা ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট নাম্বার। যা ইস্যু করা হয় ২০১৬ সালে।

জামাল মিয়া ও কামাল মিয়ার পরে শেয়ার সার্টিফিকেট হারান হোমল্যান্ড লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। তিনি পরিচাললক হন উদ্যোক্তা পরিচালক মনজুর আহমেদের শেয়ার নিয়ে।

মনজুর আহমেদের ১০ হাজার শেয়ারের মূল সার্টিফিকেট নাম্বার ছিল ২৩, ৫৫, ১০৬ ও ১০৭। যা আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রেখেছেন কাজি এনাম উদ্দিন আহমেদ।

অথচ জামাল উদ্দিন দাবি করেন ১৪০, ১৪১ ও ১৪২ নাম্বার শেয়ার সার্টিফিকেটের ১০ হাজার শেয়ার হারিয়ে গেছে। মূলত জামাল উদ্দিনের এই সার্টিফিকেট নাম্বারগুলো ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট নাম্বার। যা ইস্যু করা হয় ২০১৬ সালে ২৪ জুলাই।

জামাল উদ্দিনের পর পর একই দিনে একই সময়ে শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদ ২ ভাই। এর মধ্যে আব্দুল হাই পরিচালক হয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালক দিলাল আহমেদের শেয়ার নিয়ে।

দিলাল আহমেদের নামে ইস্যু করা ১০ হাজার শেয়ারের সার্টিফিকেট নাম্বার ছিল ২৯, ৬১, ১১৮ ও ১১৯। যা আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয় ২০০৫ সালে।

অথচ আব্দুল হাই জিডিতে তার হারানো শেয়ার সার্টিফিকেট নাম্বার উল্লেখ করেন ১৪৯, ১৫০ ও ১৫১। যা ২০১৬ সালে আব্দুল হাইয়ের নামে ইস্যু করা ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেট নাম্বার।

অপর ভাই আব্দুল আহাদ হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালক দাবি করেন উদ্যোক্তা পরিচালক আজিজুর রহমানের শেয়ার নিয়ে। আজিজুর রহমানের মূল শেয়ার সার্টিফিকেটগুলোর নাম্বার ২৬, ৫৮, ১১২ ও ১১৩। এই সার্টিফিকেটগুলোও ২০০৫ সালে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বন্ধক রাখা।

অথচ আব্দুল আহাদের দাবি অনুসারে তার ১০ হাজার শেয়ারের ১৪৩, ১৪৪ ও ১৪৫ নাম্বার শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে গেছে। যা আব্দুল আহাদের নামে ইস্যু করা ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট নাম্বার। যা ইস্যু করা হয় ২০১৬ সালে।

শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর ক্ষেত্রে থানায় করা জিডি ও অন্যান্য নথি পত্রে ৫ পরিচালক তাদের নামে ইস্যু করা ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট নাম্বার উল্লেখ করায় ২ বছর আগেই কি করে এই ৫ পরিচালক ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেটগুলোর নতুন নাম্বার জানলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও নিয়ম অনুসারে ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেটে নতুন করে দেয়া সার্টিফিকেট নাম্বারের সাথে হারিয়ে যাওয়া শেয়ার সার্টিফিকেটের নাম্বার ও শেয়ারের পরিমাণ উল্লেখ করার বাধ্যবাধকাত রয়েছে। অথচ ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেটগুলোতে মূল সার্টিফিকেট নাম্বার দেয়া হয় নাই।

ফলে অবৈধভাবে শেয়ারের মালিকানা নিতে শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর নাটক সাজিয়ে জালজালিয়াতি করে ডুপ্লিকেট শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো ইস্যু করা হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সার্টিফিকেট হারানোর প্রায় ২ বছর পর থানায় জিডি

মূল্যবান কোনো কিছু হারিয়ে গেলে আইনগত সহায়তার জন্য ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। কিন্তু সার্টিফিকেট হারানো হোমল্যান্ড লাইফের ২ পরিচালক ও সহদর ভাই মতিঝিল থানায় জিডি করেন ১ বছর ১১ মাস পর। একই দিনে ২ ভাই বাড়ি থেকে বাসায় যাওয়ার পথে শেয়ার সার্টিফিকেট হারান। তেমনি একই দিনে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় জিডি করেন।

অপর ২ পরিচালক আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদ দুই ভাইও একই দিনে থানায় জিডি করেন। এই ২ ভাই সিলেটের বালাগঞ্জ থানায় জিডি করেন সার্টিফিকেট হারানোর ১৫ দিন পর ২৫ মে ২০১৪ সালে।

বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সিলেটের জালালাবাদ থানায় জিডি করে শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর ১০ দিন পর, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাথে।

ফলে ২০১৪ সালে শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর ১ বছর ১১ মাস পরে কেন জিডি করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সার্টিফিকেট হারানোর দেড় বছর পরে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি

শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর ২ বছর পর একই দিনে ৫ পরিচালক শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সোনালী বার্তা নামক একটি পত্রিকায়। এই হারানো বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ১২ মে।

অথচ জামাল মিয়া ও কামাল মিয়ার শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় ১০ মে ২০১৪ সালে। ৮ সেপ্টেম্বর হারিয়ে যায় জামাল উদ্দিনের সার্টিফিকেট আর এর পরের দিন অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বর হারিয়ে যায় আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদের সার্টিফিকেট।

শেয়ার সার্টিফিকেট হারানোর ২ বছর পর একই দিনে ৫ পরিচালকের শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সুপরিকল্পিত কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

শেয়ার হস্তান্তর ফরম ১১৭:  অনুমোদন নেই, তারিখও নেই

আইন অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করা ১১৭ ফরমে। এই ফরমে শেয়ার গ্রহীতা ও শেয়ার হস্তান্তরকারি উভয়েই স্বাক্ষর করেন। এছাড়া পর্ষদ সভার অনুমোদন হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে চেয়ারম্যান বা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ১১৭ ফরমে স্বাক্ষর করে অনুমোদন করেন।

১১৭ ফরমে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয় শেয়ার হস্তান্তরের দিন তারিখ। সেই সাথে আইন অনুসারে সরকারের রাজস্ব প্রদানের জন্য স্ট্যাম্পও লাগাতে হয়। অনুমোদন থাকতে হয় রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টকের।

অথচ হোমল্যান্ড লাইফের ৫ পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তর ফরমে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যানের কোনো স্বাক্ষর নেই। কত তারিখে শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে তাও উল্লেখ নেই। আইন অনুসারে ১১৭ ফরমে স্ট্যাম্পও লাগানো হয় নাই। অনুমোদন নেই রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টকের।

অপর দিকে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক দাবি করেছে তাদের কাছে বন্ধকী হিসেবে সংরক্ষিত ১১৭ ফরমগুলোতে আইনগত সকল শর্তই পূরণ করা হয়েছে।

ফলে শেয়ার হস্তান্তরের ১১৭ ফরমটিতে জালজালিয়াতি করা হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার হস্তান্তর: পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে গড়মিল

হোমল্যান্ড লাইফের ৫ পরিচালকের শেয়ার ক্রয় অনুমোদন দেখানো হয় কোম্পানির লাইসেন্স পাওয়ার ১ মাস ১৯ দিন পর। ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর কোম্পানির পর্ষদের ৩য় সভায়। অথচ আইন অনুসারে কোম্পানির লাইসেন্স পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে শেয়ার ক্রয় বিক্রয় অবৈধ। কোম্পানিটি লাইসেন্স পায় ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে।

ওই সভাতে ১৮ জন পরিচালকের শেয়ার ক্রয় অনুমোদন করা হয়। আবার শেয়ার গ্রহীতাদেরকে হস্তান্তরকারিদের বিকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয় পর্ষদের ৩য় সভায়।

আবার এর ১ মাস ৫ দিন পর ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৪র্থ বোর্ড সভায় শেয়ার হস্তান্তরকারিদের নামেই আবারো নতুন করে ৭৭৫০টি করে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়।

অন্যদিকে ১৮ জন পরিচালকের মধ্যে ১৭ জন নতুন শেয়ার গ্রহীতাকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয় ৬ষ্ঠ বোর্ড সভায়। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ২৭ জুলাই ১৯৯৭ সালে।

তবে পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে বীমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো অনুমোদন নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আবার কার্যবিবরণীগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসব সভার কার্যবিবরণীতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের সাথে সংঘ স্মারকের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের মিল নেই। এসব কার্যবিবরণী পরবর্তীতে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।